ঈদে ঘরে ফেরার বিড়ম্বনা-প্রতিবার একই চিত্র দেখতে হয় কেন?

প্রতিটি ঈদেই ঘরমুখো মানুষের বিড়ম্বনার অন্তহীন চিত্র পরিলক্ষিত হয়। এবারও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। বাস, ট্রেন, লঞ্চের টিকিট নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড জনজীবনে যে অস্থিরতা-উদ্বেগের সৃষ্টি করে, তাতে উৎসবের আনন্দটাই ম্লান হয়ে যায়। প্রতিবছরই এই উৎকট চিত্র পরিলক্ষিত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের তরফে প্রতিশ্রুতি মেলে, 'আগামীবার থেকে জনবিড়ম্বনা লাঘবে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।


অসাধুচক্রের হাত থেকে মানুষকে রক্ষার জন্য প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।' কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আশ্বাস আর প্রতিশ্রুতির বেড়াজালেই সব কিছু বন্দি থাকে, মানুষের বিড়ম্বনা লাঘবের বিষয়টি নিশ্চিত হয় না। দায়িত্বশীল মহলের আশ্বাসে তাই সংগত কারণেই অনেকে এখন আর বিশ্বাসও রাখেন না। এবার কোরবানির ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের চাপ তুলনামূলক কম হওয়ার (শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষার কারণে) কথা থাকলেও পরিবহনের টিকিট ইতিমধ্যেই 'নাই' হয়ে গেছে। অভিযোগ উঠেছে, বরাবরের মতোই একটি শক্তিশালী অসাধুচক্র টিকিট কব্জা করে নিয়েছে নিজেদের পকেট স্ফীত করার লক্ষ্যে। ২৮ অক্টোবর কালের কণ্ঠসহ কয়েকটি সহযোগী দৈনিকে বাস, ট্রেন, লঞ্চের টিকিটের জন্য টিকিটপ্রত্যাশী অসংখ্য মানুষের ছোটাছুটির দৃশ্যসংবলিত সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ২৭ অক্টোবর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হলে এদিনই অনেকে টিকিট না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরেছেন। ছুটে গেছেন বাসের কাউন্টারগুলোতে। সেখানেও একই পরিস্থিতি পরিলক্ষিত হয়েছে। এর ব্যত্যয় ঘটেনি লঞ্চের টিকিটের ক্ষেত্রেও। ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরুর পরপরই টিকিট কিভাবে 'শেষ' হয় গেল_এটি জরুরি প্রশ্ন। অনেকে কাউন্টারে টিকিট না পেয়ে কালোবাজারিচক্রের সদস্যদের কাছ থেকে উচ্চমূল্যে টিকিট সংগ্রহ করেছেন, এমন প্রতিবেদনও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এসব দেখভালের দায়দায়িত্ব যাঁদের, তাঁরা নির্বিকার। বাস টার্মিনাল কিংবা কাউন্টারগুলোতে অগ্রিম টিকিট বিক্রির আনুষ্ঠানিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া না হলেও কাউন্টারে টিকিট মিলছে না। একই অবস্থা লঞ্চের ক্ষেত্রেও। কালোবাজারিচক্রের সদস্যরা নানা কৌশলে টিকিট হাতিয়ে নিয়েছে এবং এই অপপ্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মহলগুলোর এক শ্রেণীর অসাধু লোকের সম্পৃক্ততা রয়েছে। একদিকে মানুষের অন্তহীন বিড়ম্বনা, অন্যদিকে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের খোঁড়া যুক্তি প্রশ্নবোধক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেই চলেছে। ব্যবস্থা না পাল্টে অবস্থা পাল্টানোর চিন্তা অলীক কল্পনামাত্র। শৃঙ্খলাভঙ্গে অনেকের অনেক রকম সুবিধা_এটি এ দেশে অহরহ চোখে পড়ে; কিন্তু এর পরও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় কিংবা ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি সারিয়ে যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার মতো জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উচ্চারণেই সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে। কেন প্রতিকারহীন অন্তহীন ভোগান্তির কবলে মানুষকে পড়তে হয়_এ প্রশ্নের জবাব দেওয়ার দায় সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহলগুলোর। ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের যাতায়াত সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরিকল্পিত উপায়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। ঈদের বাকি এখনো এক সপ্তাহের বেশি। সরকারি ব্যবস্থাপনায় ত্রুটিমুক্ত পর্যাপ্ত যানবাহনের ব্যবস্থার পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতেই হবে। আরো একটি বিষয় লক্ষ করতে হবে, অর্থলোলুপ চক্র যাতে নিজেদের ফায়দা লোটার জন্য চলাচলের অযোগ্য যানবাহন কিংবা লঞ্চ নামিয়ে জনজীবনকে আরেক দফা ঝুঁকির মুখে না ফেলে। মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সব রকম পদক্ষেপ নিতে হবে কালবিলম্ব না করে।

No comments

Powered by Blogger.