আন্তরাষ্ট্র সংযোগ-ভারতের জন্য ট্রানশিপমেন্ট, নাকি ট্রানজিট? by মাহবুবুর রহমান

মাদের এই অঞ্চলে বাংলাদেশের রয়েছে অভিনব ভৌগোলিক অবস্থান। ব্যাপকতর আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে আমাদের এ অবস্থান সুদৃঢ় করা প্রয়োজন। এ জন্য চাই অবকাঠামো ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সুবিধা। বাংলাদেশ সরকার শুধু ভারত, নেপাল ও ভুটানের জন্য নয়, চীন ও মিয়ানমার এবং আরও দূরের দেশগুলোর জন্যও বহুমাত্রিক পরিবহন-সংযোগ গড়ে তুলতে সচেষ্ট রয়েছে। ব্যবসায়ী সমাজ সরকারের এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। তবে এর বাস্তবায়ন-প্রক্রিয়া নিয়ে কিছু সতর্কতা প্রয়োজন। এটা ঠিক যে, দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল ও উন্মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল। কিন্তু এখানকার দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বাণিজ্য খুবই কম—তাদের মোট বাণিজ্যের মাত্র পাঁচ শতাংশ। অথচ আসিয়ান দেশগুলোর আন্তবাণিজ্য তাদের মোট বাণিজ্যের ২৬ শতাংশ, নাফটায় ৫২ শতাংশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে ৫৮ শতাংশ।
বাংলাদেশ ও তার নিকট-প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সীমিত মাত্রার আঞ্চলিক বাণিজ্যের কারণে সংশ্লিষ্ট সব দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই অঞ্চলভিত্তিক অর্থনৈতিক বিকাশে তাদের সম্ভাবনা অনেকাংশে অব্যবহূত রয়ে গেছে। অথচ আজকের প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব অর্থনীতিতে পরিবহনখরচ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক হিসেবে বিবেচিত হয়। যেকোনো পর্যায়ে অর্থনৈতিক একীভূতকরণে সমন্বিত ও সুদক্ষ ভূতল পরিবহন (সড়ক ও রেল) নেটওয়ার্ক অপরিহার্য। দক্ষিণ এশিয়ার পরিবহনব্যবস্থা একীভূতকরণে অপূর্ণতা থাকায় এখানে ব্যবসা-বাণিজ্যে পরিবহনব্যয় অনেক বেশি, যা মোট মূল্যের ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে যা মাত্র আট শতাংশ।
২০১০ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত যুক্ত ইশতেহার অনুযায়ী ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সরাসরি সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ট্রানজিট প্রদানের সমঝোতা হয়।
তবে এই ট্রানজিট বাস্তবায়নের আগে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, আন্ত-আঞ্চলিক উন্নয়ন কৌশল নিবিড়ভাবে পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অভিন্ন নদ-নদীর পানি বণ্টন ও সমুদ্রসীমা এবং স্থল সীমান্ত চিহ্নিত করার সমস্যা ছাড়াও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু ইস্যু এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে। প্রতিবেশী দেশগুলোকে ট্রানজিটসুবিধা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার প্রক্রিয়ায় এসব অনিষ্পন্ন বিষয়ও বিবেচনায় নিতে হবে।
কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মহল মনে করে, গত সেপ্টেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় ট্রানজিট চুক্তি সই না হওয়া বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ হয়েছে। এতে করে সরকার পুরো বিষয়টি আবার পুনর্বিবেচনা করার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাবে এবং চুক্তির ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো পর্যালোচনা করতে পারবে।
ট্রানজিটসুবিধা ভারতের ‘সেভেন সিস্টার্স’ নামে পরিচিত উত্তর-পূর্ব সাতটি রাজ্যের জন্য অনেক বেশি সুবিধা বয়ে আনবে। এর ফলে পণ্য পরিবহনে দূরত্ব ও সময় প্রায় তিন ভাগের এক ভাগে নেমে আসবে এবং একই কারণে পরিবহনখরচও প্রচুর সাশ্রয় হবে। এ ব্যবস্থায় ভারতের উৎপাদনকারীরা তাদের পণ্যগুলো ওই রাজ্যগুলোতে অনেক কমমূল্যে বিক্রি করতে পারবে। কিন্তু বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা পূর্ব ভারতে তাদের ব্যবসা বাড়ানোর সুযোগ হারাবে।
বিভিন্ন সময় বলা হয়েছে, ভারতকে ট্রানজিটসুবিধা দিয়ে বাংলাদেশ ট্রানজিট ফি ও আনুষঙ্গিক মাশুল হিসেবে প্রতিবছর শত শত মিলিয়ন ডলার আয় করবে। কিন্তু সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ যদি ভারতকে ট্রানজিটসুবিধা দেয় তাহলে ৩০ বছরে মাত্র ২৮০ কোটি ডলারের মতো আয় আশা করতে পারে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য যে বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে তার তুলনায় এটা একেবারেই নগণ্য।
ট্রানজিটব্যবস্থায় পণ্য পরিবহনের জন্য বিদ্যমান অবকাঠামো সুবিধার উন্নয়ন ও নতুন সুবিধা গড়ে তুলতে বাংলাদেশকে প্রায় ৭০০ কোটি ডলার ব্যয় করতে হবে বলে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের আওতায় কোর কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এই অর্থ ব্যয়ের প্রধান খাতগুলো হবে সড়ক ও রেলপথ এবং চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের উন্নয়ন। রক্ষণাবেক্ষণ খাতেও প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হবে। এ ধরনের বিনিয়োগ থেকে বাংলাদেশ প্রথম পাঁচ বছরের প্রতিবছরে আনুমানিক মাত্র পাঁচ কোটি ডলার আয় করবে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে তা ১০০ কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে বলে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের প্রতিবেদনে প্রাক্কলন করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়ন তথা অধিক পরিমাণে পণ্য কেনার ক্ষমতাও বাড়তে হবে।
অবকাঠামো নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় কাজ শুরু হলে প্রকৃত মূলধন বিনিয়োগ প্রাথমিক হিসাবের চেয়েও বেশি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। পদ্মা সেতুর নির্মাণব্যয়ের দিকে তাকালে এটা স্পষ্ট হবে। ২০০৭ সালে একনেকের সভায় ব্যয় হিসাব করা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা (প্রায় ১৫০ কোটি ডলার)। কিন্তু চার বছর পর ২০১১ সালের জানুয়ারিতে ব্যয় হিসাব করা হয় প্রায় দ্বিগুণ—২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা (২৯৩ কোটি ডলার)। এটাও মনে রাখতে হবে, সেতুর নির্মাণকাজ এখনো শুরুই হয়নি!
সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় বিদ্যমান মহাসড়ক সম্প্রসারণ ও নতুন সড়ক নির্মাণই শুধু নয়, প্রকল্প এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত অনেক লোকের পুনর্বাসনেরও ব্যবস্থা করতে হবে। বহু কৃষি জমিও হারাতে হবে, যা ইতিমধ্যেই নতুন নতুন আবাসন, শিল্প স্থাপন ও অবকাঠামো উন্নয়নের কারণে সংকুচিত হয়ে আসছে। এ কারণে সরকারের উচিত হবে সার্বিক বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য কোনো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া। তাদের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পরই বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে পর্যালোচনা সাপেক্ষে কেবল ট্রানজিট বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
যখন থেকে বিশ্বব্যাপী দেশগুলোর সীমানার বাইরে বাণিজ্য সম্প্রসারিত হয়েছে তখন থেকেই পণ্য পরিবহনে ট্রানশিপমেন্ট পদ্ধতির ব্যবহার শুরু হয়েছে। এমতাবস্থায়, ট্রানশিপমেন্ট চুক্তি হলে ভারতের প্রত্যাশিত ট্রানজিটসুবিধার বিষয়ে একটি আশু সমাধান হবে। ট্রানশিপমেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ বিভিন্ন মাত্রার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাবে, ব্যবসার সুযোগ বাড়বে ও নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি বহুলাংশে হ্রাস পাবে। ট্রানজিটের ক্ষেত্রে এ ধরনের ব্যাপক অর্থনৈতিক মুনাফা থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হবে।
মোদ্দা কথায় বলতে গেলে ‘ট্রানজিট’ হচ্ছে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি ‘ভাড়া’ খাটিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা। আর ‘ট্রানশিপমেন্ট’ হচ্ছে শিল্প-কলকারখানা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, কর্মসংস্থান ও সম্পদ সৃষ্টি এবং দেশের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে বিনিয়োগ করা।
ভারত সড়ক, রেল ও জলপথে তার উত্তর-পূর্বাংশের রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে যাওয়ার জন্য ট্রানজিটসুবিধা চাইছে। ভারত ইতিমধ্যে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের রেল ও সড়কপথে যোগাযোগের সুবিধাও ঘোষণা করেছে। এখন বলা হচ্ছে, নেপাল ও ভুটানকে ট্রানজিটসুবিধা দিয়েও বাংলাদেশ যথেষ্ট পরিমাণে রাজস্ব আয় করতে পারবে। কিন্তু এ তথ্যও জানা জরুরি যে, ভুটানের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ২০০ কোটি ডলারের কম এবং নেপালের অর্থনীতিও তেমন উন্নত নয়। তা ছাড়া তাদের সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ভারতের ওপর নিবিড়ভাবে নির্ভরশীল। নেপাল ও ভুটান থেকে প্রচুর পরিমাণ পণ্য বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বাইরের অন্য দেশে রপ্তানি হবে—এমনটি আশা করা যায় না। কারণ তাদের দেশীয় পণ্য উৎপাদন তেমন বেশি নয়। তাদের আমদানির পরিমাণও সীমিত।
কারও কারও ধারণা, ট্রানশিপমেন্ট প্রক্রিয়া জটিল এবং পরিবহনখরচ ও সময় বেশি লাগবে। কিন্তু সারা বিশ্বে আধুনিক পরিবহন কনটেইনারের মাধ্যমেই হয়ে থাকে এবং এ ক্ষেত্রেও কনটেইনারের কোনো বিকল্প নেই। এ ব্যবস্থায় চোরাচালান রোধ ও পণ্য পরিবহনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে। সীমান্তে এক ট্রাক থেকে আরেক ট্রাকে পণ্যবাহী কনটেইনার স্থানান্তরের সহজ উপায় বের করতে সমস্যা হওয়ার কোনো কারণ নেই। প্রয়োজনে বাংলাদেশি ট্রাক ভারতের ওয়্যারহাউসে গিয়ে পণ্য এনে তা বাংলাদেশের ভূখণ্ড অতিক্রম করে ভারতের আরেক অংশে পৌঁছে দিতে পারে। রেলে মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করা যায়।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় কে এ এস মুরশিদ দেখিয়েছেন, ট্রানজিট থেকে বাংলাদেশের প্রত্যক্ষ লাভ আসলে সীমিত। শুধু রেল সংযোগের মাধ্যমেই তা কিছুটা অর্থবহ হতে পারে। আর তা কার্যত ট্রানশিপমেন্ট। ট্রানজিটবিষয়ক কোর কমিটিও প্রাথমিকভাবে তিন বছরের জন্য ট্রানশিপমেন্ট দেওয়ার সুপারিশ করেছে।
১৯৯২-৯৪ সালে আমি বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলাম। তখন একবার ভারতের তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি (বর্তমানে অর্থমন্ত্রী) ঢাকা সফরে এলে দুই দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণের বিষয়ে তাঁর সঙ্গে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের এক আনুষ্ঠানিক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আমি ভারতীয় ট্রানজিটের প্রস্তাবের বিপরীতে ট্রানশিপমেন্টের মাধ্যমে উত্তর-পূর্ব ভারতে তাদের পণ্য পরিবহনের প্রস্তাব করি। এ কারণে তখন একটি সংবাদপত্রে আমার কঠোর সমালোচনা করা হয়। আমার জন্য সন্তোষের বিষয় এই যে, সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহানও সম্প্রতি ট্রানজিটের পরিবর্তে ট্রানশিপমেন্টের যৌক্তিকতা বিবেচনার পরামর্শ দিয়েছেন।
আমি মনে করি, ট্রানজিট ধারণা পুনর্বিবেচনা করা একান্ত প্রয়োজন। বাংলাদেশকে ভারতের সঙ্গে ট্রানশিপমেন্টের বিষয়ে সমঝোতায় আসতে হবে এবং এভাবেই ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে সহজে পণ্য পরিবহনের সুবিধা ভোগ করবে।
ইতিমধ্যে সংবাদপত্রের খবরে আমরা জেনেছি যে, আশুগঞ্জ নদীবন্দর ব্যবহার করে ভারতকে ট্রানজিটসুবিধা প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে! আমরা আরও জেনেছি, আমাদের ভূখণ্ড অতিক্রম করার সময় বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের চেয়ে ভারতীয় পণ্যবাহী পরিবহন অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে। এ ধরনের ঘটনা আমাদের জন্য বিশেষভাবে উদ্বেগজনক।
ভারতকে ট্রান্সশিপমেন্ট বা ট্রানজিটসুবিধা প্রদানের বিষয়টি মোটেই সহজ নয়। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পেশাজীবী ও পরামর্শকদের কাজে লাগাতে হবে। আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ট্রানশিপমেন্ট/ট্রানজিটের আইনি, প্রশাসনিক ও লজিস্টিক বিষয়েও যথাযথ পর্যালোচনা জরুরি।
মাহবুবুর রহমান: সভাপতি, ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি)-বাংলাদেশ।

No comments

Powered by Blogger.