পাটের কদর-সম্ভাবনার নতুন আলো ছড়িয়ে পড়ুক

একসময়ের সোনালি আঁশ বলে পরিচিত পাট ক্রমেই স্মৃতিচারণামূলক আলোচনার বিষয়ে পরিণত হলেও পাট নিয়ে সম্প্রতি সম্ভাবনার নতুন আলোর ঝিলিক দেখা দিয়েছে। ২৪ জুলাই কালের কণ্ঠে পাটসংক্রান্ত প্রকাশিত কয়েকটি প্রতিবেদনে এমনটি ফুটে উঠেছে।
বিজেএমএর চেয়ারম্যান কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, সহযোগিতা পেলে পোশাক শিল্পকেও ছাড়িয়ে যাবে পাট। আমরা আশা করি, সরকার তাঁর এ আশার বাণীকে কাজে রূপ দিতে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।
কৃষিনির্ভর এ দেশে শুধু ধান-গম কিংবা নির্দিষ্ট কিছু কৃষিপণ্যের উৎপাদনের প্রচেষ্টা কিংবা সেদিকেই দৃষ্টি নিবদ্ধ না রেখে সময়ের প্রয়োজনেই তা বিস্তৃত করার উদ্যোগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নেওয়া উচিত। পাট তেমনই একটি কৃষিজাত পণ্য_যা একসময় আমাদের অর্থনীতির বড় জোগানদার ছিল। কিন্তু অতীত সরকারের অদূরদর্শিতা, গণ্ডিবদ্ধ চিন্তা, উপযুক্ত পরিকল্পনার অভাবে পাট খাতে অন্ধকার নেমে এলেও বর্তমান সরকার এ খাতকে আবার চাঙ্গা করতে নানা রকম প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে। ইতিমধ্যে এর কিছুটা সুফলও মিলতে শুরু করেছে। একসময় লোকসানে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো এখন মুনাফা গুনতে শুরু করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের মর্মন্তুদ জীবনকাহিনী সমাজে বিরাট হতাশাব্যঞ্জক প্রভাব ফেলেছিল। এখন আবার তাদের মুখে হাসি ফুটতে শুরু করলেও ধকল সইতে হয়েছে প্রচুর। শুধু কর্মসংস্থানই নয়, শিল্পের রুগ্ণতা অর্থনীতিসহ নানা দিকে কালো ছায়া ফেলে এবং আমাদের পাট খাত এরই একটি ব্যর্থ দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো উৎপাদনমুখী হয়েছে এবং এগুলোর নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিজেএমসির ২৩টি পাটকলের মধ্যে সব কয়টি মুনাফার হিসাব কষছে, এটি সুবার্তা বটে। গত এক বছরে রপ্তানি বেড়েছে দুই হাজার কোটি টাকা। যে বিজেএমসি পঙ্গুত্ববরণ করে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছিল, সেই সংস্থাটি আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে_এ সংবাদ নিঃসন্দেহে ব্যাপক আশা জাগানিয়া। বিশ্বখ্যাত আমাদের আদমজী পাটকলের দরজায় তালা পড়েছে। অথচ আদমজীর উৎপাদিত পণ্য একসময় আন্তর্জাতিক বাজারে ভোক্তাদের মন জয় করে আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছিল। দূরদর্শী কর্মপরিকল্পনা, স্বচ্ছতা, গঠনমূলক নীতিমালা, দক্ষ ব্যবস্থাপনা আর সংশ্লিষ্টদের দায়বদ্ধতা সর্বক্ষেত্রে কতটা অপরিহার্য_রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর লাভের খাতায় আবার নাম অন্তর্ভুক্তি এরই সুনজির। আদমজীর হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যও এভাবে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
বিশ্ববাজারে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে_আমাদের জন্য এও সুবার্তা। ১৯৮৩ সালের আগে ৮৭টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল ছিল, যেগুলো তৎকালীন সরকারের অদূরদর্শী সিদ্ধান্তে বেসরকারীকরণ করা হয় এবং এর মধ্যে সিংহভাগেরই পাটকল নামে এখন আর পরিচয়ই নেই। মিসর, ব্রাজিল, জাপান, চীন, আইভরি কোস্ট, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পরিবেশবান্ধব পাট ও পাটজাত পণ্য ক্রয়ের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাদের আগ্রহ ও চাহিদা অনুযায়ী পাট ও পাটজাত পণ্য সরবরাহের দূরদর্শী উদ্যোগ নিলে তা ফলপ্রসূ হবে এবং কর্মসংস্থান ও অর্থনীতিতে আলো ছড়িয়ে পড়বে। আমরা আশা করি, সম্ভাবনার নতুন আলো যাতে দিগন্ত বিস্তৃত হয়, সরকার সে রকম সফল পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হবে।

No comments

Powered by Blogger.