পবিত্র কোরআনের আলো-আল্লাহ মানুষকে তার সাধ্যের বেশি কঠিন দায়িত্ব অর্পণ করেন না

১. লাহুম্ মিন্ জাহান্নামা মিহা-দুন ওয়া মিন ফাওকি্বহিম গাওয়া-শিন ওয়া কাযা-লিকা নাজযিয্ যা-লিমীন। ৪২. ওয়াল্লাযীনা আ-মানূ ওয়া আ'মিলুস্ সা-লিহা-তি লা-নুকালি্লফু নাফছান ইল্লা উ'ছআ'হা উলা-য়িকা আসহা-বুল জান্নাতি হুম ফীহা খা-লিদূন।


৪৩. ওয়া নাযা'না মা ফী সুদূরিহিম্ মিন্ গালি্লন তাজরী মিন তাহতিহিমুল আনহা-র; ওয়াক্বা-লুল হামদু লিল্লা-হিল্লাযী হাদা-না লিহা-যা; ওয়া মা কুন্না লিনাহ্তাদিইয়া লাও লা আন হাদা-নাল্লা-হ; লাক্বাদ জা-আত রুছুলু রাবি্বনা বিলহাক্কি; ওয়া নূদূ আন তিলকুমুল জান্নাতু ঊরিছতুমূহা বিমা কুনতুম তা'মালূন।
৪৪. ওয়া না-দা আস্হা-বুল জান্নাতি আস্হা-বান্না-রি আন ক্বাদ ওয়াজাদনা মা ওয়াআ'দানা রাব্বা-না হাক্কান ফাহাল ওয়াজাত্তুম্ মা ওয়াআ'দা রাব্বুকুম হাক্কা; ক্বা-লূ নাআ'ম্; ফাআয্যানা মুআয্যিনুম্ বাইনাহুম আন লা'নাতুল্লা-হি আ'লায্ যা-লিমীন।
[সুরা : আল-আ'রাফ, আয়াত : ৪১-৪৪]

অনুবাদ
৪১. তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের বিছানা এবং তাদের মাথার ওপর জাহান্নামের আচ্ছাদন। এভাবেই আমি জালেমদের কৃতকর্মের প্রতিফল দিয়ে থাকি।
৪২. আর যারা ইমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে_আমি কারো প্রতি তার সাধ্যের বেশি দায়িত্ব অর্পণ করি না_তারাই হবে জান্নাতের অধিকারী; তারা সেখানে চিরকাল থাকবে।
৪৩. আর তাদের মনের ভেতরে কোনো কষ্ট থাকলে তাও নিরসন করে দেব। তাদের বাসস্থানের তলদেশ দিয়ে নদী প্রবহমান থাকবে আর তারা বলবে, সব প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের এখানে নিয়ে এসেছেন। আল্লাহ আমাদের নিয়ে না এলে আমরা কখনোই এখানে পেঁৗছাতে পারতাম না। আমাদের প্রতিপালকের রাসুলরা আমাদের কাছে সম্পূর্ণ সত্য বার্তাই নিয়ে এসেছিলেন। আর তাদের ডেকে বলা হবে, এ হলো জান্নাত, তোমরা যা অর্জন করেছ এরই ভিত্তিতে তোমাদের এর উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
৪৪. আর জান্নাতবাসীরা জাহান্নামীদের ডেকে বলবে, আমাদের প্রতিপালক আমাদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা তো আমরা সম্পূর্ণ সত্য পেয়েছি। তোমরা কী বলো? তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তাও কি সত্য পেয়েছ? তারা উত্তরে বলবে, হ্যাঁ, তা-ই তো সত্য হয়েছে। এমন সময় তাদের মাঝখানে এক ঘোষক ঘোষণা করবে, আল্লাহর অভিশাপ জালেমদের ওপর।

ব্যাখ্যা
৪১ নম্বর আয়াতে জাহান্নামের শাস্তির ভয়াবহতার কথা বর্ণনা করা হয়েছে, সেই সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, অত্যাচারী ও অবাধ্যদের কৃতকর্মের পরিণতি হিসেবেই এই জাহান্নাম তাদের জন্য প্রাপ্য হয়ে গেছে।
৪২ নম্বর আয়াতে সৎকর্মের উল্লেখের পাশাপাশি একটি অন্তর্বর্তী বাক্যে এ কথাও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে সৎকর্ম এমন কোনো কঠিন বিষয় নয়, যা মানুষের সাধ্যের বাইরে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, 'আমি মানুষকে এমন কোনো কাজের নির্দেশ দিই না, যা করার ক্ষমতা তাদের নেই।' তা ছাড়া এ কথার দ্বারা সেদিকেও ইশারা করা হয়ে থাকবে যে কেউ যদি তার সাধ্যানুযায়ী সৎকর্ম করার চেষ্টা করে এবং তার পরও কিছু ভুলত্রুটি হয়ে যায় অথবা সে কাজটি সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আল্লাহ তায়ালা অনুরূপ ত্রুটি ও ব্যর্থতার জন্য তাকে শাস্তি দেবেন না।
৪৩ নম্বর আয়াতে জান্নাত কেমন এবং এর কিছু তাৎপর্য ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে। জান্নাত এমন এক জগৎ, যেখানে মানুষের কোনো মনঃকষ্ট থাকবে না। ইহজীবনে তার যদি পারস্পরিক সম্পর্কজনিত কোনো মনঃকষ্ট থেকে থাকে, তাহলে জান্নাতে তা তিরোহিত হয়ে যাবে। জান্নাতিরা পরম আ@ি@@@ক শান্তি লাভ করবে।
৪৪ নম্বর আয়াতে জান্নাতবাসী ও জাহান্নামবাসীদের কিছু পারস্পরিক কথোপকথন বর্ণনা করা হয়েছে। এই কথোপকথন বর্ণনার মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানুষ যাতে উপলব্ধি করতে পারে যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল পরকাল সম্পর্কে যে বার্তা নিয়ে এসেছেন এবং যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সে প্রতিশ্রুতির সত্যতা তারা দেখতে পাবে। তখন তাদের আর কিছু করার থাকবে না। জান্নাতবাসীরা এই প্রতিশ্রুতির সত্যতা দেখে আনন্দিত হবে এবং জাহান্নামবাসীরা মর্মাহত হবে। সুতরাং মানুষের উচিত এখনই শিক্ষা গ্রহণ করা।

গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.