বাংলাদেশকে স্বার্থ বুঝে নিতে হবে-নৌ-ট্রানজিট

বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতীয় পণ্য চলাচলের বিষয়টি নৌ, সড়ক ও রেলপথে একসঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে। বহু আগে থেকেই ভারতকে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে নৌপথে বিনা শুল্কে পণ্য পরিবহনের সুবিধা দিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। কিন্তু শুধু নৌ-ট্রানজিট দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রয়োজন ও চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়নি। সেটা অবশ্য বাংলাদেশের সমস্যা নয়। বাংলাদেশ ভারতকে একধরনের একতরফা সুবিধা দিয়েছে বললে অত্যুক্তি হবে না।


এতকাল পর্যন্ত নৌ-প্রটোকলের আওতায় নদীপথের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বছরে সর্বশেষ সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা পেত বাংলাদেশ। ১৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত দুই দেশের যৌথ স্ট্যান্ডিং কমিটির শেষ দিনের বৈঠকের ফলাফল হিসেবে খবর ছাপা হয়েছে যে ‘মাশুল নয়’, নদীপথের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ হিসেবে ভারত বছরে ১০ কোটি টাকা দেবে। স্পষ্টতই এই শর্তের ফলে বাংলাদেশের রাজস্ব আদায় বাড়ার সুযোগ নেই। পালাটানা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ভারী যন্ত্রপাতি বহন করতে ভারত তার খরচে বাংলাদেশের রাস্তা কেটে ও নদী-নালা ভরাট করে অস্থায়ী পথ সৃষ্টি করেছিল। এরও ব্যয় ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ ভারত জুগিয়েছিল। কিন্তু সেটা ছিল ভারতের, বিশেষ করে ত্রিপুরার বন্ধুপ্রতিম জনগণের প্রতি বাংলাদেশের শুভেচ্ছা। কিন্তু স্থায়ী বাণিজ্যের স্বার্থে নৌ-প্রটোকলের আওতায় পণ্য পরিবহনের বিষয়টি বিচ্ছিন্নভাবে বিবেচনায় নিয়ে কোনো শুল্ক আরোপ করার নীতিতে সরকারি কমিটির সমঝোতায় পৌঁছানোর বিষয় স্পষ্ট নয়।
ট্রানজিট-বিষয়ক সরকার গঠিত কোর কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান কেবল এককালীন কিছু অর্থ না নিয়ে পুরো বিষয়টি সামগ্রিকভাবে দেখার ওপর যেভাবে গুরুত্ব আরোপ করেছেন, তা বিবেচনার দাবি রাখে। এতে কোনো সন্দেহ নেই, ট্রানজিট ও ট্রানশিপমেন্টের বিষয়টি যেভাবে জনসমক্ষে আলোচনায় এসেছে, যে দৃষ্টিকোণ থেকে কোর কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাকে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। নৌ-প্রটোকলের আওতায় শুধু রক্ষণাবেক্ষণের খরচ দেওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশকে আর্থিকভাবে লাভবান করার দাবি থেকে অনেক দূরে। সরকারের কোর কমিটির অন্যতম সদস্য এম রহমত উল্লাহ যথার্থই সর্বশেষ উদ্যোগকে ‘পরোক্ষ ট্রানজিট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান স্থল ট্রানজিটে কোনো মাশুল নেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করলে বিতর্কের ঝড় ওঠে। এরপর অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু সরকারের সেই দৃষ্টিভঙ্গির কোনো বাস্তব পরিবর্তন আমরা জানতে পারি না। কোর কমিটি গঠন করা হলেও তার প্রতিবেদন প্রকাশে গোপনীয়তা বজায় রাখা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। ভারতীয় জনগণের সুবিধার বিষয়টি বাংলাদেশ অবশ্যই সহানুভূতি ও সৎ প্রতিবেশীসুলভ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিবেচনায় নেবে। কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের অন্ধনীতির কারণে থমকে দাঁড়াবে না। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে তারা জাতীয় অর্থনৈতিক স্বার্থ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে উদাসীন কিংবা শৈথিল্য প্রদর্শন করবে। ট্রানজিট-সুবিধা প্রদানের প্রশ্নে উভয় প্রতিবেশীকে পরস্পরের জন্য সমরূপে লাভজনক হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। নৌ-প্রটোকল নবায়ন করে বিনা শুল্কে পরোক্ষ ট্রানজিট আদায় করে নেওয়ার ভারতীয় মহলের আকাঙ্ক্ষা তাই আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

No comments

Powered by Blogger.