খাদ্যে বিষাক্ত রাসায়নিক পরীক্ষার উদ্যোগ নেই by মেখ্যাইউ মারমা

‘দুই নম্বর গেইট এলাকার একটি বাজার থেকে গরুর মাংস কিনেছিলাম। রান্না করতে গিয়ে দেখা গেছে মাংস থেকে ওষুধের তীব্র কটু গন্ধ বের হচ্ছে। সেদ্ধ করে পানি ফেলে রান্নার পরও সে গন্ধ যায়নি। পরে ওই বাজারের কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি।’


খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এভাবেই নিজের অভিজ্ঞতার বিবরণ দেন একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম।
নগরের বাজারগুলোতে কোনো ফরমালিন পরীক্ষণ যন্ত্র না থাকায় ক্রেতারা পড়েছেন বিপাকে। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় বাজারে ফরমালিন মেশানো মাছ, মাংস, সবজি ও কারবাইড মেশানো ফলমূল বিক্রি হচ্ছে বলে ক্রেতাদের অভিযোগ। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা। জানা গেছে, খাদ্যদ্রব্যে ক্ষতিকর রাসায়নিকের উপস্থিতি শনাক্তকরণে গত বছর নগরের কয়েকটি কাঁচাবাজারে ফরমালিন পরীক্ষার যন্ত্র বসানো হয়েছিল। তবে শনাক্তকরণের এই কার্যক্রম এখন একেবারেই বন্ধ। সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা জানান, লোকবল ও যন্ত্রপাতির ঘাটতির কারণে খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিন শনাক্ত করাসহ ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের আগস্ট মাসে নগরের কাজীর দেউড়ি কাঁচাবাজারে খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল রুখতে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ব্যবস্থাপনায় এবং বাজার কমিটির তত্ত্বাবধানে বাজারে ফরমালিন পরীক্ষার যন্ত্র বসানো হয়েছিল। কিন্তু তিন- চার মাসের মাথায় এ ব্যবস্থা উঠে যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নগরের কোনো বাজারে নেই ফরমালিন পরীক্ষণ যন্ত্র। নগরের কোনো বাজারে রাসায়নিক দ্রব্য পরীক্ষার সুযোগ না থাকায় ক্রেতারা সন্দেহ নিয়ে বাজার করেন।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সিটি ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মো. আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘চসিকের ব্যবস্থাপনায় এ বছরের শুরুতে সর্বশেষ অভিযান চালানো হয়েছে হালিশহর এবং চকবাজার এলাকার কয়েকটি হোটেলে। কিন্তু ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনার জন্য এখন প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং রাসায়নিক দ্রব্য আমাদের হাতে নেই। তা ছাড়া একজন টেকনিশিয়ানেরও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।’
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) মাঠ কর্মকর্তা আরাফাত হোসেন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, বিএসটিআই এবং জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে মহানগরের বিভিন্ন বাজারে ভেজালবিরোধী অভিযান চালানো হয়। তিনি আরও বলেন, খালি চোখে ফলমূলে বা খাদ্যপণ্যে রাসায়নিকের উপস্থিতি শনাক্ত করা সম্ভব নয়। সন্দেহ থাকলে এসব খাদ্যপণ্য না কেনাই উত্তম।’
এদিকে কেবল কাঁচাবাজারের খাদ্যদ্রব্যই নয়, ফলমূল, দুধ, দই ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্যেও মেশানো হচ্ছে ক্ষতিকর রাসায়নিক। সম্প্রতি নগরের একটি অভিজাত সুপারশপে ভেজালবিরোধী অভিযানের
সময় ফলমূল ও দইয়ে ফরমালিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এই প্রসঙ্গে হাজারী লেন এলাকার বাসিন্দা রূপা বলেন, ‘আন্দরকিল্লা এলাকার ফলের বাজার থেকে দুই কেজি মালটা কিনেছিলাম কিছুদিন আগে। ফলগুলো বাইরে থেকে দেখতে একদম তাজা। কিন্তু কাটার পর দেখি ভেতরটা কালচে রং ধারণ করেছে। কোনোটাই খাওয়ার যোগ্য ছিল না।’ তবে খুচরা ফল বিক্রেতারা জানান, ফলে কারা রাসায়নিক মেশাচ্ছে তা তাঁরা জানেন না। নগরের দুই নম্বর গেট এলাকার ফলবিক্রেতা আবদুল মান্নান বলেন, ‘কারা ফলে ওষুধ দেয় আমরা কী করে বলব? ফলের আড়ত থেকে যেভাবে নিয়ে আসি সেভাবেই বিক্রি করি আমরা।’ ক্ষতিকর রাসায়নিক মিশ্রিত খাদ্যদ্রব্য খেলে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে পারে বলে চিকিৎসকেরা জানান।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আবু তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, ‘খাদ্যের সঙ্গে এসব রাসায়নিক দ্রব্য দেহের অভ্যন্তরে গিয়ে খুব দ্রুত কিংবা দীর্ঘদিন পরও জটিল রোগ সৃষ্টি করতে পারে। পাকস্থলী, কিডনি, যকৃত ও ফুসফুসে নানা রোগ দেখা দিতে পারে। এমনকি এ থেকে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ারও ঝুঁকি থাকে।’

No comments

Powered by Blogger.