রাজনীতি-পদ না ছেড়েই সরকারি চাকরিতে ছাত্রলীগের ১২ কেন্দ্রীয় নেতা by পাভেল হায়দার চৌধুরী

পদ না ছেড়েই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ১২ নেতা সরকারি চাকরিতে যোগদান করেছেন। তবে ওয়েবসাইটে ছাত্রলীগের এসব নেতার নাম, পদবি ও ছবি এখনো রয়ে গেছে। শূন্যপদগুলো পূরণে কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো তোড়জোড়ও নেই।


কমিটির মেয়াদ এক বছর না যেতেই কেন্দ্রীয় ওই ১২ নেতা সরকারি চাকরি বাগিয়ে নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এদিকে শূন্যপদ রয়েছে জানিয়ে সংগঠনের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়নি।
জানা যায়, সংগঠনের নিয়মানুযায়ী লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে চাকরি বা অন্য কোনো কাজে কোনো ছাত্রনেতা চলে গেলে আগে তাঁকে পদত্যাগপত্র জমা দিতে হবে। কিন্তু চাকরি নেওয়া ওই ১২ নেতা এখনো পদত্যাগপত্র জমা না দেওয়ায় গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। তবে ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ৩১ মার্চ কালের কণ্ঠকে জানান, চাকরি নেওয়া কেউ কেউ পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তা ছাড়া শূন্যপদগুলো পূরণে শিগগির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চাকরি করছেন যাঁরা : সহসভাপতি ফয়েজউদ্দীন হাসান, সাদিদ জাহান সৈকত, ওয়াসিম উদ্দীন জুয়েল, সাঈদ মাহমুদ ও মেজবাহউদ্দীন, তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক মারুফ আবদুল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হক তমাল, উপ-প্রচার সম্পাদক বাহারুল হোসাইন অর্নব, দেবব্রত দাস দেবু এনএসআইর ডিএডি পদে চাকরি করছেন। সহসভাপতি আজিজুল হক মামুন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগের প্রভাষক হিসেবে চাকরি নিয়েছেন। উপ মানবসম্পদ সম্পাদক নাসিম আম্মান অংকুর সোনালী ব্যাংকের জুনিয়র অফিসার পদে এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান উল্লাহ রাসেল (বইমেলায় স্টল নিয়ে সংঘর্ষে বহিষ্কৃত) ৩০তম বিসিএসে আনসার ভিডিপি ক্যাডারে মেডিক্যাল দিয়েছেন। ছাত্রলীগের ভেতরে-বাইরে গুঞ্জন রয়েছে, চাকরি বাগিয়ে নেওয়া কেন্দ্রীয় ওই ১২ নেতার সবাই সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের সমন্বয়ে সিন্ডিকেটের আশীর্বাদপুষ্ট।
অভিযোগ রয়েছে, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা লিয়াকত শিকদার, সাইফুজ্জামান শিখর, মাহমুদ হাসান রিপন ও মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটনসহ একজন প্রভাবশালী প্রতিমন্ত্রীর তদবিরে তাঁদের সবাই ছাত্রলীগের মতো ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা নির্বাচিত হন। অন্যদিকে সিন্ডিকেটভুক্ত বা সাবেক নেতাদের মুষ্টিবদ্ধ নেই বলে অনেক ত্যাগী নেতা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে ভূমিকা রেখেও কমিটিতে স্থান পাননি।
ছাত্রলীগের একাধিক নেতা জানান, এসব কারণে ছাত্রলীগে 'এখনো চেইন অব কমান্ড' আসেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগের বিশৃঙ্খলা প্রায় আগের মতোই চলছে।
এদিকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ২৯ বছর বয়সসীমা ঠিক রাখলেও সারা দেশে এ সংগঠনের ছাত্রনেতাদের বয়সসীমা ঠিক রাখা হয়নি। বেশির ভাগ কমিটি ৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী নেতাদের দিয়ে চলছে। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় নেতাদের জুনিয়র মনে করে সারা দেশের ছাত্রলীগের নেতারা। তাই অনেক সময় কেন্দ্রীয় নির্দেশনাও তাঁরা মানের না।
সংগঠন থেকে অব্যাহতি চেয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন কি না জানতে চাইলে সহসভাপতি ফয়েজউদ্দীন হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পদত্যাগপত্র জমা দিইনি। চাকরিতে চলে গেলে সংগঠনের পদ আপনা-আপনিই চলে যায়।'
গত বছরের ১০ ও ১১ জুলাই ২৯ বছর বয়সসীমা রেখে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচন করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আর এতে বাদ পড়েন বেশকিছু ছাত্রনেতা। অন্যদিকে বয়স থাকলেও সিন্ডিকেটের আধিপত্য থাকায় বাদ পড়েন দক্ষ দুই ডজন নেতা। এই সুযোগে নতুন কমিটিতে স্থান পান অদক্ষ অনেক ছাত্রনেতা।

No comments

Powered by Blogger.