কেরানীগঞ্জে দু’গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধে শিশু নিহত

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি: দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের পূর্ব আগানগরে একটি মার্কেট দখলকে কেন্দ্র করে গতকাল সকালে দু’গ্রুপের   পৃষ্ঠা ১৭ কলাম ৪
বন্দুকযুদ্ধে ২য় শ্রেণীর ছাত্র সোহেল (৭) নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। আহতদের মিটফোর্ড হাসপাতালসহ স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে ঢাকা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন এএসপি কেরানীগঞ্জ সার্কেল মো. জাকারিয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনা-পরবর্তী সহিংসতা এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত ২ প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। 
এলাকাবাসী জানায়, পূর্ব আগানগর মমতাজ মার্কেটের দখলদারিত্বকে কেন্দ্র করে জমির মালিকানা দাবিদার ও ব্যবসায়ীদের মাঝে গত রোজার ঈদের পর থেকেই দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এ নিয়ে একাধিক বার সমঝোতার জন্য বসলেও বিষয়টি অমীমাংসিত থেকে যায়। গতকাল সকাল ৯টায় জমির মালিকানা দাবিদারের লোকজন মার্কেটের ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করতে আসলে দু’পক্ষের মধ্যে প্রথমে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও পরে বন্দুকযুদ্ধে রূপ নেয়। সন্ত্রাসীদের গোলাগুলির ও ২ ঘণ্টাব্যাপী তাণ্ডবে এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের মার্কেটের দোকান-পাট বন্ধ করে দেয়। এ সময় আমবাগিচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণীর ছাত্র মো. সোহেল স্কুলে যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। সোহেলের পিতার নাম হাফিজ মিয়া। এলাকাবাসী সোহেলের লাশ নিয়ে মিছিল করে। আহতরা হচ্ছেন- উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. সাহিদুল হক সাহিদ, মমতাজ মাকেট গার্মেন্ট ব্যবসায়ী সমিতি সভাপতি কাজি মুযাম্মেল, ঝুট ব্যবসায়ী আলীম, জাহাঙ্গীর, বাবুল ঢালী, জামাল, গনি, কামাল, দেলোয়ার হোসেন দিলু, আবদুর রহিম, শফিক, দিদার, রকি, মাসুদ, রফিক, ফারুক, রায়হান, আবদুল হালিম, ইলিয়াস আলী, জহির, দেলোয়ারসহ প্রায় অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছেন।  
এ ব্যাপারে মমতাজ মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি মো. ফারুক হোসেন বলেন, ৭০ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত মমতাজ মার্কেটে ২৪০টি টিন শেডের তৈরি পোশাক ও ঝুটের দোকান রয়েছে। যেখানে কয়েক হাজার লোকের কর্মসংস্থান। প্রায় ৩০ বছর ধরে এখানকার ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করে আসছে। কিন্তু গত ৮ মাস আগে স্থানীয় এক শ্রেণীর ভূমি ব্যবসায়ী মার্কেটের জায়গা খরিদ করে আমাদের উচ্ছেদের পাঁয়তারা চালায়। এ খবর আমরা জানতে পেরে গত ১৪ই নভেম্বর ঢাকার ৪র্থ যুগ্মজেলা জজ আদালতে দেওয়ানী মামলা দায়ের করি। যার নং-৮৫৬/২০১১। এ মামলায় ওই মালিকানা দ্বন্দ্ব নিয়ে আদালত ১৩ মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করে। প্রতিপক্ষ মালিকানা দাবিদাররা আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে কয়েক মাস ধরে ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদের জন্য হুমকি ধমকি দিয়ে আসছিল। সর্বশেষ বুধবার রাত ১২টায় ওই ভূমি ব্যবসায়ীরা আমাদের মার্কেট সমিতির সহসভাপতি শাজাহান, ব্যবসায়ী সুমন ও ইয়াহিয়াকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে থানায় নিয়ে যায়। এতে করে মার্কেটের সকল ব্যবসায়ীদের মাঝে উচ্ছেদ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যে কারণে গতকাল সকালে স্থানীয় আগানগর ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর শাহ খুশিসহ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ মার্কেট এলাকায় এক সমঝোতা আলোচনায় বসে। এ সময় প্রতিপক্ষ মালিকানা দাবিদাররা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত প্রায় দুই-আড়াইশ’ সন্ত্রাসী নিয়ে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা ও লুট তরাজ চালায়। এ সময় থানা পুলিশকে দূরত্ব বজায় রেখে নিরব ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় বলে ব্যবসায়ী মন্টু মৃধা জানান। 
এ ব্যাপারে জমির মালিকানা দাবিদার হাজী মজিবুর রহমান বলেন, আমি ৮ মাস আগে মূল মালিকের কাছ থেকে মার্কেটটি ক্রয় করি। এরপর মার্কেট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সমঝোতার জন্য একাধিক বার আলোচনায় বসে সমঝোতা হয়। স্থানীয় একটি কুচক্রী মহল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আঁতাত করে ভুয়া কাগজপত্র প্রস্তুত করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে গতকাল সকালে ওই মার্কেটে আলোচনার জন্য আসলে ব্যবসায়ীদের লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীরা মমতাজ মার্কেটের ওষুধ ব্যবসায়ী মঞ্জুর মোরশেদ অপুর নির্মাণাধীন মার্কেট ও আবাসিক ভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এ ব্যাপারে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি (প্রশাসন) মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, মার্কেটর মালিকানা দ্বন্দ্বে এ ঘটনাটি ঘটেছে। সংবাদ পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। পরে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ঘটনাস্থলে ২ প্লাটুন অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.