পুলিশের আরও সক্রিয়তা প্রয়োজন - আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধের বিচার

পুলিশ সদর দপ্তরে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত অপরাধবিষয়ক সভার শেষে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় ভালো। কিন্তু এর পক্ষে কোনো তথ্য-পরিসংখ্যান উপস্থাপন করা হয়নি। তাহলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে—পুলিশের এমন দাবির ভিত্তি কী?


পুলিশের অপরাধবিষয়ক সভায় সিআইডির অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান গত পাঁচ বছরের যে তুলনামূলক অপরাধচিত্র তুলে ধরেছেন, তাতে বরং উল্টোটাই মনে হয়। তুলনামূলক অপরাধচিত্র বলছে, ২০১০ সালের চেয়ে ২০১১ সালে অপরাধবিষয়ক মামলার সংখ্যা ৬ শতাংশ বেড়েছে। ২০০৯ সালে মামলার সংখ্যা ২০০৮ সালের চেয়ে সামান্য কম ছিল, কিন্তু ২০০৬ ও তার আগের বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। মামলার সংখ্যা বৃদ্ধির এই সাধারণ প্রবণতার ব্যাখ্যা কী? অপরাধ বেশি সংঘটিত হলেই মামলার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কথা। অপরাধ কমেছে, কিন্তু মামলার সংখ্যা বেড়েছে—এমনটি হওয়ার কথা নয়।
পুলিশ জনবান্ধব হয়েছে, অপরাধের শিকার মানুষ এখন মামলা করতে থানায় ছুটে যায়, এমনকি তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিরোধের ঘটনায়ও। যদি এ কারণেই নিবন্ধিত মামলার সংখ্যা বাড়ে, তবে এটা ভালো কথা নয়। থানা-পুলিশ যদি এমন জনবান্ধব হয় যে, অভিযোগের আমলযোগ্যতা-নির্বিশেষে মামলা গ্রহণ করতে থাকবে, তাহলে সেটাও কোনো কাজের কথা নয়।
হত্যা, নারী ও শিশু নির্যাতন, অবৈধ মাদকদ্রব্য-সংক্রান্ত অপরাধসহ বিভিন্ন অভিযোগে দায়ের করা মামলাগুলোর ৭৬ শতাংশ আসামি খালাস পেয়ে যায়, সাজা হয় মাত্র ২৪ শতাংশের—পুলিশের দেওয়া এ তথ্যও আমাদের আইন প্রয়োগ ব্যবস্থার দুর্বলতা তুলে ধরে। কারণ, আসামিদের সাজা না হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ, পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারে না। এ ছাড়া ফৌজদারি মামলার দীর্ঘসূত্রতাও মামলা দুর্বল হয়ে পড়ার একটি বড় কারণ। অভিযোগ প্রমাণের লক্ষ্যে পুলিশ ও প্রসিকিউশনের মিলিত তৎপরতার পাশাপাশি বিচার-প্রক্রিয়ার গতি বাড়ানোর ওপর বিশেষ জোর দিতে হবে।
অপরাধ দমন করা এবং সংঘটিত অপরাধের বিচার করে অপরাধীদের আইনানুগ শাস্তি নিশ্চিত করা—উভয় দায়িত্বের ক্ষেত্রেই পুলিশের আরও সক্রিয়তা প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.