নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন-আলোচনা চায় বিএনপি সংসদে প্রস্তাব তুলতে পরামর্শ আ.লীগের by জাহাঙ্গীর আলম ও তানভীর সোহেল

নির্দলীয় সরকারের অধীন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চায় বিএনপি। তবে বিএনপি এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব তৈরি করেনি। দলটি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা করে প্রস্তাব দিতে চায়।
এ ব্যাপারে সংসদের বাইরে আলোচনার ব্যাপারে আগ্রহী নয় আওয়ামী লীগ। বিএনপির কোনো প্রস্তাব থাকলে তা জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করতে পরামর্শ দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা।


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, সরকার নীতিগতভাবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিলে বিএনপি পদ্ধতি নির্ধারণে আলোচনায় সাড়া দেবে। সেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিগত ব্যবস্থার কিছু পরিবর্তন, পরিমার্জন ও সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া হবে। তিনি বলেন, আলোচনা হতে হবে। তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হতে পারে।
কিন্তু আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থায় আর ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আদালত এ ব্যবস্থা অসাংবিধানিক বলে রায় দেওয়ায় জাতীয় সংসদ তা বাতিল করেছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রথম আলোকে বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে আলোচনার সুযোগ নেই। নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে বিএনপির কোনো প্রস্তাব থাকলে তা জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করতে পারে। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া সভা-সমাবেশে নানা বক্তৃতা দিচ্ছেন। তাঁদের কী প্রস্তাব, আমরা জানি না। তাঁকে অনুরোধ করব, তিনি যেন জাতীয় সংসদে এসে প্রস্তাব দেন।’
জাতীয় সংসদে গিয়ে প্রস্তাব তোলা হবে কি না, এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির নেতা মওদুদ আহমদ বলেন, ‘সরকারকে আগে উদ্যোগী হতে হবে। আগবাড়িয়ে সংসদে বিএনপি এ নিয়ে প্রস্তাব তুললে কোনো ফল আসবে না। ’
তবে বিএনপির একজন সাংসদ প্রথম আলোকে বলেছেন, ভবিষ্যতে যে দিনই বিএনপি সংসদ অধিবেশনে যাবে, সেদিন বিএনপির সাংসদেরা নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের ব্যাপারে দলের অবস্থান তুলে ধরবেন।
বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া গত সোমবার চাঁদপুরের জনসভায় সরকারি দলের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনাদের যদি তত্ত্বাবধায়ক নামটি পছন্দ না হয়, তাহলে অন্য কোনো নামে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। বিএনপির এতে আপত্তি থাকবে না। তবে আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির অবস্থান হলো, নির্বাচন হতে হবে অরাজনৈতিক ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। বিএনপির চেয়ারপারসন সংকট থেকে উত্তরণ ও স্থিতিশীল রাজনীতির পক্ষে। তাই তিনি এটা বলেছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার হুবহু একই ধরনের ব্যবস্থা ক্ষমতাসীনেরা ফিরিয়ে আনবে, এটা আশা করা যায় না। এ চিন্তা থেকেই খালেদা জিয়া ভিন্ন নামে হলেও নির্বাচনের সময় একটি নির্দলীয় সরকারপদ্ধতির কথা বলেছেন। সেটা ‘অন্তর্বর্তীকালীন’, ‘নির্দলীয়’ বা ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ বা অন্য যে নামেই হোক, আলোচনা করে তা সংবিধানে অন্তর্ভুক্তি চায় বিএনপি।
দলীয় সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক বৈঠকে নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিএনপি মনে করে, আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা মোটামুটি ঠিকই আছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন ও নতুন কিছু সংযোজন এনে নতুন নামে নির্দলীয় সরকার গঠন করা যেতে পারে। যেমন: নির্দলীয় সরকারপ্রধান করার ক্ষেত্রে সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির স্থলে অন্য কাউকে নিয়োগ, অন্যান্য উপদেষ্টা নিয়োগের ব্যাপারে একটা নীতিমালা ও নির্দলীয় সরকারের মেয়াদ সুনির্দিষ্ট করা যেতে পারে। একই সঙ্গে নির্দলীয় সরকার নির্দিষ্ট মেয়াদ লঙ্ঘন করলে শাস্তির ব্যবস্থাও রাখা যেতে পারে।
এদিকে আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, গত সোমবার রাতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠকেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। এতে নেতারা ঐকমত্য পোষণ করেন যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনসংক্রান্ত বিএনপির কোনো প্রস্তাব সংসদে উপস্থাপন করলে তা নিয়ে আলোচনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয় বৈঠকে।
জানতে চাইলে মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘জনগণের ওপর আওয়ামী লীগের আস্থা আছে। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কিন্তু কোনো অসাংবিধানিক বিষয় আমরা দীর্ঘদিন রাখতে চাই না।’

No comments

Powered by Blogger.