অবশ্যই যা বলতে হবে by গুন্টার গ্রাস

নোবেল বিজয়ী ঔপন্যাসিক ও সাহিত্যিক গুন্টার গ্রাসের 'হোয়াট মাস্ট বি সেইড' কবিতাটি এখন বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে। ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি হামলার প্রস্তুতির বিপক্ষে সবচেয়ে কার্যকর প্রতিবাদ হিসেবে এ কবিতার কথাই উচ্চারিত হচ্ছে। এটা বিশ্বজুড়ে এতটাই প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পেরেছে যে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন


নেতানিয়াহুও আর চুপ থাকতে পারেননি। বলেছেন, একই পাল্লায় ইসরায়েল ও ইরানকে মেপে গ্রাস এক লজ্জাজনক ঘটনার জন্ম দিয়েছেন। তার মতে, এই কবিতা ইসরায়েলের কথা যতটা বলেছে, তার চেয়ে বেশি বলেছে গ্রাসের নিজের কথা। নেতানিয়াহুর মতে, ইসরায়েল নয়, ইরানই বিশ্বশান্তির জন্য হুমকি। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগত আক্রমণ করতেও ছাড়েননি। বলেছেন, এই গুন্টার গ্রাসই ছয় দশক ধরে গোপন রেখেছিলেন যে তিনি নাৎসি সংগঠন ওয়েপেন এসএস-এর সদস্য ছিলেন। তার পক্ষে একমাত্র ইহুদি রাষ্ট্রটিকে বিশ্বশান্তির জন্য হুমকি মনে করা বিস্ময়কর
ঘটনা নয়। গুন্টার গ্রাসের জন্ম ১৯২৭ সালে। তার এই কবিতাটি
সুডয়েটসে শাইটুংয়ে প্রথম প্রকাশিত হয়


কেন আমি চুপ করে আছি?
সোজাসাপ্টা নয়তো ভঙ্গিভাট্টা করেই
তব্দা হয়ে আছি দীর্ঘ সময়,
যেন টিকে থাকার প্রান্তসীমায়
বড়জোর পাদটীকা হয়ে বেঁচে আছি।

দুর্বলকে ভয় দেখিয়ে কাত করো-
সংগঠিত আর আহ্লাদি এমন নির্দেশে
শানানো হচ্ছে প্রথম হামলার অধিকার,
এতে উন্মূল হয়ে যাবে ইরানিরা
কারণ ওদের কোনো বর্তুল ভবনে নাকি
সন্দেহজনক বোমা রাখা আছে।

কেন আমি নিজেকে বলছি_
ওই অন্য দেশটিকে নাম ধরে ডাকো
যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ_ তারা নিভৃতে, নীরবে
তৈরি করেছে পারমাণবিক বোমা।
কিন্তু সে বোমাই কেন অনিয়ন্ত্রিত বলে গণ্য হবে,
শুধু পরীক্ষিত হয়নি বলে?

আর সবার নীরবতার নিচে
চাপা পড়ে আছে আমার নীরবতাও
অপমানিত-লাঞ্ছিত
মুখ খুললেই মিথ্যা দমন ও দোষারোপ
বিধান দেয়াই আছে_
অ্যান্টি-সেমেটিক দণ্ড ঝুলবে মাথার ওপর।

আমার নিজের দেশ
ক্ষমাহীন নিজস্ব অপরাধে
যখন তখন গালি খায় আর
জরিমানা গোনে,
কেবলই বিশুদ্ধ বাণিজ্যিক স্বার্থে
ক্ষিপ্র ঠোঁটে ঘোষিত হয়েছে পুনর্বাসিত বলে
আমার দেশ ডুবোজাহাজ দেবে ইসরায়েলকে
যার মাথায় থাকবে মারাত্মক ক্ষেপণাস্ত্র।
মারা হবে সেখানে, যেখানে
একটা একাকী আণবিক বোমার অস্তিত্বও অপ্রমাণিত
এখন অপ্রমাণই হতে চলেছে অকাট্য যুক্তি
ফলে আমি বলি, কথাটা বলতেই হবে এখন
কিন্তু কেন আমি একটু আগেও চুপ করে ছিলাম?
আমি ভেবেছি আমার অতীত, শরীরে অমোচনীয় কলঙ্করেখা
ভেবেছি_ ইসরায়েলের মতো দেশ_
এখন আর সবসময় যার সঙ্গে আমার সংযোগ
মেনে নেবে সত্যের সর্বজনীন ঘোষণা

কেন এখনই, এই শেষকালে ঠেকে
শেষ কালিটুকুতে বলছি আমি_
আণবিক ইসরায়েল ইতিমধ্যে বিপন্ন করে তুলেছে
ভঙ্গুর বিশ্বশান্তির শেষ আশাটুকু?
কেননা, এটা এখন বলতেই হবে
আগামীকাল হয়তো বড্ড দেরি হয়ে যাবে
আর এ-ও এক সঙ্গত কারণ যে আমরা,
জার্মানরা ইতিমধ্যে অনেক ভারাক্রান্ত হয়ে আছি
ফলে অপরাধ করার জন্য যে কোনো অজুহাতে অস্ত্র দেওয়া
দুষ্কর্মে সজ্ঞান সহযোগিতা বলেই গণ্য হবে

আর পারছি না
পশ্চিমের ভণ্ডামি দেখে দেখে পরিশ্রান্ত আমি
তবুও আশা থাকছে, হয়তো অনেকে নীরবতার জঞ্জাল থেকে
ছিন্ন হয়ে ভাববে আসন্ন বিপদের কথা,
বিরুদ্ধে দাঁড়াবে সহিংসতার।
ইসরায়েলের আণবিক শক্তির
স্থায়ী ও অপ্রতিরোধ্য বাড় নিয়ে
আর ইরানের আণবিক শক্তি নিয়েও
রফা হবে, আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায়
দুই দেশের সম্মতিক্রমে

কেবল তখনই ইসরায়েলি আর ফিলিস্তিনিরা
ওই অঞ্চলে বসবাসরত সকল মানুষ
প্রতারণায় অধিকৃত হয়ে
যারা ঘনিষ্ঠভাবে বাস করে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ শত্রুর সঙ্গে
তখনই কেবল তারা আমাদের সহায় হতে পারে।
স ভাষান্তর : মাহবুব মোর্শেদ

No comments

Powered by Blogger.