বার্সেলোনা ২: ১ রিয়াল-এল ক্লাসিকো মানেই রিয়ালের হার!

লিওনেল মেসির চিপটা যেন রংধনু এঁকে বাঁক নিয়ে পড়ল অরক্ষিত এরিক আবিদালের কাছে। মেসিকে আটকানোর জন্য সর্বস্ব বিনিয়োগ করার মূল্য দিল রিয়াল মাদ্রিদ। বক্সের কোনায় সুযোগের অপেক্ষায় ওত পেতে থাকা আবিদালের নিখুঁত ফিনিশিং। ম্যাচের তখনো ১৫ মিনিটের মতো বাকি। কিন্তু বার্সেলোনা আর অপেক্ষায় থাকতে চাইল না।


তখনই যেন মেতে উঠল জয়োৎসবে। বার্সেলোনায় নিজের পাঁচ বছরের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় এবং স্মরণীয়তম গোলটি করে আবিদাল তখন সেই উৎসবের কেন্দ্রে।
বার্সার কোনো সমর্থকই হয়তো ভাবেনি, জয়সূচক গোলটি আসবে এই ফরাসি ডিফেন্ডারের পা থেকে। বার্সেলোনার প্রথম গোলদাতার নামটিও চমক। মেসি-ফ্যাব্রিগাস-ইনিয়েস্তাদের কেউ নন, দ্বিতীয়ার্ধের চতুর্থ মিনিটে জোরালো হেডে গোল করেছেন কার্লোস পুয়োল। দুই ডিফেন্ডারের দুটো গোলে শেষ পর্যন্ত কোপা ডেল রের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগ বার্সেলোনা জিতল ২-১-এ। খেলাটা রিয়ালের মাঠেই হয়েছে বলে অনেক এগিয়ে থাকল বার্সা। ফিরতি লেগ ২৫ জানুয়ারি।
যখন ডিফেন্ডারদের গোলে জয় আসে, সাধারণ ধারণা বলে, আক্রমণভাগ হয়তো ছিল ধারহীন। আসল ছবিটা একেবারেই উল্টো। পাসের পসরা সাজিয়ে একের পর এক আক্রমণে রিয়ালকে অস্থির করে তুলেছিল বার্সা। প্রথমার্ধের পুরো দখল ছিল তাদেরই। যদিও এই সময় ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল রিয়ালই।
পাল্টা আক্রমণ থেকে করিম বেনজেমার লম্বা থ্রু জায়গা মতো খুঁজে নিয়েছিল ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে। ভিক্টর ভালসেদের বদলে হোসে পিন্টোকে খেলানোর সিদ্ধান্তটা যে ভুল ছিল, ১১ মিনিটেই প্রমাণ হয়ে গেল। পিন্টোর দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে বল জালে পাঠালেন রোনালদো। সান্তিয়াগো বার্নাব্যু তখন ‘১০ ডিসেম্বরের’ প্রতিশোধ নেওয়ার নেশায় উন্মাতাল। কিন্তু ১০ ডিসেম্বরের মতোই প্রথমে গোল খেয়েও আতঙ্কিত হয়নি বার্সা। বরং দ্রুত ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে নিজেদের মুঠোয়। প্রথমার্ধে রোনালদোর ওই গোলটাই বার্সার গোলমুখে রিয়ালের একমাত্র আক্রমণ!
দ্বিতীয়ার্ধে রিয়াল তুলনামূলক ভালো খেললেও থই পায়নি। বেনজেমার একটা শট পোস্টে লেগে ফিরেছে—এ নিয়ে আফসোস করারও উপায় নেই। বার্সার দুটো শট ক্রসবারে লেগে ফিরেছে, প্রথমে অ্যালেক্সিস সানচেজের, এরপর ইনিয়েস্তার।
১৩টি এল ক্লাসিকোর ৯টিই জেতালেন গার্দিওলা। হার মাত্র একটিতে। এই আলোচনা তাই এখন উঠতেই পারে, খোদ মরিনহোও বার্সাকে ঠেকানোর দাওয়াই খুঁজে পাবেন কি না। তবে ম্যাচ শেষে আলোচনা হলো একেবারেই ভিন্ন প্রসঙ্গে। ক্যালিয়নের ফাউলের শিকার হয়ে মাটিতে পড়ে থাকা মেসির পা ইচ্ছা করে বুট দিয়ে মাড়িয়ে দিয়েছেন পেপে। রেফারিকে পারলেও টিভি ক্যামেরাকে ফাঁকি দিতে পারেননি পেপে। ম্যাচের প্রথম দিকে হলুদ কার্ড দেখেছিলেন। লাল কার্ড তাঁর প্রাপ্য ছিল। লাল কার্ড পেতে পারতেন রিকার্ডো কারভালহোও।
পেপের আচরণ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের তীব্র আক্রমণের মুখে মরিনহো পর্যন্ত কূটনৈতিক উত্তর দিতে বাধ্য হয়েছেন, ‘আমি এটা দেখিনি। তবে পেপে ইচ্ছাকৃতভাবে এটা করলে অবশ্যই ওর শাস্তি প্রাপ্য।’ সেই ইংল্যান্ডে বসে ওয়েইন রুনি পর্যন্ত ধিক্কার জানিয়েছেন টুইট করে, ‘পেপে, তুমি আসলেই একটা গর্দভ। কেউ না কেউ এর জবাব নিশ্চয়ই দেবে।’
গার্দিওলা অবশ্য স্বভাব অনুযায়ী ঝাঁজালো কিছু বলেননি। হয়তো নিজের ৪১তম জন্মদিনে শিষ্যদের কাছ থেকে পাওয়া উপহারটা উপভোগ করতে চেয়েছেন, বিতর্কে জড়াতে সায় দেয়নি তাঁর মন! এএফপি, রয়টার্স।

No comments

Powered by Blogger.