ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ-জীবনরক্ষার আয়োজন সুলভ হোক

চার দশকে বাংলাদেশে ওষুধ শিল্পের উল্লেখযোগ্য বিকাশ ঘটেছে। রোগ নিরাময়ের এ অপরিহার্য উপকরণের চাহিদার ৯৪ শতাংশ দেশের কোম্পানিগুলোই উৎপাদন করে এবং এর বাজার ছয় হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। জীবন রক্ষাকারী অনেক ওষুধও দেশে উৎপাদন হয় এবং চিকিৎসকরা তার ওপর ভরসা রাখছেন।


বহির্বিশ্বেও বাংলাদেশের ওষুধের চাহিদা সৃষ্টি হচ্ছে। এসব উৎসাহব্যঞ্জক চিত্রের পাশাপাশি উদ্বেগের খবর রয়েছে মঙ্গলবারের সমকালে। 'ওষুধের দাম নিয়ে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা হচ্ছে' শিরোনামের খবরে বলা হয়, যে ওষুধ লাভসহ ৬-৭ টাকায় বিক্রি করা যায়, তা ক্রেতাকে ১৪-১৫ টাকায় কিনতে হয়। সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ্ চৌধুরী। যে ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ-১৯৮২ বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পকে আজকের গর্বের অবস্থানে নিয়ে এসেছে তা প্রণয়নে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। বলা যায়, এর সুবাদেই ওষুধ কোম্পানিগুলোর বেশিরভাগ ভালো ব্যবসা করছে। আধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে এ দাম আরও কমিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তু বাস্তবে এটা ঘটছে না। এ জন্য সংশ্লিষ্ট মহল দায়ী করছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠিত ওষুধ কোম্পানি এবং একই সঙ্গে চিকিৎসকদের একটি অংশকে। চিকিৎসকরা কেন এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবেন, এ প্রশ্ন সঙ্গত। দামি ওষুধ এবং এমনকি অপ্রয়োজনীয় ওষুধ লেখার প্রবণতা রয়েছে অনেক চিকিৎসকের_ এ অভিযোগ অমূলক বলে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। এ জন্য হয়তো কোম্পানিগুলো কিছু আনুকূল্য বিতরণ করে। কিন্তু বেশি লাভ তুলে নেয় সংশ্লিষ্ট কয়েকটি কোম্পানি। আর সরকারের এ ক্ষেত্রে কিছুই লাভ থাকে না। যে কোনো সরকারেরই ঘোষিত নীতি থাকে জনস্বার্থ রক্ষা। সচ্ছল ও অসচ্ছল সব পরিবারেই নিয়মিত ওষুধ প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশে বেশিরভাগ পরিবার দরিদ্র কিংবা নিম্নবিত্ত। রোগ-ব্যাধি তাদের জীবনে সহজে হানা দেয়। চড়া দামের কারণে তারা যদি ওষুধ কিনতে ব্যর্থ হয়, এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কিছু হতে পারে না। আমরা আশা করব, সরকার দ্রুত এ বিষয়টির প্রতি মনোযোগ দেবে। এ ক্ষেত্রে প্রথম করণীয় হচ্ছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রণীত ৩৫০টি অপরিহার্য ওষুধের মূল্য বেঁধে দেওয়া। একই গোত্রের ওষুধ যে কোম্পানিই উৎপাদন করুক, তার দামও দেশের সর্বত্র এক হওয়া চাই। বাজারে চাল বা চিনি কিংবা ভোজ্যতেলের দামে সামান্যই হেরফের থাকে। তাহলে ওষুধের দাম কোম্পানিভেদে কেন পার্থক্য হবে? রোগ-ব্যাধি নিরাময়ের ওষুধের মান ভিন্নতা বলেই দামের পার্থক্য_ এটা বলার কোনো সুযোগ নেই। মান নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার। চিকিৎসকরা কোম্পানির ব্যবসার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে অপ্রয়োজনীয় ওষুধ লিখে দেন কি-না কিংবা তাদের প্রেসক্রিপশনে ভুলভ্রান্তি থাকে কি-না তারও পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকা দরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং চিকিৎসকদের সংগঠন মিলিতভাবেই এ দায়িত্ব পালন করতে পারে। আমরা চাই ওষুধ শিল্পের বিকাশের ধারা অব্যাহত থাকুক এবং তাতে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবার তরফে মিলুক পূর্ণ সহায়তা, কিন্তু একই সঙ্গে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণ ভোগ করুক এর সুফল। অপেক্ষাকৃত কম দামে ওষুধ বাজারজাত করার সুযোগ থাকলে জনসাধারণ কেন তার সুফল ভোগ করবে না?

No comments

Powered by Blogger.