প্রশাসনে ঢালাও পদোন্নতি-দক্ষতা বাড়লেই কেবল মিলবে বাহবা

সরকারি প্রশাসনে অফিসার পদে যোগদানের পর ধাপে ধাপে পদোন্নতি পেয়ে শীর্ষ পর্যায়ে পেঁৗছে যাওয়া কি অধিকার, নাকি এ পর্যায়ে যেতে হলে যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতার বিষয়ে বারবার পরীক্ষা দিয়ে যেতে হবে? এ নিয়ে বিতর্ক বরাবরই ছিল এবং রয়েছে_ কখনও তা জোরালো হয়, কখনওবা চলতে থাকে রুটিনমাফিক। সম্প্রতি প্রশাসনে এক সঙ্গে প্রায় সাড়ে ছয়শ' কর্মকর্তার পদোন্নতির পর এ বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।


পদোন্নতি যারা পেয়েছেন তারা তুষ্ট তাতে সন্দেহ নেই। পরিবারে পরিবারে চলছে আনন্দ। তবে হতাশাও রয়েছে_ অনেক আগে তৈরি হওয়া জট সময়মতো না খোলায় দেশ তাদের সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্ভবত পদোন্নতি পেলেও উপযুক্ত কর্মে নিযুক্ত হওয়ার বিষয়ে চরম অনিশ্চয়তা। পদোন্নতি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আরেকটি ঘোষণা প্রচার করে_ যিনি যেখানে যে দায়িত্বে রয়েছেন, সেখানেই আপাতত থাকবেন। এ কারণে যুগ্ম সচিব হয়েও কয়েকজন জেলা প্রশাসককে উপসচিব পদমর্যাদার দায়িত্বে থেকে যেতে হচ্ছে। সোমবার সমকালে 'পদ নেই বেতন আছে, প্রশাসনে জটিলতা' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয় : 'বর্তমানে অতিরিক্ত সচিবের মঞ্জুরিকৃত পদ রয়েছে ১১০টি, কিন্তু পদোন্নতির পর অতিরিক্ত সচিব রয়েছেন ২৬৪ জন। একইভাবে ৩৫৫ পদের বিপরীতে যুগ্ম সচিব রয়েছেন ৬৪০ জন এবং এক হাজার ২৮০টি উপসচিবের পদের বিপরীতে রয়েছেন এক হাজার ৬৪৬ জন।' কিছুদিন আগে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরির মেয়াদের বয়স দুই বছর বাড়ানো হয়েছে। এ কারণে বিভিন্ন পদ থেকে অবসরে যাওয়া বিলম্বিত হবে। নতুন যারা পদোন্নতি পেলেন তারা বাড়তি বেতন পাবেন, যানবাহন এবং অন্যান্য সুবিধাও মিলবে, কিন্তু কর্মজীবনের মূল যে স্বপ্ন ও সন্তুষ্টি_ গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দায়িত্ব পালন, সে ক্ষেত্রে অনেকের অপূর্ণতা থেকে যেতে পারে। আশা করব যে, পদোন্নতি যারা দিয়েছেন অর্থাৎ সরকার বিষয়টির যথাযথ সুরাহা করার প্রতি মনোযোগী হবেন। বিশেষ করে দক্ষ ও যোগ্যরা যেন কোনোভাবেই বঞ্চিত না হন, সেটা নিশ্চিত করা চাই। এমনটি ঘটলে তাদের যা ক্ষতি, দেশের ক্ষতি অনেক বেশি। 'উচ্চ পদগুলোতে অনেক বেশি কর্মকর্তা থাকায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে ধীরগতি দেখা দেয় এবং জটিলতা বাড়ে'_ সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খানের এ অভিমতও বিবেচনায় নিতে হবে। তিনি দীর্ঘ সময় প্রশাসনে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং তার মন্তব্য অভিজ্ঞতাপ্রসূত সে বিষয়ে কারও সন্দেহের অবকাশ নেই। বাংলাদেশের প্রশাসনের দক্ষতা ও সক্ষমতা নিয়ে নানা সংশয় বিভিন্ন মহলের রয়েছে। প্রশাসনের পদস্থ ব্যক্তিদের সম্পর্কে 'আমলা' শব্দটি ব্যবহার হয় এবং প্রায়শই তাতে প্রকাশ পায় নেতিবাচক মনোভাব। জনমুখী প্রশাসনের প্রত্যাশা সর্বমহলের এবং এর প্রতি সম্মান জানিয়ে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে 'জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়'। কিন্তু প্রশাসন জনতুষ্টি বিধানে কতটা সক্ষম, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েই গেছে। নিজেদের দক্ষতা ক্রমাগত বাড়িয়ে চলা এবং অনিয়ম-দুর্নীতির জাল ছিন্ন করায় অনেকের আন্তরিকতাও প্রশ্নবিদ্ধ। মঞ্জুরিকৃত পদের তুলনায় অনেক বেশিসংখ্যক ব্যক্তিকে পদোন্নতি প্রদানের পরও এ ক্ষেত্রে লক্ষণীয় উন্নতি ঘটবে, এমন আশা করায় অনেকের কিন্তু কুণ্ঠাবোধ হতেই পারে।
 

No comments

Powered by Blogger.