এক লাফে একবার শ্বাস

ঘোড়া, কুকুর, ক্যাঙারুসহ যেসব প্রাণী লাফিয়ে দৌড়ায় বা গ্যালপ দিয়ে দৌড়ায়, তারা প্রতি লাফে বা গ্যালপে একবার মাত্র শ্বাস নেয়। ব্যাপারটি নেহাত প্রকৃতির খেয়াল নয়! চলুন দেখা যাক, এর কারণ কী। সব প্রাণীই চেষ্টা করে যেকোনো কাজ করার সময় যতটা সম্ভব কম শক্তি ব্যয় করতে। দৌড়ানোর সময়ও প্রাণীরা তাই চেষ্টা করে।


দৌড়ানোর সময় একই সঙ্গে দুই জায়গায় সংকোচন-প্রসারণ ঘটতে থাকে। প্রথমটি হলো শরীরের মাংসপেশির সংকোচন-প্রসারণ। অপরটি হলো ফুসফুসের সংকোচন-প্রসারণ। এখন আমরা দুটি সংকোচন-প্রসারণকে ছবির মাধ্যমে দেখানোর চেষ্টা করি। যখন কোনো প্রাণী দৌড়ায়, তখন ভরকেন্দ্র সামনে-পেছনে যেতে থাকে। ছবিতে ভরকেন্দ্র দেখানো হলো আয়তাকার ঘনবস্তুটি দিয়ে। মাংসপেশির সংকোচন-প্রসারণ দেখানো হলো স্প্রিং দিয়ে আর ফুসফুসের সংকোচন-প্রসারণ দেখানো হলো পিস্টন সিলিন্ডার দিয়ে। যেহেতু এ দুই ধরনের সংকোচন-প্রসারণের ফলে ভরকেন্দ্র বা ঘনবস্তুটি আগ-পিছু হচ্ছে তার অর্থ হলো স্প্রিং ও সিলিন্ডার দুটিই ঘনবস্তুর সঙ্গে যুক্ত। এখন দৌড়ানোর সময় শরীরের ভরকেন্দ্রের আগ-পিছু হবেই বা ঘনবস্তুটি আগ-পিছু হবে। কারণ, এই আগ-পিছু করার মাধ্যমেই দৌড়ানোর সময় প্রাণী তার শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখে। সেটিকে আগ-পিছু করতে তখনই সবচেয়ে কম শক্তি ব্যয় হবে, যখন স্প্রিং ও পিস্টন একই সঙ্গে একই দিকে একই বেগে ধাবিত হবে বা আগ-পিছু বা সংকুচিত বা প্রসারিত হতে থাকবে। নতুবা একটি আরেকটির বেগকে বাধা দেবে, ফলে বেশি শক্তি লাগবে। এখন দৌড়ানোর সময় স্প্রিংয়ের গতি তো নির্দিষ্ট, মানে একটি লাফ, একটি লাফ, একটি লাফ...তাই লাফের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্যাঙারুকে ফুসফুস চালনা করতে হয়, মানে প্রতি লাফে একবার শ্বাস-প্রশ্বাস।
এখন প্রশ্ন হলো, মানুষ কেন তাহলে দৌড়ানোর সময় প্রতি লাফে একবার করে শ্বাস নেয় না? এর কারণ হলো, মানুষের শরীর ভূমির সঙ্গে সমান্তরালে নয়, বরং ভূমির ওপর খাড়াভাবে অবস্থান করছে। ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে ভরকেন্দ্রের অবস্থানের পরিবর্তন নেই। কারণ ভরকেন্দ্রের পরিবর্তন হয় ভূমির সমান্তরালে আর সংকোচন-প্রসারণ ঘটবে ভূমির ওপর খাড়াখাড়ি। তবে লাফ ও শ্বাস-প্রশ্বাসের পরিমাণ একই বা কাছাকাছি হলে দৌড়াতে কম শক্তি ব্যয় হয়। কারণ, ভরকেন্দ্রের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলেও দুটির সংকোচন-প্রসারণ তো একই দিকে। এ কারণেই দৌড়বিদেরা বেশি দম নিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের পরিমাণ কমিয়ে দৌড়ানোর চেষ্টা করেন যাতে শক্তি কম ব্যয় হয়।
সুব্রত দেবনাথ

No comments

Powered by Blogger.