মংলা বন্দর-লাভের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে

মংলা বন্দর প্রায় এক দশক পর ইতিবাচকভাবে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। ২৬ জুলাই 'আট বছর পর লাভে ফিরল মংলা বন্দর' শিরোনামে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যে তথ্যচিত্র ফুটে উঠেছে তা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই সমুদ্রবন্দরটি লোকসানের বোঝা ঝেড়ে ফেলে বিদায়ী অর্থবছরে প্রায় ১০ কোটি টাকা লাভ করেছে।


দীর্ঘদিন বন্দরটি স্থবির ছিল। কিন্তু বিলম্বে হলেও বন্দরটিকে আধুনিকায়নের নানামুখী উদ্যোগ ও প্রকল্প সিংহভাগ ক্ষেত্রে সফলভাবে বাস্তবায়নের ফলে এর ইতিবাচক প্রভাব লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে। অত্যন্ত আশাপ্রদ সংবাদ যে, এই বন্দরে দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ ভেড়ার সংখ্যাও বেড়েছে। আমদানি-রপ্তানি বেড়েছে। আশা করা যাচ্ছে, বন্দরের উন্নয়নে গৃহীত সব পদক্ষেপ পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হলে রাজস্ব আয় আরো বাড়ার পাশাপাশি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নের দ্বারও আরো প্রশস্ত হবে।
১৯৫০ সালের ১১ ডিসেম্বর আজকের মংলা বন্দর 'চালনা পোর্ট' নামে যাত্রা শুরু করেছিল। ১৯৫৪ সালে বন্দর ব্যবস্থাপনা সরিয়ে আনা হয় বর্তমান অবস্থানে নাব্যতা সংকটের কারণে। পশুর ও মংলা নদীর মোহনায় ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বন্দরটি কর্মচঞ্চল থাকলেও এরপর বিবর্ণ চিত্র ধারণ করে। এর পেছনে মুখ্যত দায়ী ছিল অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অনিয়ম, সংশ্লিষ্ট লোকজনের স্বেচ্ছাচারিতা এবং ফিরে ফিরে শ্রমিক অসন্তোষের বিষয়গুলো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা। বিগত সরকারগুলোর অদূরদর্শিতা, একচোখা নীতি এবং বন্দরের প্রতি উদাসীনতাও এর জন্য কম দায়ী ছিল না। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে বন্দরটি বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। বিলম্বে হলেও সেই বিবর্ণ দশা কাটিয়ে মংলার প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়া অনেকটাই সম্ভব হয়েছে। বন্দরের উন্নয়নে এখনো অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে বেশ কিছু জরুরি কাজ। আমরা মনে করি খুব দ্রুততার সঙ্গে কাজগুলো সম্পন্ন করা দরকার।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, দায়বদ্ধতা, যথাযথ কর্মতৎপরতা যেকোনো ক্ষেত্রে কতটা অপরিহার্য, মংলা এরই একটি দৃষ্টান্ত। বন্দরের আয়ের খাতগুলোর পথ মসৃণ করার পাশাপাশি ব্যবস্থাপনাগত সব রকম ত্রুটি দূর করতে হবে। সার্বিক ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের নজরদারি আরো কঠোর করতে হবে। অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ নাব্যতা বজায় রাখার মতো জরুরি বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে। একই সঙ্গে আমদানি-রপ্তানিকারকদের পূর্ণ সহযোগিতার ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা ও ব্যর্থতার চিত্রগুলো সামনে রেখেই মংলা বন্দরকে অধিকতর গতিশীল করতে নতুন নতুন কর্মকৌশল গ্রহণ করে দূরদর্শী পরিকল্পনার ভিত্তিতে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলেই কেবল লাভের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে এবং উত্তরোত্তর বন্দরচিত্র উজ্জ্বল হবে। জাতীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রেও পড়বে এর শুভ ছায়া।

No comments

Powered by Blogger.