পবিত্র কোরআনের আলো-তাওরাত ও ইনজিলে আল্লাহর নির্দেশিত বিচার-ফয়সালার বিধিবিধান রয়েছে

৪৫. ওয়া কাতাবনা 'আলাইহিম ফীহা আন্নান্ নাফছা বিন্নাফছি ওয়াল'আইনা বিল'আইনি ওয়ালআনফা বিলআনফি ওয়ালউযুনা বিলউযুনি ওয়াচ্ছিন্না বিচ্ছিনি্ন ওয়ালজুরূহা কি্বসা-সুন; ফামান তাসাদ্দাক্বা বিহী ফাহুয়া কাফ্ফা-রাতুন লাহু; ওয়া মান লামইয়াহ্কুম বিমা- আনযালাল্লাহু ফাউলা-য়িকা হুমুয্ যা-লিমূন।


৪৬. ওয়া ক্বাফ্ফাইনা 'আলা আ-ছারিহিম বিঈছাব্নি মারইয়ামা মুসাদ্দিক্বাল লিমা বাইনা ইয়াদাইহি মিনাত্তাওরাতি; ওয়া আ-তাইনা-হুল ইনজীলা ফীহি হুদান ওয়া নূরুন ওয়া মুসাদ্দিক্বান লিমা বাইনা ইয়াদাইহি মিনাত্তাওরাতি ওয়া হুদান ওয়া মাওঈযাতান লিলমুত্তাক্বীন।
৪৭. ওয়ালইয়াহ্কুম আহ্লুল ইনজীলি বিমা আনযালাল্লা-হু ফীহি; ওয়া মান লাম ইয়াহ্কুম বিমা আনযালাল্লা-হু ফাউলা-য়িকা হুমুল ফা-ছিক্বূন।
[সুরা : আল মায়েদা, আয়াত : ৪৫-৪৭]
অনুবাদ : ৪৫. সেখানে (তাওরাতে) আমি তাদের জন্য বিধান নাজিল করেছিলাম, জানের বদলে জান, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত। অনুরূপভাবে অন্যান্য জখমের ক্ষেত্রেও একই রকম দণ্ড। যদি বিচারপ্রার্থী কেউ এই দণ্ড মাফ করে দিতে চায়, তাহলে তা নিজের জন্য কাফ্ফারা হিসেবে গণ্য হবে। আর যারা আল্লাহর নাজিল করা বিধান অনুযায়ী বিচার-ফয়সালা করে না, তারাই জালিম।
৪৬. এই ধারাবাহিকতায় এরপর আমি মরিয়মপুত্র ঈসাকে পাঠিয়েছি। তিনি তো সত্যায়ন করেছিলেন তাঁর সামনে তাওরাতের যা কিছু ছিল, আর আমি তাঁকে নতুন করে ইনজিল দান করেছিলাম। তাতে ছিল পথনির্দেশ এবং জ্ঞানের আলো। তখন তাওরাতের যা কিছু তাঁর কাছে ছিল তার সত্যায়নকারী তো তিনি ছিলেনই। তাতে দায়িত্বনিষ্ঠ লোকদের জন্য পথনির্দেশ ও উপদেশ ছিল।
৪৭. ইনজিলের অনুসারীদের উচিত ছিল এর ভেতর আল্লাহ তায়ালা যা কিছু নাজিল করেছেন এর ভিত্তিতে বিচার-ফয়সালা করা। যারা আল্লাহর নাজিল করা আইনের ভিত্তিতে বিচার করে না, তারাই হচ্ছে ফাসেক।
ব্যাখ্যা : তাওরাত ও ইনজিল কিতাবে অপরাধকর্মের বিচার-ফয়সালার ব্যাপারে বিস্তারিত বিধিবিধান ছিল। এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা কোরআনেও এসব বিধিবিধান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। প্রাচীনকালে মানবজাতির জন্য অপরাধের শাস্তি হিসেবে নির্ধারিত শাস্তিগুলোর বিধান ছিল এ রকম_হত্যার শাস্তি হত্যা, চোখের বদলে চোখ, কানের বদলে কান, অনুরূপভাবে অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বদলেও অনুরূপ বিধান। তবে হত্যাকাণ্ডের অনেক প্রকারভেদ আছে, বিচারের বেলায় সেগুলো বিবেচনায় নিতে হবে। তাওরাত ও ইনজিলে সে ব্যাপারে বিস্তারিত ব্যাখ্যা ছিল। অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করাকে প্রকৃত হত্যাকাণ্ড বোঝায়। বিচারের মাধ্যমে প্রাণদণ্ড কার্যকর করা হত্যা নয়। ভুলবশত বা অনিচ্ছাকৃত হত্যা প্রকৃত হত্যা নয় বরং এটা দুর্ঘটনা। এরূপ হত্যার শাস্তি কেসাস বা প্রতিশোধ নয়; বরং দিয়ত বা জরিমানা। হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে আশরাফ-আতরাফ নির্বিশেষে যাকেই হত্যা করুক না কেন, খুনের শাস্তি কেসাস বা প্রতিবিধান_এটাই সাব্যস্ত। প্রাচীনকালে পুত্র, কন্যা ও কৃতদাসের বেলায় কোনো কেসাস ছিল না। ইসলামও এটাই সমর্থন করেছিল। কিন্তু আধুনিককালে নিজের সন্তান ও কৃতদাস-দাসীর বেলায় কেসাস প্রযোজ্য। ভুলবশত হত্যার ক্ষতিপূরণ সম্পর্কে নিহত ব্যক্তির অভিভাবক বা আহত ব্যক্তি নিজে যদি অভিযুক্তকে ক্ষমা করে দেয়, তবে তা গ্রহণযোগ্য হবে। আর এটা বাদীর নিজের দিক থেকে গুনাহ-খাতার কাফ্ফারা হিসেবেও গণ্য হবে। এ আয়াতের মর্ম অনুযায়ী বোঝা যায়, যেসব জখম বা অঙ্গচ্ছেদে সমতুল্য বদলা গ্রহণ সম্ভব নয়, সেখানে ন্যায়বিচারক বা প্রচলিত বিচারব্যবস্থার বিবেচনা অনুযায়ী মীমাংসা হবে। প্রাচীনকালে জেল বা সংশোধনের চেষ্টামূলক দণ্ড প্রদানের ব্যবস্থা ছিল না অথবা অপ্রতুল ছিল। এ কারণে সব দণ্ডই ছিল বদলা গ্রহণমূলক। আধুনিককালের দণ্ড ব্যবস্থা মর্মগতভাবে কোরআনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এমন বলা যায় না।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.