অবিলম্বে নির্বাচন অনুষ্ঠানই কাম্য-মহানগর বিভক্তিকরণ

ইংরেজিতে বিশ্বব্যাপী একটি শব্দ প্রচলিত আছে—জেরিম্যান্ডারিং। এর মানে হলো, কোনো একটি রাজনৈতিক দল প্রধানত তার দলীয় স্বার্থসিদ্ধির জন্য যখন কোনো শহরের নির্বাচনী এলাকাকে বিভক্ত করে। বিশ্বের বহু শহরেই এমনটা ঘটেছে।


বর্তমান সরকার পাঁচ বছর মেয়াদি ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়াদ প্রায় ১০ বছর হলেও নির্বাচন অনুষ্ঠানে অনাগ্রহী থাকছে। জনমনে যখন এ ধারণা প্রবল যে ইতিমধ্যেই জনপ্রিয়তা হারানোর কারণে ক্ষমতাসীন দলটি ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঝুঁকি নিতে চাইছে না। এবং সে কারণেই মেয়র পদে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী দলের নেতাকে হজম করে আসছিল।
মন্ত্রিসভায় ১৭ অক্টোবরের বৈঠকে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রীর দাবি, এত দিন নির্বাচন হতে না দেওয়ার কারণ এই বিভক্তিকরণ। এ যুক্তি সত্য হলে ধরে নিতে হবে, আওয়ামী লীগ উপযুক্ত একাধিক প্রার্থী খুঁজে পেয়েছে। এত দিন খবর ছিল, মেয়র পদে প্রার্থী নিয়ে তারা সংকটগ্রস্ত।
আওয়ামী লীগের সমর্থক সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফই নগর সরকারের ধারণা দিয়েছিলেন। স্থানীয় সরকারকে বিকেন্দ্রীকরণ ও গণতন্ত্রায়ণের মাধ্যমে যাঁরা স্থানীয় সরকারের উৎকর্ষ আশা করেন, তাঁরা সরকারের শুধু ভাগ করার নীতিকে দুর্ভাগ্যজনক হিসেবেই দেখছেন। বিএনপির সমর্থক মেয়র সাদেক হোসেন খোকাকে নির্বাচন ছাড়া সরানো সম্ভব ছিল না। এখন প্রস্তাবিত আইনে প্রশাসক নিয়োগের বিধান রাখা হবে। এর অর্থ দাঁড়াবে, এই নির্বাচন অনুষ্ঠান ছাড়াও নির্বাচিত ব্যক্তিরা অপসারিত হতে পারবেন। এর পরিবর্তে জায়গা করে নেবেন আমলারা। নগর পরিকল্পনাবিদদের অনেকে মনে করেন, দুটি নয়, আরও বেশিসংখ্যক নির্বাচনী এলাকায় মহানগরকে বিভক্ত করা হলে তা থেকে সুফল পাওয়া যেত। জনগণ সহজে তাদের কিছু কাজকর্ম করিয়ে নিতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ পেত।
রাজউক ও ডিসিসির মধ্যে নানা বিষয়ে সমন্বয়হীনতা বিরাজমান। যেমন, কোনো ভবন অবৈধভাবে গড়ে ওঠার পর তা কে ভাঙবে, তা নিয়ে বিতর্কমুক্ত হতে পারেনি তারা। মহানগরের ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান বা ড্যাপ বাস্তবায়নে চারটি বড় প্রতিষ্ঠানকে আলাদাভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। দেখা গেছে, প্রত্যেকেই আলাদা কৌশল ও ভাবনা থেকে এমনভাবে পরিকল্পনা করেছে, যা সমন্বয়হীনতা সৃষ্টি করে। এই মহানগরের নানামুখী উন্নয়নের সঙ্গে ৪০টির বেশি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। বহু ধরনের আইন রয়েছে। যার একটির সঙ্গে আরেকটি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সুতরাং মহানগরের বিভক্তিকরণের সঙ্গে বহু প্রশাসনিক প্রশ্নের ফয়সালা করতে হবে। তবে সবচেয়ে বড় চিন্তা দুই মহানগরে সমাজের সৎ ও যোগ্য লোকদের নির্বাচিত হওয়ার পথ সুগম করা। নির্বাচন কমিশনকে এ বিষয়ে এখনই ভাবতে হবে।
উন্নত গণতান্ত্রিক সমাজে জেরিম্যান্ডারিং ঘটলেও আমাদের মতো উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয় না। কারণ, তারা আর যা-ই করুক, আনুগত্য বা অর্থের বিনিময়ে সেখানে মনোনয়ন বিকিকিনি হয় না। ঢাকা মহনগরেও সেটা আমরা দেখতে চাই না। মেয়র সাদেক হোসেন যখন তাঁর ক্ষমতাহীনতার কথা বলেন, তখন আমরা তাঁর গ্রহণযোগ্যতা দেখতে পাই। কারণ, রাজউক ও ডিসিসির মতো প্রতিষ্ঠানগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় স্বাধীনভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। এরও অবসান দরকার।

No comments

Powered by Blogger.