দেশে ফিরিয়ে আনার গড়িমসির তদন্ত হওয়া প্রয়োজন-পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি বন্দীরা

পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের বিভিন্ন কারাগারে বহুসংখ্যক বাংলাদেশি বন্দী আছেন। মূলত অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে তাঁদের আটক করা হয় এবং ভারতীয় আদালত তাঁদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিও দেন। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায়, বন্দীদের একটি অংশের শাস্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও তাঁরা আটক থাকছেন।


এ রকম আটক বন্দীদের একটি দল ছিল পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর কারাগারে। কারাদণ্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও দেশে ফিরতে না পারায় সম্প্রতি সেখানকার ১৩ জন বাংলাদেশি বন্দী অনশন শুরু করেন। একপর্যায়ে কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপহাইকমিশনের কর্মকর্তাদের আশ্বাসে তাঁরা অনশন প্রত্যাহার করেন। এখন এঁদের দেশে ফেরত আনার ব্যবস্থা চলছে। কিন্তু এ রকম আরও অনেকেই আটক আছেন, যাঁদের শাস্তির মেয়াদ শেষ হলেও বাংলাদেশ সরকার তাঁদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করছে না।
প্রথম কথা হলো, মেয়াদোত্তীর্ণ বন্দীদের কেন অনশন করতে হলো? এর আগেই কেন কলকাতার বাংলাদেশ উপহাইকমিশন তাঁদের খোঁজখবর করল না? কেন অনশনে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে তারা বাংলাদেশের নাগরিকদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিল না? দৃশ্যত, ভারতীয় গণমাধ্যমে খবর হওয়ায় এবং ভারতীয় মানবাধিকার সংস্থাগুলো সোচ্চার হওয়ার পরই বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। তবে, এ বিষয়ে ভারত সরকারের আচরণও প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়।
এর আগে, ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতেও পশ্চিমবঙ্গের ভাগলপুর জেলে ১৫৬ জন বাংলাদেশি বন্দী সাজা শেষ হওয়ার পরও দেশে ফিরতে না পেরে অনশনে বসেছিলেন। ওই ১৫৬ জনের ১৬ জনই ছিলেন নারী। কেবল জেলেই নয়, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অপরাধী সংশোধনকেন্দ্রেও বাংলাদেশিদের আটক থাকার সংবাদ পাওয়া যায়। এদের মধ্যে রয়েছে শিশুও। বিষয়টি বাংলাদেশের উচ্চ আদালতের গোচরে আনায় গত বছরের মাঝামাঝি উচ্চ আদালত কলকাতায় বাংলাদেশের উপহাইকমিশনকে সাজার মেয়াদ শেষ হওয়া এসব বন্দীর তালিকা এবং তাঁদের নাগরিকত্ব শনাক্ত করার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশের পরও যে পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, কৃষ্ণনগর জেলের সাম্প্রতিক অনশনই তা প্রমাণ করে।
মানবাধিকারের দিক থেকে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা যদি বাংলাদেশি হন, তবে তাঁদের দায়িত্ব অবশ্যই বাংলাদেশ সরকারের। সরকারের উচিত এ বিষয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া। একই সঙ্গে সেখানে নিযুক্ত দূতাবাসের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব-সচেতন হওয়াও জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.