নিশ্চিহ্নপ্রায় ঐতিহাসিক স্থাপনা-সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হোক জরুরি ভিত্তিতে

বাংলাদেশে অনেক বড়মাপের বেশ কিছু মানুষ আমরা পেয়েছি। তাঁরা আমাদের ঐতিহ্য-চেতনায় দেদীপ্যমান। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্য আমাদের, এমন কিছু বড়মাপের মানুষের ভিটাবাড়িতে এখন গাছগাছালির বাথান! আজকের প্রজন্ম জানেই না এই বট-পাকুড়ের নিচে আমাদের কত বড় ইতিহাস লুকিয়ে আছে।


কবি জীবনানন্দ দাশ, বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, জ্যোতিঃপদার্থবিদ মেঘনাদ সাহা, বিপ্লবী সূর্য সেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কালজয়ী সংগীতজ্ঞ ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, শচীন দেব বর্মণসহ অনেক মহান ব্যক্তির জন্ম এই বাংলাদেশে। অবিভক্ত বাংলার এই মানুষদের বেশির ভাগই কর্মসূত্রে কলকাতায় কিংবা ভারতের অপরাপর স্থানে বসতি স্থাপন করেন। কিছুদিন আগে মহাস্থানগড়ের ঐতিহাসিক স্থাপনায় দখলদাররা বাড়ি তৈরি করে ইতিহাস ধ্বংস করার পাঁয়তারা করে। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি ও সচেতন মহল সোচ্চার হওয়ার পরও তাদের টনক নড়েনি। প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখানোর মতো তাদের শক্তির উৎস কী, এ নিয়েও প্রশ্ন আছে। দিনাজপুরের মাতাসাগরের কথা উল্লেখ করা যায়। সেই সাগর একসময় লিজ দেওয়া হয়। লিজ দেওয়া সম্পত্তি আবার বিক্রিও করে দেওয়া হয়। কুমিল্লা শহরের চর্থায় সংগীতজ্ঞ শচীন দেব বর্মণের বাড়ি। শহরের এই বাড়ি দখল করে রেখেছে স্বয়ং সরকার। তবে ভিটায় ঘুঘু চড়ানোর মতো প্রবাদ বাস্তবায়ন করা না হলেও সরকার সেখানে মুরগির খামার তৈরি করেছে। নরসিংদীর ভাই গিরিশচন্দ্র সেনের বাড়িরও একই হাল। বট-পাকুড় এমনভাবে বাসা বেঁধেছে সেখানে যে বাড়িটি যেকোনো সময় মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। একজন অমুসলিম ভাষাবিজ্ঞানী পবিত্র কোরআন শরিফ প্রথম বাংলায় অনুবাদ করে যে উপকার সাধন করেছেন তা দৃষ্টান্ত ও স্মরণযোগ্য হয়ে আছে। ভাই গিরিশচন্দ্রের প্রয়াণ দিবসে প্রতিবছর প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তখন নরসিংদীর জেলা প্রশাসককে তৎপর হতে দেখা যায়। এবারও তারই পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। অবিলম্বে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে বাড়িটি যথাযথ সংরক্ষণের বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমরা জেলা ও পুলিশ প্রশাসকের কাছে দাবি জানাচ্ছি। ইতিহাস-ঐতিহ্য ধ্বংসের এ প্রক্রিয়া বন্ধ করা জরুরি।
জনসচেতনতা তৈরি করতে পারলে এসব স্থাপনা ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব। পাবনায় সুচিত্রা সেনের বাড়ি সংরক্ষণে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে সত্যজিৎ রায়ের বাড়িও রক্ষা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব কাজে সরকারের পাশাপাশি এলাকাবাসীর সহযোগিতা প্রয়োজন। এলাকার মানুষ উদ্যোগ নিলে সরকারি সহযোগিতা পাওয়াও সহজ হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের এখানে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ নামের একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান আছে। তাদের কর্মকাণ্ড ও তৎপরতা প্রশ্নবিদ্ধ হলেও তারা কানে তুলা দিয়ে রেখেছে। সরকার যদি এই প্রতিষ্ঠানকে গতিশীল করে এবং ক্ষমতা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে পারে তাহলে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এসব স্থাপনা আমাদের সমৃদ্ধ ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.