মিডিয়ায় ইসলামের দাওয়াত by জহির উদ্দিন বাবর

ধুনিক সভ্যতার বিকাশে মিডিয়ার অবদান সবচেয়ে বেশি। তথ্যের আদান-প্রদানের কারণেই বিশ্ব চলে এসেছে হাতের মুঠোয়। একজনের সঙ্গে অন্যের আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে উন্মোচিত হয়েছে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। নিজেদের মত-পথ, ভাব-ভাবনা, অনুভব-অনুভূতি অন্যের কাছে পেশ করার কার্যকরী মাধ্যম মিডিয়া। আধুনিক টেকনোলজি কাজে লাগিয়ে বর্তমান বিশ্বে অনেকেই নিজেদের ভাবনা ও মতাদর্শ প্রচার করে যাচ্ছেন।
তবে এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে ইসলামের দাওয়াত ও তাবলিগের ক্ষেত্রটি। অথচ তথ্যপ্রবাহের এ যুগে মিডিয়ার মাধ্যমে ইসলামের সৌন্দর্য ও আদর্শ বিশ্ববাসীর কাজে উপস্থাপন করা খুবই সহজ। পবিত্র কোরআনে দাওয়াতের মূলনীতি বর্ণনা করে বলা হয়েছে, 'তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের প্রতি আহ্বান কর হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সঙ্গে সদ্ভাবে বিতর্ক কর।' (সূরা নাহল, আয়াত-১২৫)
লক্ষণীয় বিষয় হলো, এখানে ইসলামের দাওয়াতকে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে সীমাবদ্ধ না রেখে ব্যাপক রাখা হয়েছে। এতে দাওয়াতের সব মাধ্যম ও উপকরণ অন্তর্ভুক্ত। এই আয়াত অবলম্বনে এ কথা বলা যায়, বর্তমান প্রযুক্তির যত ধরন হতে পারে সবকিছু ইসলামে দাওয়াতে ব্যবহার করা যুগের দাবি। সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী (রহ.) লিখেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যে যুগে যে পরিবেশে বড় হয়েছিলেন, সে যুগে যত ধরনের প্রচার পদ্ধতি ছিল তার সর্বোচ্চ প্রয়োগ তিনি করেছেন। তার নবুয়াতি দাওয়াতের প্রচারের ক্ষেত্রে সে যুগের সর্বোচ্চ প্রচার পদ্ধতি ছিল, কোনো বিষয়ে মানুষকে সতর্ক করতে হলে পাহাড়ে উঠে দাওয়াত দেওয়া। আর রাসুল (সা.) সাফা পাহাড়ে উঠে সে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াসের (রহ.) সঙ্গে সম্পৃক্ত এক ব্যক্তি কিছুটা লেখালেখির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ওই লোককে তিনি প্রথম দিকে লেখালেখি না করতে বলেছিলেন। কিন্তু পরে ওই ব্যক্তিকে তিনি বলেছিলেন, 'আমি কখনও এটা পছন্দ করতাম না যে, তাবলিগি কাজের ক্ষেত্রে কমবেশি লেখালেখি হোক এবং লেখনীর মাধ্যমে দাওয়াতি কাজ পরিচালিত হোক। বরং আমি তা বারণ করতাম। কিন্তু এখন বলছি, দাওয়াতের ক্ষেত্রে লেখালেখি করা যাবে এবং আপনি অধিকহারে লেখালেখি করুন।' তাবলিগের প্রাথমিক যুগে লেখালেখির আশ্রয় গ্রহণ না করার যুক্তি হিসেবে ইলিয়াস (রহ.) বলেন, প্রথমদিকে আমরা একেবারে অচেনা ও অপাঙ্ক্তেয় ছিলাম। তাই তখন প্রয়োজন ছিল, নিজেরা ঘোরাফেরা করে মানুষের মনে আগ্রহ সৃষ্টি করা এবং নিজেদের চাল-চলন ও কাজকর্মের মাধ্যমে আমাদের কথা বুঝানো। সে সময় যদি লেখনীর মাধ্যমে ব্যাপকভাবে দাওয়াত দেওয়া হতো তবে তারা পুরোপুরি না বুঝেই নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করত। কিন্তু এখন সে অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। আমাদের এ কাজ শেখার জন্য মানুষ নিজেরাই অনুসন্ধিৎসু হয়ে আমাদের কাছে আসছে। এ জন্য এখন লেখনীর মাধ্যমে দাওয়াত দেওয়ায় কোনো বাধা নেই।'
বর্তমান সময়ে তাবলিগ জামাতের মাধ্যমে সারা বিশ্বেই ইসলামের দাওয়াতের কাজ হচ্ছে। তাদের এই কার্যক্রমে মিডিয়া তেমন একটি গুরুত্ব পায় না। তবে এ কথা সত্য, তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম মিডিয়ায় ইতিবাচকভাবে তুলে ধরা হচ্ছে বলেই তাবলিগের প্রতি মানুষের ঝোঁক বাড়ছে। বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে সারাবিশ্বের মিডিয়ায় মাতামাতি হয়। মিডিয়ার কল্যাণেই বিশ্ব ইজতেমার দাওয়াতি বার্তা সহজেই মানুষের কাছে পেঁৗছে যাচ্ছে। তাবলিগ সংশ্লিষ্টরা মিডিয়াকে তেমন গুরুত্ব না দিলেও মিডিয়া ঠিকই তাদের কার্যক্রমকে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করছে। মিডিয়ার এ আনুকূল্য না পেলে তাবলিগের বিস্তৃতি ঘটানো কঠিন হতো। এখনকার সময়ে মিডিয়া কারও বিরাগভাজন হয়ে গেলে তার জন্য ভালো কাজ করাও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
বর্তমান যুগ যেহেতু মিডিয়ার সে জন্য ইসলামের দাওয়াত ও তাবলিগের ক্ষেত্রে এটি কাজে লাগানো জরুরি। ইন্টারনেট, ওয়েবসাইট, ই-মেইল, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাহায্যে ইসলামের সৌন্দর্য ও সৌরভ সহজেই পেঁৗছে দেওয়া যায় দুনিয়ার আনাচে-কানাচে। কারণ দাওয়াতের কর্মকৌশল নির্ধারণ হয় পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনা করে। ইসলাম চিরসত্য ও চিরসবুজ একটি ধর্ম। তাই ইসলামের প্রচার-প্রসারের দিকটিতে এ যুগের প্রেক্ষাপটটি সামনে রাখতেই হবে। না হলে ইসলাম প্রচারের প্রকৃত দায়িত্ব পালন না করার অপরাধে আমরা দণ্ডিত হবো।
zahirbabor@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.