কামরুজ্জামান বিজয়ী-ইভিএমে ভোট সোয়া ঘণ্টায় ফল by হারুন আল রশীদ, সুমন মোল্লা ও মনিরুজ্জামান

রসিংদী পৌরসভার উপনির্বাচনে মেয়র পদে কামরুজ্জামান বিজয়ী হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত সব কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হয়। এর সোয়া ঘণ্টার মধ্যে বিকেল পাঁচটা ১৫ মিনিটে রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল অদুদ আনুষ্ঠানিকভাবে বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করেন।


সম্প্রতি নিহত মেয়র লোকমান হোসেনের ছোট ভাই কামরুজ্জামান ৩৫ হাজার ৫৬৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্তাজ উদ্দিন পেয়েছেন ১৩ হাজার ৮১৩ ভোট।
২০১১ সালের ১৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত এই পৌরসভার নির্বাচনে কামরুজ্জামানের বড় ভাই লোকমান হোসেন বিজয়ী হয়েছিলেন। তিনি গত ১ নভেম্বর আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। এরপর এই পৌরসভার মেয়র পদ শূন্য হয়।
কামরুজ্জামান হলেন লোকমান হত্যা মামলার বাদী। আর মন্তাজ উদ্দিন এই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।
গতকাল সন্ধ্যায় বেসরকারিভাবে ফল ঘোষণার পর কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, নরসিংদীর উন্নয়নে তিনি তাঁর বড় ভাইয়ের অসমাপ্ত কাজ শেষ করবেন। তাঁকে নির্বাচিত করায় তিনি ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মন্তাজ উদ্দিন তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘ভোটের হিসাব বলে আমি পরাজিত হয়েছি, এটাই বড় সত্য। আমি পরাজয় মেনে নিয়েছি।’ তিনি নবনির্বাচিত মেয়র কামরুজ্জামানকে অভিনন্দন জানান।
মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী অন্য চার প্রার্থীর মধ্যে আমজাদ হোসেন এক হাজার ৫৮১ ভোট, আফজাল হোসেন ৫৫৩, মোছাব্বির আহমেদ ৪৬৩ ও আরিফুল ইসলাম ১৫১ ভোট পেয়েছেন।
শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ হয়েছে। কোনো প্রার্থীর কোনো অভিযোগ নেই। ভোট গ্রহণকালে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে দলীয় সমর্থকদের নিয়ে শোভাযাত্রা এবং ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করায় নরসিংদীর স্থানীয় সাংসদ নজরুল ইসলামকে মৌখিকভাবে সতর্ক করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল অদুদ।
শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ হওয়ায় রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল অদুদ ভোটার, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছেন। তাঁদের কাছে এই ভোটে বড় আকর্ষণ ছিল ইভিএম। এ ছাড়া নজরদারির জন্য প্রতিটি কেন্দ্রের কক্ষে ছিল ওয়েব ক্যামেরা।
‘কোনো লাইন নাই, আইলাম আর গেলাম’: নরসিংদী পাইলট উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন রোকেয়া বেগম (৬০)। জীবনে প্রথম মেশিনে ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তাইজ্জব ব্যাপার, কী আর কমু। কোনো লাইন নাই, আইলাম আর গেলাম।’
এই উপনির্বাচনে ৩১টি কেন্দ্রের সব কটিতে ভোটারদের প্রায় একই রকম অভিজ্ঞতা। অতীতের মতো লাইনে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার ঝামেলা নেই। একেকজনের ভোট দিতে সময় লেগেছে আধা মিনিটেরও কম।
মোট ৬৭ দশমিক ২০ শতাংশ ভোট পড়ে। এর মধ্যে দুপুর গড়ানোর আগেই ৫০ শতাংশ ভোট পড়ে।
শালিধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবু তালেব প্রথম আলোকে বলেন, ব্যালেট পেপারে নম্বর লেখা, ব্যালেট ছেঁড়া, সিল মারা, ব্যালেট মোড়ানো, বাক্সে ঢোকানো—সবকিছুই ইভিএমে। ভোটাররা এসে ব্যালট ইউনিটে চাপ দিয়ে ভোট দিয়ে চলে যাচ্ছেন।
মুঠোফোনের খুদে বার্তায় ফলাফল: ঢাকা থেকে নির্বাচন কমিশন মুঠোফোনের খুদে বার্তার (এসএমএস) মাধ্যমে নরসিংদী পৌরসভার উপনির্বাচনের ফলাফল সংগ্রহ করেছে। নির্দেশনা অনুযায়ী সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা যাঁর যাঁর কক্ষের ফলাফল এসএমএসের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে পাঠান। পরে নির্বাচন কমিশন সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সেই বার্তাটি এসএমএসের মাধ্যমে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছে পাঠান। বার্তাটি সঠিক হলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ‘ওয়াই’ এবং সঠিক না হলে ‘এন’ লিখে নির্বাচন কমিশনকে ফিরতি বার্তা পাঠান।

No comments

Powered by Blogger.