সুসাংবাদিকতা ও পেশাদারি সাফল্যের ২০ বছর-অভিবাদন ডেইলি স্টার

প্রকাশনার তৃতীয় দশকে পা রাখল দেশের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার। গত ২০ বছরে সাংবাদিকতার উৎকর্ষ সাধনে, পেশাদারির অনুশীলনে এবং দেশ ও জনগণের মঙ্গলার্থে সংবাদপত্রটি যে অবদান রেখে এসেছে, তারই স্বীকৃতি হিসেবে আজ সেটি বাংলাদেশের এক নম্বর ইংরেজি দৈনিক—কি প্রচারসংখ্যায়, কি গ্রহণযোগ্যতায়, কি মর্যাদায়।


বিপুল এক গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সামরিক স্বৈরশাসন থেকে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশ যখন ১৯৯১ সালে গণতান্ত্রিক পথে নতুন করে যাত্রা শুরু করে, ডেইলি স্টার-এর জন্ম সেই বছরের ২৯ জানুয়ারি। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, জনপ্রতিনিধিত্বমূলক শাসনব্যবস্থা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, আইনের শাসন—এই মৌলিক আদর্শগুলোর ভিত্তির ওপর নতুন এক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্নে সহযাত্রীরূপে পথচলা শুরু হয় ডেইলি স্টার-এর। এই পথচলায় সংবাদপত্রটি সব সময় সুসাংবাদিকতার নীতি অনুসরণের চেষ্টা করেছে। ভীতি বা আনুকূল্য নয়, দ্য ডেইলি স্টার বস্তুনিষ্ঠতাকেই সংবাদ পরিবেশনের মৌল নীতি হিসেবে মেনেছে। বস্তুনিষ্ঠতার গুণেই পত্রিকাটি দিনে দিনে অর্জন করেছে পাঠকের আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্যতা; এবং এই নীতির অবিচল অনুসরণের ফলে ক্রমশ বেড়েছে এর পাঠকসংখ্যা। পত্রিকাটিকে নিয়ে গেছে এ দেশের ইংরেজি সংবাদপত্রগুলোর শীর্ষে। এর মধ্য দিয়ে ডেইলি স্টার এই সত্য প্রতিপাদন করেছে যে শিল্প বা ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে সংবাদমাধ্যমের সাফল্য একান্তভাবে নির্ভরশীল সুসাংবাদিকতার ওপর। সততাপূর্ণ পেশাদারি সাংবাদিকতাই যে সংবাদমাধ্যমের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে মজবুত করে, নিশ্চিত করে এর ব্যবসায়িক সাফল্য—দ্য ডেইলি স্টার তা প্রমাণ করেছে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিসরেও পত্রিকাটি যথেষ্ট স্বীকৃতি ও সুনাম অর্জন করেছে। আমরা এর সম্পাদক-প্রকাশক মাহফুজ আনাম, সকল সংবাদকর্মী ও পরিচালনা বোর্ডকে অভিনন্দন জানাই।
তবে যে স্বপ্নের সহযাত্রী হিসেবে দ্য ডেইলি স্টার-এর যাত্রা শুরু হয়েছিল, বাংলাদেশে এখনো সেই স্বপ্ন পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। দ্য ডেইলি স্টার-এর সাফল্যের সমান্তরালে সাফল্য আসেনি আমাদের গণতান্ত্রিক বিনির্মাণে। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বড় কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আসেনি, রাজনৈতিক দলগুলোতে অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক রীতিনীতির অনুশীলন বাড়েনি, পারস্পরিক সহযোগিতার পরিবর্তে তীব্রতর হয়েছে বৈরী মনোভাব, জাতীয় সংসদ সব দলের সক্রিয় অংশগ্রহণে প্রাণবন্ত হয়নি। শাসন-প্রক্রিয়ায় দলীয়করণ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার বদলে আইনকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করার প্রবণতা; অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দলপ্রীতির অবসান ঘটেনি। এবং এই সব ব্যর্থতার চিত্র অবিরামভাবে প্রতিফলিত হয়েছে ডেইলি স্টার-এর পাতায় পাতায়। স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও জনকল্যাণমুখী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দ্য ডেইলি স্টার তার সাংবাদিকী তৎপরতা অবিরাম চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষত অনিয়ম-দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন, নারীর প্রতি সহিংসতা, পরিবেশদূষণ ইত্যাদির বিরুদ্ধে পত্রিকাটি সোচ্চার ভূমিকা পালন করে চলেছে।
স্বাধীনতার ৪০তম বছরে ডেইলি স্টার উদ্যাপন করছে নিজের বিংশতিতম প্রতিষ্ঠাবর্ষ। একটি গণতান্ত্রিক, সম-অধিকারভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, আধুনিক, সম্মুখগামী সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রেরণায় মানুষকে উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে কাজ করে এসেছে যে সংবাদপত্র, তার সব স্বপ্নের উৎস মহান মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আলোকিত দ্য ডেইলি স্টার সেই আলো অবিরাম বিলিয়ে যাবে—দেশের সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে এ-ই আমাদের শুভকামনা। অভিনন্দন, দ্য ডেইলি স্টার।

No comments

Powered by Blogger.