হতাশা থেকে সামাজিক অবক্ষয় by ড. মাহফুজা খানম

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির পেছনে যেমন মনস্তাত্তি্বক কারণ কাজ করতে পারে, তেমনি আবার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিও মানুষের মনে প্রভাব ফেলতে পারে। প্রশ্ন আসতে পারে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয় কি কারণে? সামাজিক ও মনস্তাত্তি্বক কারণেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থির হয়ে উঠতে পারে।


ধরুন, হতাশার কথা। হতাশা থেকে মানুষের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু আচরণ আমরা লক্ষ্য করি। আর এই হতাশা সৃষ্টি হওয়ার পেছনে যেসব কারণ কাজ করে, সেগুলোর কি অভাব আছে আমাদের সমাজে? রাজনৈতিক কারণ, প্রশাসনিক কারণ, সামাজিক কারণ, ব্যক্তিগত কারণসহ অনেক কারণেই হতাশা সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু যে মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে যুক্ত হয়, তখন তার প্রভাব হয় খারাপ। বেকারত্ব আমাদের যুব সমাজের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একজন যুবক যে সময় আয় করে নিজের ও পরিবারের হাল ধরবে, সে সময় যদি তাকে অভিভাবকের ওপর নির্ভর করতে হয়, তার নিজস্ব অধিকাংশ চাহিদা পূরণে যখন সে ব্যর্থ হয়, তখন তার মধ্যে মানসিক পরিবর্তন আসতেই পারে। এই পরিবর্তন তাকে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু কাজের দিকেও ধাবিত করতে পারে। দ্রব্যমূল্য মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এর প্রভাব আমাদের হতাশাগ্রস্ত করছে। দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধিজনিত কারণে যে হতাশা সৃষ্টি হয়, তা শুধু যুবকদেরই নয়, সব বয়সের মানুষকেই আক্রান্ত করতে পারে। হতাশা যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন মানুষের মধ্যে আইন না মানার মানসিকতা তৈরি হতে পারে।
আরেকটা বিষয় হচ্ছে মানুষের মধ্যে কিন্তু অপরাধ করার প্রবণতা প্রত্যেকেরই থাকে। এটা মানুষকে দমন করতে হয়। এটাও প্রতিটি মানুষই কমবেশি করে। অপরাধ-প্রবণতা দমনের ক্ষমতা তৈরি হয় মানুষের পরিবেশ, শিক্ষার মাধ্যমে। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে, সামাজিক অবক্ষয়জনিত কারণেও এই প্রবণতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। নৈতিক অবক্ষয় আমাদের সমাজের বড় সমস্যা। আইনের শাসনের ব্যত্যয় ঘটলে এ প্রবণতা বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হয়।
ফ্রয়েডের একটা কথা এখানে বলা যায়। তাঁর মতে, মানুষ যখন জন্ম নেয় তখন তার মধ্যে সমাজ গ্রহণ করে না এ রকম কিছু ধারণাও জন্ম নেয়। মানুষ এগুলোকে প্রতিনিয়ত চাপা দেয়। কিন্তু সুযোগ পেলেই এগুলো বেরিয়ে আসে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হলে সেই সুযোগগুলো তৈরি হয়।
প্রশ্ন হচ্ছে, মানুষের মধ্যে এই প্রবণতা যাতে জন্ম না নেয়, সেই চেষ্টা করা হবে কিভাবে? মানুষের মধ্যে হতাশা তৈরি হতে পারে যেসব কারণে সেগুলো বন্ধ করতে হবে। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। নৈতিক অবক্ষয় রোধ করতে হবে। আইনের প্রয়োগ যথাযথ হতে হবে। ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। ক্ষমতার অপব্যবহার হলে এবং আইনি যথাযথ প্রয়োগ না হলে মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতাজনিত আতঙ্ক সৃষ্টি হয়, যা তাকে আইন না মানতে প্ররোচিত করে।

No comments

Powered by Blogger.