জুনিয়র, নাকি সিনিয়র ছাত্রদলের নতুন কমিটি নিয়ে ছড়াচ্ছে উত্তেজনা by শফিক সাফি

ছাত্রদলের নতুন কমিটি নিয়ে শুরু হয়েছে তোড়জোড়। কমিটি নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মন্তব্যের পর চলছে নানা আলোচনা। জুনিয়র, নাকি সিনিয়রদের নিয়ে নতুন কমিটি দেওয়া হবে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে গুঞ্জন।


জানা যায়, গত সোমবার রাতে গুলশানের কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী ও সংসদ সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া। পরে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তাঁদের সবাই সিনিয়রদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে রেখে জুনিয়রদের দিয়ে ছাত্রদলের নতুন কমিটি দেওয়ার অনুরোধ করেন। খালেদা জিয়া পরিষ্কার বলে দেন, কমিটি জুনিয়র, নাকি সিনিয়রদের দিয়ে হবে, তা সময় হলেই জানানো হবে। তিনি আরো বলেন, 'আমি চলতি মাসে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাব। যাওয়ার আগেই কমিটিতে স্বাক্ষর করে যাব।'
এদিকে মার্চের শেষ সপ্তাহে বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দোলন প্রায় ১৫ দিন লন্ডন সফর শেষে দেশে ফেরেন। তাঁর দাবি, তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিক-নির্দেশনা নিয়ে এসেছেন। সংগঠনকে গতিশীল করতে ও সরকারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদলের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সিনিয়রদের নেতৃত্বে রেখে জুনিয়রদের দিয়ে কমিটি গঠনে তারেক রহমান মত দিয়েছেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
এ অবস্থায় ছাত্রদলের নতুন কমিটি নিয়ে চলছে তোড়জোড়। কাজ করছেন বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি ও ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। নতুন কমিটি গঠন সম্পর্কে এ্যানি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এ মাসেই কমিটি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা কাজ করছি।' তিনি বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া যায় কি না, সে জন্য সারা দেশ থেকে একটি তালিকা করা হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে এ্যানি বলেন, সমস্যা হয় মূলত সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ প্রথম পাঁচটি পদের কারণে। এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সিনিয়র নাকি জুনিয়রদের দিয়ে কমিটি হবে, তা নির্ধারণ করবেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়া বিরক্ত : ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি নিয়ে বিরক্ত খোদ চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিক্ষোভ, সমাবেশ বা হরতালে ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সিনিয়র সহ-সভাপতি শহীদুল ইসলাম বাবুলসহ কয়েকজন বাদে কারো ভূমিকায়ই খুশি নন তিনি। এ্যানি ও টুকুকে ডেকে সতর্ক করেছেন। কিন্তু তাতে কোনো কাজ না হওয়ায় নতুন কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেন।
চারটি ইউনিট একসঙ্গে ঘোষণা : একাধিক সূত্র দাবি করেছে, একসঙ্গে চারটি ইউনিট ঘোষণার কাজ চলছে। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি একই সঙ্গে ঘোষণা করা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কমিটির পরিধি ৫১ থেকে ২০১ সদস্য পর্যন্ত হতে পারে।
কমিটিতে পদ পেতে জোর লবিং : নতুন কমিটি গঠনের মূল কাজ করছেন এ্যানি। তাঁকে সহায়তা করছেন দলের বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা। নতুন কমিটি গঠন হচ্ছে- এমন খবরের পর পরই পদপ্রত্যাশীরা লবিং শুরু করেছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর কাছে তদবির বেড়ে গেছে বলে জানা গেছে।
সিনিয়রদের মধ্যে বজলুল করিম আবেদ, হাবিবুর রশিদ হাবীব, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, হাসান মামুন, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, আবদুল মতিন, আমিরুজ্জামান শিমুল, আনোয়ারুল হক রয়েলসহ কয়েকজন ছাত্রদলের নেতৃত্বে আসার চেষ্টা করছেন। জুনিয়রদের মধ্যে ওবায়দুল হক নাসির, শিপন, খোকন, মামুনুর রশিদ, এজমল হোসেন পাইলট, মসিউর রহমান মিশু, আকরামুল হাসান মিন্টুসহ কয়েকজন রয়েছেন।
পুরনো না নতুনদের নিয়ে কমিটি : ছাত্রদলের কমিটি মূলত আটকে আছে সিনিয়র-জুনিয়র প্রশ্নে। ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সিনিয়র নেতারা চাইছেন পুরনোদের নেতৃত্বে রেখে নতুনদের গুরুত্বপূর্ণ পদে দিতে। তবে একটি গ্রুপ চাইছে একেবারেই নতুনদের দিয়ে কমিটি করতে। সিনিয়ররা নেতৃত্বের পরীক্ষায় কম-বেশি উত্তীর্ণ। সিনিয়রদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাঁরা বিবাহিত এবং সন্তানের বাবা। জুনিয়র যাঁরা নেতৃত্বে আসতে চাইছেন, তাঁদের মধ্যেও বিবাহিত ও সন্তানের বাবা রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ওবাদুল হক নাসির ও মসিউর রহমান মিশু বিবাহিত। মামুনুর রশিদ বিদ্রোহের কারণে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। পরে লক্ষ্মীপুরের এক নেতার আশীর্বাদে ধর্মবিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন। শিপন ও খোকনকে অনেক নেতাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠনের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর ওপর হামলার জন্য দায়ী করেন। আকরামুল হাসান মিন্টু এখনো বহিষ্কৃত।
পদ পেতে মহড়া : ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণার সম্ভাবনাকে সামনে রেখে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বেড়েছে ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের ভিড়। যে যার মতো মহড়া দিচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সিনিয়র নেতা বলছেন, তাঁদের কমিটিতে না রাখলে সর্বাত্মক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়বে। জুনিয়ররা বলছেন, তাঁদের প্রাধান্য না থাকলে এবারের বিদ্রোহ হবে আরো ভয়াবহ।
ছাত্রনেতাদের বক্তব্য : বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সহসম্পাদক ও ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদলের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চান সবাই। নতুন আসবে, পুরনো যাবে- এটাই স্বাভাবিক। সেদিকে লক্ষ রেখেই কমিটি গঠনের কাজ চলছে।

No comments

Powered by Blogger.