ভেজাল ওষুধ নাকি মানুষ হত্যা-জরুরি ভিত্তিতে এটি মোকাবিলা করতে হবে

মুমূর্ষু রোগী বাঁচার আকুতি নিয়ে হাসপাতালে যান, ওষুধ সেবন করেন। কিন্তু সেই ওষুধ যদি ভেজাল হয়, তাহলে কী হবে? মৃত্যুটাই কেবল ত্বরান্বিত হবে। সম্প্রতি পাকিস্তানে শতাধিক রোগী মারা গেছেন ভেজাল ও বিষাক্ত ওষুধ সেবনের কারণে। ভারতেও এমন ঘটনা ঘটছে। অথচ এ দুটি দেশ থেকে আকাশ, জল ও স্থলপথে প্রচুর ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ আসছে আমাদের দেশে। বাজারে বিক্রিও হচ্ছে দেদার।
আর শুধু পাচার হয়ে আসা নয়, আমাদের দেশেও প্রচুর ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ তৈরি হচ্ছে। ২৬৭টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ৪০টির ওষুধ মানসম্মত বলে জানা গেছে। বাকিগুলোর ওষুধ মানসম্মত না হওয়ায় রোগ সারানোর ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না। আবার ভেজাল ওষুধও তৈরি হয় প্রচুর। ইটের গুঁড়ার সঙ্গে নানা ধরনের কেমিক্যাল মিশিয়ে বানানো হয় ভেজাল ওষুধ। বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে এমন কিছু ভেজালকারী প্রতিষ্ঠান ধরা পড়েছে, যেগুলো ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, সিরাপসহ ৮০ থেকে ৯০ ধরনের ওষুধ তৈরি করত। অথচ অধিক লাভজনক হওয়ায় দোকানগুলোতে এসব ওষুধই বেশি বিক্রি করতে দেখা যায়, বিশেষ করে গ্রামেগঞ্জে। এর পরিণতি কী হচ্ছে? বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, ইদানীং হাসপাতালেও রোগীমৃত্যুর হার আশঙ্কাজনক বেড়ে গেছে। অনেক সময়ই দেখা যায়, ওষুধে কাজ হয় না, তখন বারবার ওষুধ বদলাতে হয়। কিন্তু ভেজাল ওষুধের ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া তো দেহে ঠিকই হয় এবং রোগীর জন্য তা হয়ে দাঁড়ায় প্রাণঘাতী।
আমরা নিশ্চয়ই ভুলে যাইনি ১৯৯২ ও ২০০৯ সালের বিয়োগান্ত ঘটনাগুলোর কথা। ১৯৯২ সালে বিষাক্ত প্যারাসিটামল খেয়ে কেবল শিশু হাসপাতালেই তিন শতাধিক শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। ২০০৯ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রিড ফার্মাসহ তিনটি ওষুধ কম্পানির বিরুদ্ধে বিষাক্ত প্যারাসিটামল সিরাপ বাজারজাত করার অভিযোগ উঠেছিল। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, সেসব সিরাপ পান করে ২৭টি শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। ঘটনাগুলোর পরপর ওষুধ প্রশাসনের কিছু দৌড়ঝাঁপ দেখা গেলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব আবার থিতিয়ে যায়। ওষুধ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বললেই কর্মকর্তারা জানান, তাঁদের লোকবল নেই, আধুনিক গবেষণাগার নেই ইত্যাদি। তাই তারা সারা দেশের এত বড় ওষুধ বাজার পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। কিন্তু দুর্জনেরা বলে, ওষুধ প্রশাসনের লোকজনকে হাত না করে ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ বাজারজাত করা যায় না। আমরা কোনটাকে সত্য বলে ধরে নেব! শর্ষের মধ্যেই ভূত রয়ে গেছে। এ ওষুধ প্রশাসন দিয়ে কী হবে!
আমরা আশা করি, সরকার জনস্বাস্থ্য রক্ষার প্রয়োজনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে দ্রুত এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। কোনো অপরাধী যেন আইনের ফাঁকফোকর গলে পার পেয়ে না যায় সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা বাড়াতে হবে এবং ওষুধের দোকানগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। বছরের পর বছর মামলা ঝুলিয়ে না রেখে দ্রুত এসব অপরাধের বিচার সম্পন্ন এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি ঘৃণ্যতম এ অপরাধের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলাও আজ জরুরি হয়ে উঠেছে।

No comments

Powered by Blogger.