জমি থেকে পাথর উত্তোলন-অতি লোভে তাঁতি নষ্ট

লোভে পড়ে সোনার ডিম পাড়া হাঁস জবাইয়ের গল্প আমরা জানি। এক ব্যক্তির একটি বিশেষ হাঁস প্রতিদিন সোনার ডিম দিত। ওই ডিম বেচে তার স্বাচ্ছন্দেই দিন কেটে যাচ্ছিল। কিন্তু প্রতিদিন একটি করে ডিমের বদলে একসঙ্গে সব পাওয়ার লোভ পেয়ে বসেছিল সে ও তার স্ত্রীকে।


একদিন ছুরি দিয়ে হাঁসের পেট চিড়ে সব ডিম বের করতে গিয়ে দুর্ভাগা ওই ব্যক্তি দেখল সেখানে কিছুই নেই। অতি লোভ করতে গিয়ে প্রতিদিন একটি করে ডিম পাওয়াও বন্ধ হয়ে গেল। ঈশপের এই গল্প অনেকের মনে পড়তে পারে রোববার সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন দেখে। সেখানে বলা হয়েছে, পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকার কৃষিজমি থেকে অবাধে পাথর উত্তোলনের কারণে আবাদি জমি নষ্ট হচ্ছে। হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। সমতলেও পাহাড়ি ভূমিধসের মতো দুর্যোগের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে। আমরা জানি, নদী ও তীরবর্তী অনাবাদি জমি থেকে পাথর উত্তোলন পুরনো সংকট। অর্থনৈতিকভাবে সাময়িক লাভ হলেও প্রকৃতিতে এর দীর্ঘমেয়াদি বিরূপ প্রভাব নিয়ে লেখালেখি কম হয়নি। বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলের জাফলং, পিয়াইন, ডাউকি ও ধলা নদীতে পাথর উত্তোলন বন্ধে হাইকোর্ট থেকে নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। কিন্তু পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়নি। এখন দেখা যাচ্ছে, পাথর ব্যবসায়ীরা আবাদি জমির দিকেও হাত বাড়িয়েছে। এ জন্য কেবল ব্যবসায়ীরা দায়ী নয়; কাঁচা টাকার লোভে কৃষকও তার খাদ্যদাতা জমিকে ক্ষতবিক্ষত করছে। এ প্রসঙ্গে কয়েক মাস আগে সহযোগী একটি দৈনিকে প্রকাশিত পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার জনৈক কৃষকের মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। আবাদি জমি থেকে পাথর উত্তোলন প্রসঙ্গে ইউসুফ আলী নামে প্রধানগছ গ্রামের ওই কৃষক বলেছেন, 'মাটি কেটে যে পাথর পাওয়া যায়, একশ' বছর আবাদ করেও তা পাওয়া যাবে না। পাথর তোলার পর জমি আবাদের অযোগ্য হওয়ার কথা ভাবার সময় নেই।' কৃষকের এমন মনোবৃত্তি ঈশপের গল্পের হাঁস জবাইয়ের মতোই আত্মঘাতী। কেবল জমির মালিক কোনো এক ব্যক্তির নয়; গোটা দেশের জন্য। কৃষিজমি কেটে পাথর উত্তোলন অবিলম্বে বন্ধ করা না গেলে দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশ বিপর্যয় ও দুর্যোগ তো আছেই; অচিরেই দেখা দেবে খাদ্য ঘাটতি। সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি ভেবে
দেখবেন বলে প্রত্যাশা।
 

No comments

Powered by Blogger.