স্মরণ-নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু by তামান্না ইসলাম অলি

অহিংসা নয়, উদারতা নয়; শক্তি প্রয়োগ করেই ব্রিটিশকে ভারত থেকে তাড়াতে হবে'_এই মন্ত্রকে ব্রত হিসেবে নিয়েছিলেন তিনি। আমৃত্যু লড়াই করেছেন ভারতের স্বাধীনতার জন্য। ছিলেন সশস্ত্র বিপ্লবের সংগঠক। এ উপমহাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের প্রবক্তাও তিনি। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হন দুইবার। গঠন করেন অল ইন্ডিয়া ফরওয়ার্ড ব্লক ও আজাদ হিন্দ্ ফৌজ নামের দুটি রাজনৈতিক দল।


ভারতের স্বাধীনতার জন্য তিনি চষে বেড়িয়েছেন পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত। সুভাষ বসুর জন্ম ১৮৯৭ সালের ২৩ জানুয়ারি উড়িষ্যার কটক শহরের এক বাঙালি পরিবারে। পৈতৃক বাড়ি চবি্বশ পরগনার কোদালিয়া গ্রামে। বাবা জানকীনাথ বসু ছিলেন আইনজীবী। এর পাশাপাশি তিনি ছিলেন কটক মিউনিসিপ্যালিটি ও জেলা বোর্ডের সভাপতি। আর মা প্রভাবতী দেবী ছিলেন কলকাতার হাটখোলার বিখ্যাত দত্তবাড়ির মেয়ে। তিনি ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ গৃহিণী।
বয়স যখন ১৩-১৪ বছর, তখন স্বামী বিবেকানন্দ ও শ্রী রামকৃঞ্চ পরমহংসদেবের প্রতি আকৃষ্ট হন সুভাষচন্দ্র। স্বামীজি দেশকে শত্রুমুক্ত করার জন্য যেসব বক্তৃতা বা উপদেশ দিয়েছেন, তিনি তা নিজের জীবনের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেন। এ সময় প্রচলিত পড়াশোনা তাঁর কাছে তুচ্ছ মনে হতো। তার পরও স্কুল প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতেই হয়। পারিবারিক চাপে ১৯১৩ সালে ভর্তি হন কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে। ১৯১৫ সালে আইএ পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ওই বছরই প্রেসিডেন্সি কলেজে দর্শনে সম্মানে ভর্তি হন। কলেজের অধ্যাপক ওটেন বাঙালি ছাত্রদের সঙ্গে অপমানসূচক ব্যবহার করায় নেতাজি এর প্রতিবাদ করেছিলেন। এ কারণে তাঁকে কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হয়। অবশেষে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের সাহায্যে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হন। ১৯৩৩ সালের মাঝামাঝি সরকারের চোখে ধুলা দিয়ে তিনি ইউরোপে চলে যান। ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত সেখানেই থাকেন। এ সময় তিনি বহু রাজনৈতিক নেতা ও মহান ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেন এবং ভারতের স্বাধীনতার জন্য জোর প্রচার চালান। ১৯৩৬ সালের ৮ এপ্রিল দেশে ফেরার পর আবার কারাবন্দি হন। মুক্তি পান ১৯৩৭ সালে। ওই বছরই তিনি তাঁর ব্যক্তিগত সচিব এমিলিকে বিয়ে করেন। ১৯৩৮ সালে ভারতবাসী তাঁকে কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ছয় মাসের মধ্যে স্বাধীনতা দেওয়ার দাবি জানিয়ে ইংরেজ সরকারকে চরমপত্র পাঠানোর জন্য গান্ধীজির কাছে প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাবে মতবিরোধ দেখা দিলে সুভাষচন্দ্র বসু পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এ সময় ফরওয়ার্ড ব্লক নামের আরেকটি দল গঠন করেন। কলকাতায় প্রবল জনমত সৃষ্টি হলে ইংরেজ সরকার ভয় পেয়ে যায়। এ জন্য ১৯৪০ সালের ২ জুলাই নেতাজিকে প্রেসিডেন্সি জেলে আটকে রাখা হয়। ১৯৪১ সালে গৃহবন্দি অবস্থায় পালিয়ে রাশিয়ায় চলে যান তিনি। সেখান থেকে আফগানিস্তান, মস্কো, জার্মানি হয়ে জাপানে যান। সেখানে ভারতীয় যুদ্ধবন্দিদের নিয়ে গড়ে তোলেন আজাদ হিন্দ্ ফৌজ। প্রবাসে ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের পরিচালক নির্বাচিত হওয়ায় রাসবিহারী বসু তাঁকে 'নেতাজি' উপাধিতে ভূষিত করেন।
আজ ১৯ আগস্ট। দিনটিকে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যুদিন হিসেবে ধরা হয়। তবে তাঁর এই মৃত্যুর দিন নিয়েও অনেক মতভেদ আছে। ১৯৪৫ সালের এই দিনে টোকিও যাওয়ার সময় তাইওয়ানে এক বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর।
তামান্না ইসলাম অলি

No comments

Powered by Blogger.