নরসিংদীর মেয়র কামরুজ্জামান

নরসিংদী প্রতিনিধি: সন্ত্রাসীরা মেয়র লোকমান হোসেনকে হত্যা করে সবার কাছ থেকে কেড়ে নিলেও নরসিংদীবাসীর হৃদয় থেকে তার নাম মুছতে পারেনি। পৌর নির্বাচনে তারই ছোটভাই কামরুজ্জামান কামরুলকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে তাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছে নরসিংদীবাসী। পাশাপাশি তারা দাবি করলো প্রয়াত নেতার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির। জেলার   পৃষ্ঠা ১৭ কলাম ৪
দায়িত্বশীল ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুসহ জেলা আওয়ামী লীগের লোকমান বিরোধী নেতাদের সকল ষড়যন্ত্র ভেসে গেলে জনগণের ভালবাসায়। কামরুলের মাঝেই প্রয়াত মেয়র লোকমান হোসেনকেই খুঁজে নিয়েছে নরসিংদীবাসী।
নির্বাচিত হওয়ার পরই কামরুজ্জামান কামরুল এ বিজয়কে প্রয়াত মেয়র লোকমান হোসেনের প্রতি উৎসর্গ করেন। সব আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে দল থেকে সমর্থন দেয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। পাশপাশি নির্বাচন কমিশন, মিডিয়া, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সদস্য ও স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর নজরদারি করার জন্য ধন্যবাদ জানান।
পৌর নির্বাচনে কামরুজ্জামান কামরুল ২১ হাজার ৭৫৬ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। কাপ-পিরিচ প্রতীক নিয়ে কামরুল পেয়েছন ৩৫ হাজার ৫৬৯ ভোট। তার প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোন্তাজ উদ্দিন ভূঁইয়া আনারস প্রতীক নিয়ে পেয়েছে ১৩ হাজার ৮২৩ ভোট। জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে বাকি ৪ প্রার্থীর ।
দেশের প্রথম পৌরসভা নির্বাচন হিসেবে নরসিংদীর পৌর উপনির্বাচন প্রযুক্তি ব্যবহারে ইতিহাস গড়েছে। এরই সুবাদে মাত্র দেড় ঘণ্টার মধ্যেই বেসরকারিভাবে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে।
শহরের ভেলানগর এলাকার বাসিন্দা শাহজাহান  (৮০) বেলা ১টায়  ভেলানগর ভোট কেন্দ্রে বেড়িয়ে আসছেন। প্রবেশ ফটকেই দেখা মিলে নিহত মেয়র লোকমান হোসেনের ছোটভাই মেয়র প্রার্থী কামরুজ্জামান কামরুলের। কামরুলকে দেখে দু’হাত বাড়িয়ে দিতেই জড়িয়ে ধরেন তিনি। কাঁপতে কাঁপতে বলেন- বাবা কামরুল, তোমার মাঝে খুঁজে পাই আমাদের লোকমানকে। আমার একটা অনুরোধ তুমি লোকমানের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবা।
ওই বৃদ্ধ কামরুলের সঙ্গে থাকা প্রয়াত মেয়র লোকমান হোসেনের স্ত্রী তামান্না নুসরাত বুবলি মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন বুবলি। পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা ষাটোর্ধ্ব বানেছা বেগম কামরুলকে মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, তোমার চেহারার লগে লোকমানের অনেক মিল রয়েছে, তোমাকে দেখলে মনে হয়- এই বুঝি আমাদের লোকমান ফিরে এসেছে।
ব্রাহ্মন্দী কেন্দ্রের ভোট দিতে আসা মারুফ বলেন, নরসিংদীর উন্নয়নের নায়ক লোকমানের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতেই ভোট দিছি। নরসিংদীর সন্ত্রাস এবং মাদক বন্ধে লোকমানের ভাইয়ের কোন বিকল্প নেই।
বীরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিতে আসা নাছিমা বেগম বলেন, র‌্যাব-পুলিশ কড়াকড়ি ব্যবস্থা নেয়ার কারণে সুষ্ঠু ভোট হইছে, আমরা নিরাপদে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারছি।
একই কেন্দ্রের আজগর হোসেন বলেন- কামরুলকে আমি কোনদিন সামনা সামনি কখনও দেখি নাই, কিন্তু পোস্টারে ছবি দেইখ্যাই ভোট দিছি। ওরে দেখলে লোকমানের কথা বেশি মনে হইয়া যায়। বড় ভাল মানুষ ছিলেন। ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দিয়ে বেজায় খুশি বিলাসদী এলাকার নাহার সুলতানা। তিনি বলেন, এই পর্যন্ত যতবার ভোট দিয়েছি, দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোগান্তির শিকার হয়ে ভোট দিতে হয়েছে কিন্তু এবার এসে কোন লাইনে না দাঁড়িয়ে ভোট দিয়ে বাসায় ফিরছি। একই এলাকার আলেয়া খাতুন বলেন, ভোট কেন্দ্রে কোন গোলমাল হওয়ার সুযোগ নাই, ভিতরে ক্যামেরা ফিট কইরা রাখছে।
শ্রমিক এবং গরিব মানুষের বন্ধু হিসেবে নরসিংদীতে অধিক পরিচিত ছিল মেয়র লোকমান হোসেন। লোকমানের কথা মনে করতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন সাটিরপাড়া ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা মোয়াজ্জেম হোসেন (৬৫)। তিনি চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন, লোকমান যেমন শ্রমিকের ডাকে সাড়া দিতেন, তার ভাই কামরুলও আশা করি একই কাজ করবেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জি এম তালেব হোসেন বলেন- এ বিজয় কামরুলের নয়, এ বিজয় লোকমানের। মন্ত্রীর বিরোধী সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কামরুলকে সমর্থন দিয়ে প্রমাণ করেছেন, তিনি সোনা চিনতে ভুল করেননি। 
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভূঁইয়া সকালে ভোট দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হচ্ছে, ইনশাআল্লাহ বিজয়ী আমিই হবো। কিন্তু পরাজিত হওয়ার পর তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সদরের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম হীরু বলেন, দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রার্থীকে নরসিংদীবাসী বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছেন। এটা লোকমানের উন্নয়নের বিজয়, নরসিংদীবাসীর বিজয়। আগামীতে সব ভেদাভেদ ভুলে নরসিংদীর উন্নয়নের সবার কাজ করতে হবে।
বিজয়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নরসিংদীবাসীর রায় এটি। লোকমানের উন্নয়নকেই ভোট দিয়েছে পৌরবাসী। আমি প্রয়াত ভাইয়ের আদর্শ ও তার দেখানো উন্নয়নের পথে হাঁটতে চাই।

No comments

Powered by Blogger.