অটিস্টিক শিশুর মানসিক বিকাশ-প্রয়োজন জনসচেতনতা ও সরকারি সহযোগিতা

প্রায় অবহেলিত অটিজম বিষয় নিয়ে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু কর্মসূচি। সোমবার ঢাকায় এর সাড়ম্বর অনুষ্ঠান মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে, যে অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্যতিক্রমী এ আয়োজনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে ২৭ থেকে ২৯ জুলাই।


প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন এ আয়োজনের একজন উদ্যোক্তা এবং ভারতের কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও শ্রীলঙ্কার ফার্স্ট লেডির মতো কিছু ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি এ আয়োজনকে সমৃদ্ধ করেছে। অনুষ্ঠানের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে, অটিজম সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। এশীয় অঞ্চলের দারিদ্র্যপীড়িত দেশগুলোর আঞ্চলিক নেতা ও বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এ অনুষ্ঠান ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা উদ্ভাবন করতে সক্ষম হবে বলে স্পষ্টত আভাস পাওয়া গেছে। দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার কারণেই এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের এখানে উল্লেখ করার মতো তেমন কাজ হয়নি। অথচ অটিজমের উৎপত্তি ধনী-গরিব বিচার করে হয় না।
শৈশব থেকেই মানুষের বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটতে থাকে। কোনো কোনো মানুষের এ বিকাশের পথে অনাকাঙ্ক্ষিত বাধা পড়তে পারে। এ বিঘ্ন সৃষ্টির অবস্থা এমনও হতে পারে যে সেই শিশুটি হয়তো নিজের প্রয়োজনীয় কাজটি নিজে করার জন্য যে বুদ্ধিমত্তা প্রয়োজন, সেটাই অর্জন করতে পারে না। যেমন নিজের কাপড়চোপড় পরা, নিজের খাবারদাবার গ্রহণ, নিজের ইচ্ছার কথা প্রকাশ করা এমনকি টয়লেট করার বিষয়টিও সে প্রকাশ করতে পারে না। এ প্রতিবন্ধকতা যে শিশুর আছে, সে শিশুটির পরিবার যদি হয় মধ্যবিত্ত কিংবা নিন্ম মধ্যবিত্ত, তাহলে তাদের দুর্ভোগ অসীম হয়ে পড়ে। আমাদের এখানকার মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর এমনিতেই সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। তাদের সুস্থ-স্বাভাবিক সন্তানদের লেখাপড়া করানোর মতো অতি জরুরি কাজগুলোই চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। সেখানে যদি কোনো সন্তান অটিজমে আক্রান্ত হয়, তাহলে সে শিশুটি তাদের জন্য বোঝা হিসেবে দেখা দেয়। আর্থসামাজিক কারণে এমন শিশুরা পরিবারের বোঝা হিসেবেই জীবন কাটিয়ে থাকে। কারণ, এখানে সে ধরনের শিশুর শিক্ষা ও চিকিৎসা সুবিধা নেই বললেই চলে। শিক্ষা সুবিধা যেসব প্রতিষ্ঠানে আছে, সেখানে শিশুদের নিয়ে আসা গ্রামাঞ্চলের মানুষের পক্ষে সম্ভব হয় না। অথচ অটিস্টিক শিশুদের যথাযথ শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারলে তারা নিজেদের চলাফেরার মতো অতি জরুরি কাজগুলো বহুলাংশেই রপ্ত করতে পারে। দেখা গেছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অটিস্টিক শিশুরা যদি যথার্থ প্রশিক্ষণ পায়, তাহলে তারা সংগীত ও শিল্পকলার মতো বিষয়ে সাফল্য লাভ করতে পারে। আমাদের এখানে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের ঘাটতি কাটিয়ে তোলার জন্য সাধারণ স্কুলগুলোয় মনোবিদ শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে করেও অটিস্টিক শিশুরা সুবিধা ভোগ করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন বহুলাংশেই সাধারণ স্কুলে শিক্ষার সুযোগ পেলে অটিস্টিক শিশুদের মেধা বিকাশলাভ করতে পারে বেশি। শুধু তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান ও মূল্যায়ন করতে হবে আলাদাভাবে। তবে আমাদের মতো দেশে সবার আগে প্রয়োজন জনসচেতনতা। এ সমস্যা সমাধানে সরকারি সহযোগিতা সম্প্রসারণের বিকল্প নেই।


No comments

Powered by Blogger.