ঘুরে দাঁড়াও বাংলাদেশ by মোঃ ইকবাল উদ্দিন

মুক্তিযুদ্ধের ৪০ বছর পূর্ণ হলো। সামনে এগিয়ে যাওয়ার ৪০ বছর। জাতিসংঘের ৬৬তম সাধারণ পরিষদের সভা উপলক্ষে আমেরিকায় থাকাকালে গত ২০ সেপ্টেম্বর ২০১১ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নের স্বীকৃতিস্বরূপ নিউইয়র্কে 'এষড়নধষ ঐবধষঃয ধহফ ঈযরষফৎবহ্থং অধিৎফ' গ্রহণ করলেন।


গত বছর এই সেপ্টেম্বরেই তিনি জাতিসংঘ থেকে বাংলাদেশে এমডিজি অর্জন, বিশেষ করে শিশুমৃত্যুর হার শতকরা ৫০ ভাগ কমিয়ে আনার স্বীকৃতিস্বরূপ 'এমডিজি পুরস্কার' পেয়েছিলেন। এগুলো আমাদের অর্জন। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ভাবতে ভালোই লাগে। কিন্তু রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে যখন 'ওএমএসে'র দীর্ঘ লাইন দেখতে পাই, যখন গরিব মানুষগুলোকে এক কলসি পানির জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি, তখন খারাপ লাগতে শুরু করে। কারণ, একই সঙ্গে পত্রিকায় খবর বেরোয়_ ওএমএসের পাচারকৃত এত বস্তা চাল আটক করেছে পুলিশ অথবা দেখি যে, ধনী লোকেরা তার শখের গাড়িটি পরিষ্কার করার জন্য প্রতিদিন কত লিটার পানি নষ্ট করছেন। পানিতে যদি সরকার ভর্তুকি দেয় তা হলে এই ভর্তুকির সুবিধা কে পেল? গ্যাস ও বিদ্যুতে যদি সরকার ভর্তুকি দেয় তবে তা কে পেল? গরিবের তো সিএনজি করা গাড়ি নেই, ঘরে এসি বা ফ্রিজ নেই। গরিবের নামে বরাদ্দ করা সুবিধার সিংহভাগ তাহলে কে খায়? এটা বুঝতে গবেষণার প্রয়োজন হয় না।
খাবারে ভেজাল মেশানো এমন এক পর্যায়ে গেছে যে প্রতিদিন অনিরাপদ বোধ করি। অসুস্থ হলে সরকারি হাসপাতালের কথা সহজে মনেই আসে না। এখানে ডাক্তারের সামনের আসনে রোগীর পরিবর্তে ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেনটেটিভকে প্রায়ই বসে থাকতে দেখে কেমন যেন লাগে আমার। বরং প্রাইভেট হাসপাতালে ওই ডাক্তারকে অনেক আন্তরিক মনে হয়। শিক্ষককে দেখি কোচিংয়ে বেশ তৎপর। স্কুলে আমাদের ইতিহাসের অংশ হিসেবে 'সম্রাট সুলতান মাহমুদ' পড়ানো হয়েছিল, এ রকম আরও কত কী? কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধান পড়ানো হয়নি। তাই আমি নাগরিক অধিকার সম্বন্ধে তেমন কিছু জানি না। স্বাস্থ্যেরও কোনো ধারণা নেই আমার। সরকারি অনেক কর্মচারী, পিয়ন, কেরানির চাকরি করে ঢাকা শহরে বাড়ি, কোটি টাকার গাড়ি হাঁকিয়ে বেড়ান। তাদের দুর্নীতির খবর সরকার খুঁজে পায় না। মাঠের পর মাঠ, খালের পর খাল আর নদীর পর নদী সমানে দখল হয়ে যাচ্ছে, প্রতিকার হয় না। সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে দুর্ঘটনা মহামারী আকারে বাড়ছে। জনরোষ সামলাতে সরকার দ্রুত রাস্তা মেরামত করার এক মাস পরেই যখন আবার খানাখন্দ বেরিয়ে পড়ে তখন মুখ থেকে নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসে আমাদের। প্রায়ই সব প্রধানমন্ত্রীই জনকল্যাণ করার উদ্দেশ্যে সরকারি খরচে ৩০০-৪০০ জন সফরসঙ্গী নিয়ে বিদেশ যাবেন, ওইদিন সব নেতা, মন্ত্রী এমনকি সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্তারাও আনুগত্যের চরম নিদর্শনস্বরূপ কাজকর্ম বাদ দিয়ে বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকবেন। এটাই যেন কাজ। আসার দিনেও একই অবস্থা। ওইদিন বিড়ম্বনা আরও বেশি। নেতাকর্মীরা মিছিলে মিছিলে, স্লোগানে স্লোগানে, ব্যানারে-ফেস্টুনে বিমানবন্দরে জড়ো হতে থাকেন। রাস্তাঘাট বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। অসুস্থ রোগীটি অ্যাম্বুলেন্সে কাতরাতে থাকে। স্বজনের চোখের পানিতে বুক-জামা একাকার হয়ে যায়। কারও ভ্রূক্ষেপ নেই। নেত্রী আসছেন বলে কথা। মিছিলে মিছিলে পরিপূর্ণ রাস্তা। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত আকাশ-বাতাস। এদিকে সাধারণ মানুষের যন্ত্রণা বাড়ে, নাভিশ্বাস ওঠে।
একটা জবাবদিহিতার সরকার হোক না! বড় বড় বক্তৃতা নয়, বিরোধী দলের সঙ্গে দিন-রাত ঝগড়া করা নয়, কাজের সরকার। চাটুকারদের বাইরে এসে যে সত্যিই দেশের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করবে। কোনটি জরুরি, নতুন বিমানবন্দর নাকি রাস্তাঘাটের মেরামত ও সম্প্রসারণ সেটি সঠিকভাবে নির্বাচন করবে। শুধু বড় আকারের বাজেট ও এডিপি ঘোষণা নাকি তার সঠিক বাস্তবায়ন তা পর্যবেক্ষণ করবে। অদক্ষতা ও স্বচ্ছতার ঘাটতি দেখা দিলে প্রয়োজনে মন্ত্রীকেও শাস্তি দেবে। সবার জন্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে। মিছিলে হয়তো গলা ফাটিয়ে লোক দেখানো চিৎকার করতে পারব না; কিন্তু সবচেয়ে বড় পুরস্কারটা আমরাই তাকে দেব_ আমরা জনগণ তাকে আবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করব। একবার চেষ্টা করে দেখা যাক না!
iqbal@rdrsbangla.net
 

No comments

Powered by Blogger.