চরাচর-'ভাওয়াইয়া ভবন' by এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান

আমরা ভাওয়াইয়া ভবন নির্মাণ করব- চমকপ্রদ বিষয়টি গত ৩০ ডিসেম্বর ২০০৫ ত্রৈমাসিক সাময়িকী, ভাওয়াইয়ার প্রথম সংখ্যার মোড়ক উন্মোচনের দিন থেকে বেশি বেশি আলোচিত হচ্ছে। এ কথা ভাওয়াইয়া জগতের সবাই অবগত, ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দ থেকে আমি ভাওয়াইয়া ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলাম।


সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ভাওয়াইয়া সম্রাটের বড় ছেলে সাবেক প্রধান বিচারপতি মুস্তাফা কামাল, বর্তমান সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী গোলাম মোহাম্মদ কাদের, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ভূমি প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর, ইঞ্জিনিয়ার মো. এনামুল হক, টিপু মুন্সী প্রমুখ ভাওয়াইয়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে আমাদের এ দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। আমাদের উদ্যোগকে তাঁরা স্বাগত জানিয়েছেন। এ ছাড়া গবেষক ড. আশ্রাফ সিদ্দিকী, ড. করুণাময় গোস্বামী, সদ্যপ্রয়াত ড. মৃদুল কান্তি চক্রবর্তী, ড. রহমান হাবিব, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভাওয়াইয়াশিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, ভাওয়াইয়া সম্রাটের ছোট ছেলে প্রখ্যাত ভাওয়াইয়াশিল্পী, গবেষক, সংগ্রাহক, লেখক ও উপস্থাপক মুস্তাফা জামান আব্বাসী ভাওয়াইয়া ভবন নির্মাণের ব্যাপারে একখণ্ড জমি দান করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৯২ সালে আমার উদ্যোগে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয় ভাওয়াইয়াবিষয়ক প্রথম সংগঠন 'বাংলাদেশ ভাওয়াইয়া পরিষদ রংপুর'। ১৯৯৫ সালে রংপুরের সাবেক সংসদ সদস্য রেবেকা মাহমুদ, কবি রোমেনা চৌধুরী, তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. আফজাল হোসেন এবং জেলা পরিষদের সচিব মো. মজিবর রহমানের সহযোগিতায় ১৯৯৫ সালে রংপুরের লক্ষ্মী সিনেমা হলের পেছনে ব্রিজ-সংলগ্ন ভাওয়াইয়া চত্বরে ভাওয়াইয়া ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন সাবেক শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রী প্রয়াত মীর শওকত আলী (বীর উত্তম)।
ভাওয়াইয়া শিল্পীদের ব্যবহার্য জিনিসপত্র, জামাকাপড়, চশমা, ঘড়ি, লাঠি, কলম, ভাওয়াইয়া শিল্পী, গীতিকার, সুরকার, সংগ্রাহক, গবেষক, লেখক এবং ভাওয়াইয়া সংশ্লিষ্ট বাদ্যযন্ত্রীদের ছবি ইত্যাদি সংরক্ষিত থাকবে। চাওয়া মাত্রই আপনাকে ভাওয়াইয়া গান এবং এ-সংক্রান্ত উপাত্ত সরবরাহ করা হবে। ভাওয়াইয়া ভবনে নির্মিত হবে আব্বাসউদ্দীন মিলনায়তন। ভাওয়াইয়া ভবনে ঢুকতেই সামনের দেয়ালে চোখে পড়বে খোদাই করা তাঁর বিরাট প্রতিকৃতি। আব্বাসউদ্দীনের পাশে শোভা পাবে তাঁর সমসাময়িককালের শিল্পীদের ছবি। আর ভবনের সম্মুখের দুপাশের দেয়ালে খোদিত হবে আমাদের ছবি অর্থাৎ আমরা যাঁরা এ ভবন নির্মাণের সঙ্গে জড়িত থেকে দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করব তাঁদের ছবি। ২০১১ সালের ২৭ অক্টোবর ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাসউদ্দীন আহমদের ১১০তম জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি মুস্তাফা জামান আব্বাসীর উপস্থিতিতে অপ্রত্যাশিতভাবে ভাওয়াইয়া ভবন নির্মাণ তহবিল গঠনের শুভ সূচনা হয় ঢাকার শাহবাগের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে।
আমাদের জন্য আনন্দের সংবাদ হচ্ছে, গত ২৪ জানুয়ারি রংপুরে ভাওয়াইয়া ভবন চত্বরের প্রাচীর নির্মাণকাজ শুরু করেছেন রংপুরের তেজদীপ্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ মুহাম্মদ মশিউর রহমান রাঙ্গা। সেখানে ১৯৯৮ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া ভাওয়াইয়া গানের স্কুলটির কার্যক্রমও আবার শুরু করা হয়েছে গত ২ মার্চ থেকে। রংপুর অঞ্চলের ভাওয়াইয়া ব্যক্তিত্ব প্রবীণ ভাওয়াইয়া শিল্পী, গীতিকার, সুরকার ও বাংলাদেশ বেতারের সাবেক উপ-মুখ্য সংগীত প্রযোজক মো. সিরাজ উদ্দীন ভাওয়াইয়া গানের ওই স্কুলের প্রধান প্রশিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণ করে আমাদের দারুণভাবে উদ্বুদ্ধ করেছেন। আমাদের স্বপ্ন পূরণ হওয়ার পথ তৈরি হয়ে গেল।
এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান

No comments

Powered by Blogger.