অভ্যুত্থান চেষ্টা ব্যর্থ

স্টাফ রিপোর্টার: একটি অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। সেনাবাহিনীর একটি উগ্রবাদী অংশ এ অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। নজিরবিহীন এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর তরফে পারসনাল সার্ভিসেস পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ রাজ্জাক এই ব্যর্থ অভ্যুত্থানের খবর জানিয়েছেন। ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বলা হয়েছে কথিত এই অভ্যুত্থানে ১৫ থেকে ১৬ জন সেনা কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন। যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও রয়েছেন। একটি ধর্মান্ধ গোষ্ঠী হংকংয়ে অবস্থানরত একজন প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীর সহযোগিতায় এ অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেছিল। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট  কর্নেল এহসান ইউসুফ ও মেজর জাকিরকে গ্রেপ্তার করা   পৃষ্ঠা ১৭ কলাম ১ হয়েছে। একই ঘটনায় ষড়যন্ত্রকারী মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক পলাতক রয়েছেন বলে জানান তিনি। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ রাজ্জাক জানান, কিছু প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকদের ইন্ধনে অবসরপ্রাপ্ত এবং সেনাবাহিনীতে কর্মরত কতিপয় ধর্মান্ধ কর্মকর্তা সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যাহত করার একটি বিফল চেষ্টা চালায়। এ অপচেষ্টাকে প্রতিহত করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তিনি জানান, গত ডিসেম্বরে একজন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেলের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর কিছু বিভ্রান্ত কর্মকর্তা এ অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালান। এই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার সঙ্গে বিদেশী শক্তির ইন্ধন আছে কিনা জানতে চাইলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ রাজ্জাক বলেন, বিষয়টি একেবারেই উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। তিনি জানান, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের বাইরে অন্য ক্যান্টনমেন্টের অফিসারদের সঙ্গেও এবিষয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল। গোটা প্রক্রিয়ায় মধ্যমসারির কতিপয় অফিসার জড়িত ছিলেন। তবে এ অভ্যুত্থান চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়া হয়েছে। ঘটনার অন্যতম পরিকল্পনাকারী মেজর রাজ্জাকের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে গত ২৮শে ডিসেম্বর একটি তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে। জানানো হয়, মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক পলাতক এবং  অপর একজন অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তা ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের বাসায় সপরিবারে রয়েছেন। তাকে গৃহবন্দি করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ রাজ্জাক বলেন, সেনা আইনে গৃহবন্দি বলে কিছু নেই। তিনি ক্যান্টনমেন্টেই আছেন এটুকু বলতে পারি। প্রশ্ন করা হয় কতজন সেনা কর্মকর্তা এ অপচেষ্টার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ রাজ্জাক বলেন, এই মুহূর্তে নির্দিষ্ট করে সংখ্যাটা বলা যাচ্ছে না। তবে এটা ১৪ থেকে ১৬ জনের বেশি হবে না। এদের সবাই মধ্যমসারির কর্মকর্তা। অপরাধ প্রমাণিত হলে এসব কর্মকর্তার কি ধরনের শাস্তি হতে পারে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আর্মি অ্যাক্টের ৩১ ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে সংশ্লিষ্টতার গভীরতাও পরিমাপ করা হবে। গতকাল এক অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে সেনাবাহিনীর কিছু কর্মকর্তা কাজ করছে। এ মন্তব্যের প্রতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ রাজ্জাকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, এটি সম্মানিত ওই শিক্ষকের নিজস্ব মত। এ বিষয়ে আমরা কিছুই বলবো না। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন যে ক’জন সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে তারা সবাই এমআইএসটিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। যাদের বিরুদ্ধে ধর্মান্ধতার অভিযোগও করছে সেনা সদর। তাহলে সিলেবাসে বা প্রশিক্ষণে কোন সমস্যা আছে কিনা-উত্তরে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ রাজ্জাক বলেন, এটি খুবই ভাল প্রশ্ন। তবে বলতে পারি সিলেবাসে কোন সমস্যা নেই। সমস্য দৃষ্টিভঙ্গির। সেখানে প্রশিক্ষণার্থী ৫ হাজারেরও বেশি। কিন্তু সবার সমস্যা হচ্ছে না। এই মুহূর্তে কতজন কথিত ধর্মান্ধ অফিসার সেনাবাহিনীতে রয়েছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ সংখ্যা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে ভবিষ্যতে তাদের আচরণের উপর এ সংখ্যা নির্ধারিত হবে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ রাজ্জাক বলেন, একজন লে. কর্নেল পদবির অবসরপ্রাপ্ত অফিসার গত ১৩ই ডিসেম্বর কর্মরত একজন মেজরকে সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ঘৃণ্য প্রস্তাব দেন। কিন্তু তিনি প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে বিষয়টি চেইন অব কমান্ডের মাধ্যমে অবগত করলে সাবেক ওই কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অপর পরিকল্পনাকারী মেজর জিয়া গত ২২শে ডিসেম্বর কর্মরত আরেক অফিসারকে একই ধরনের প্রস্তাব দেন। বিষয়টি জানতে পেরে মেজর জিয়ার ছুটি বাতিল করে সেনা সদর দপ্তরে যোগ দিতে বলা হয়। কিন্তু সে পলাতক থেকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ‘সাবভারসিভ’ (রাষ্ট্রবিরোধী) কার্যক্রম চালাচ্ছে। সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে যাওয়ায় গত ২৬শে ডিসেম্বর পলাতক মেজর জিয়া তাকে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন সংক্রান্ত কল্পিত গল্প তার পরিচিতজনদের কাছে ই-মেইল করে। এই ই-মেইলটি আবু সাঈদ নামের এক ব্যক্তি ফেইসবুকে ও ‘সোল্‌জারস ফোরাম’ নামের একটি ব্লকে ছড়িয়ে দেয়। পরে গত ৮ই জানুয়ারি ই-মেইল বার্তাটি নিষিদ্ধ ধর্মান্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরীর লিফলেট আকারে ছড়িয়ে দেয়। একদিন পর ৯ই জানুয়ারি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিভ্রান্তমূলক সংবাদের সঙ্গে তাল রেখে ‘সেনাবাহিনীতে গুমের ঘটনা ঘটছে’ বলে অভিযোগ করে। এছাড়া, ১০ই জানুয়ারি পলাতক মেজর জিয়া কল্পিত দুটি অপারেশন আদেশ কর্মরত অফিসারদের কাছে পাঠান। ১১ই জানুয়ারি তিনি তার সমমনা ও দলভুক্ত কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে অভ্যুত্থান প্রস্তুতি জানতে চান এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উদ্বুদ্ধ করেন। ওই রাতেই ইশরাক আহমেদ নামের হংকং প্রবাসী একজন বাংলাদেশীর সঙ্গে যোগাযোগ করে মেজর জিয়া এবং অভ্যুত্থান অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা করেন। ইশরাক আহমেদ অভ্যুত্থান শেষ হলেই তাকে অবহিত করার নির্দেশ দেন। যাতে তিনি অভ্যুত্থান পরবর্তী দ্রুততম সময়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারেন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় সেনাবাহিনীর কাঁধে ভর করে অতীতে বিভিন্ন অপশক্তি রাজনৈতিক সুবিধা লাভ করেছে। কিন্তু সেনাবাহিনী ঘটনার বদনামের দায়ভার বহন করছে। ‘তাই আর এ ধরনের দায়ভার আমাদের সংগঠন কাঁধে নিতে চায় না।’ গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতে জড়িত সেনা কর্মকর্তাদের সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য উদঘাটিত হয়েছে। তদন্ত চলছে। পলাতক মেজর জিয়ার সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে কর্তৃপক্ষকে অবগত করার অনুরোধ করা হয়েছে সংবাদ সম্মেলন থেকে।

No comments

Powered by Blogger.