পবিত্র কোরআনের আলো-অপরাধপ্রবণতা প্রতিরোধে শাস্তি ও সংশোধনের সুযোগ দুটোই বিধেয়

৩৭. ইউরীদূনা আইঁয়্যাখরুজূ মিনান্নারি ওয়া মাহুম বিখারিজীনা মিনহা; ওয়া লাহুম আ'যাবুম্ মুক্বীম। ৩৮. ওয়াচ্ছারিক্বু ওয়াচ্ছারিক্বাতু ফাক্বত্বাঊ' আইদিইয়াহুমা জাযা-আম্ বিমা কাছাবা নাকালাম্ মিনাল্লাহি; ওয়াল্লাহু আ'যীযুন হাকীম।
৩৯. ফামান তা-বা মিম্ বা'দি যুলমিহী ওয়া আসলাহা ফাইন্নাল্লাহা ইয়াতূবু আ'লাইহি; ইন্নাল্লাহা গাফূরুর্ রাহীম।


৪০. আলাম তা'লাম্ আন্নাল্লাহা লাহূ মুলকুচ্ছামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বি; ইউআ'য্যিবু মাইঁয়্যাশা-উ ওয়া ইয়াগফিরু লিমাইঁয়্যাশা-উ; ওয়াল্লাহু আ'লা কুলি্ল শাইয়িন ক্বাদীর। [সুরা : আল মায়েদা, আয়াত : ৩৭-৪০]
অনুবাদ : ৩৭. তারা সেদিন চেষ্টা করবে দোজখের আগুন থেকে বেরিয়ে আসতে, কিন্তু তারা সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না। তাদের জন্য স্থায়ী শাস্তি নির্ধারিত হয়ে আছে।
৩৮. যে চুরি করবে, সে পুরুষ বা নারী যে-ই হোক, তার হাত কেটে ফেলো। এটা তাদেরই কর্মফল এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত দণ্ড। আল্লাহ তায়ালা মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।
৩৯. যে ব্যক্তি অন্যায়-অপরাধ করার পরও তওবা করবে এবং নিজেকে সংশোধন করে নেবে, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা তার তওবা কবুল করবেন। আল্লাহ তায়ালা নিঃসন্দেহে বড় ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
৪০. আপনি কি জানেন না, এই আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর একক মালিকানা আল্লাহর! তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে শাস্তি দেন এবং যাকে ইচ্ছা তাকে মাফ করে দেন। আল্লাহ তায়ালা সব কিছুতেই সক্ষম।
ব্যাখ্যা : ৩৭ নম্বর আয়াতটি এসেছে আগের আয়াতের ধারাবাহিকতায়। এ আয়াতে অবাধ্য কাফেরদের করুণ পরিণতির কথাই বলা হয়েছে। যখন এদের দোজখে নিক্ষেপ করা হবে, তখন তারা সেখান থেকে বের হয়ে আসার প্রাণপণ চেষ্টা করবে; কিন্তু তারা সেখান থেকে বের হতে পারবে না। এই দোজখই হবে তাদের চিরস্থায়ী ঠিকানা।
৩৮ নম্বর আয়াতে নতুন প্রসঙ্গ এসেছে। চোর ও চোরনী, অর্থাৎ পুরুষ চোর এবং নারী চোর উভয়ের জন্য একই শাস্তির কথা বলা হয়েছে; সেটা হলো_এদের এক হাত কেটে ফেলা। ৩৮ নম্বর আয়াতে এ শাস্তির কথা বলা হয়েছে এবং পরবর্তী আয়াত অর্থাৎ ৩৯ নম্বর আয়াতে যারা অন্যায়-অপরাধ করার পর তওবা করবে এবং নিজেকে সংশোধন করে নেবে, তাদের জন্য আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা পাওয়ার আশ্বাস শোনানো হয়েছে। চুরির অপরাধে হাত কেটে ফেলার বিচার প্রাচীনকালে প্রচলিত বিচারব্যবস্থায় প্রদত্ত শাস্তির অংশ। আখেরি রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আমলেও এই বিধান নাকচ করা হয়নি এবং সমর্থন করা হয়েছে। কিন্তু চোর ধরা পড়লে হাত কেটে যদি তার শাস্তি দিয়েই ফেলা হয়, তাহলে পরবর্তী আয়াতে যে বলা হয়েছে তওবা ও সংশোধনের বিনিময়ে ক্ষমা পাওয়ার সুযোগের কথা, সে সুযোগ আর থাকে কোথায়! সুতরাং আধুনিককালের বিচারব্যবস্থায় চোরের হাত কাটার বিধান নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। এটা কোরআনের নির্দেশের ব্যত্যয় নয়, বরং কোরআনের নির্দেশকে অধিকতর প্রজ্ঞার সঙ্গে পালনেরই ব্যবস্থা। আধুনিককালে জেলখানা, সংশোধনাগার ইত্যাদি স্থাপন করে অপরাধপ্রবণতা রোধের জন্য মানবিক শাস্তির ব্যবস্থাদি প্রবর্তন করা হয়েছে। এগুলো ইসলামের ব্যত্যয় নয়। অপরাধপ্রবণতা রোধের জন্য বিচারের মাধ্যমে শাস্তির যে ব্যবস্থা, এর মূল স্পিরিট প্রতিশোধ গ্রহণের নয়। বিচারের শাস্তি প্রদানের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত মানুষকে অপরাধপ্রবণতা থেকে বিরত করা বা ফিরিয়ে আনা। সংশোধনের লক্ষ্যে বিচার, প্রতিশোধ গ্রহণের লক্ষ্যে নয়। ৪০ নম্বর আয়াতে রাসুল (সা.)-কে সমগ্র বিশ্বজগতের ওপর আল্লাহর সার্বভৌমত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলা হয়েছে তার ক্ষমাশীলতার কথা। আল্লাহ ক্ষমাশীল, তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন; আবার যাকে ইচ্ছা তাকে শাস্তি দিতে পারেন। এ কথার অর্থ আবার এই নয় যে ক্ষমা ও শাস্তি খামখেয়ালিপনার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। বরং ক্ষমা ও শাস্তি ন্যায়নিষ্ঠার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.