শাবিতে সকল পরীক্ষা স্থগিত, ছাত্রলীগের শো-ডাউন

সিলেট অফিস: শাহ্‌জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সঙ্কট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। গতকাল একাডেমিক    পৃষ্ঠা ৫ কলাম ১
 কাউন্সিলের বৈঠকে ২৬শে জানুয়ারি পর্যন্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে, এই সময়ের মধ্যে গঠিত তদন্ত কমিটি ছাত্রদের সব অংশের নেতার সঙ্গে বৈঠক করে শান্তিপূর্ণ সমাধানে যাবেন। এবং এরই মধ্য দিয়ে শিক্ষার পরিবেশ আবার স্বাভাবিক হবে। কিন্তু গতকাল ক্যাম্পাসে বিশাল শো-ডাউন করেছে ছাত্রলীগ। আর এই শো-ডাউন থেকে ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কর্তৃক গঠন করা কমিটিকে একপেশে বলে দাবি করেছে ছাত্রশিবির। ১১ই জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ্‌পরাণ হলের কর্তৃত্ব নিয়ে শিবির ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষকালে হলের ভেতরে ব্যাপক তাণ্ডব ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনার পর ক্যাম্পাস ছাড়া ছাত্রশিবির ৩ দফা দাবিতে রোববার থেকে ক্যাম্পাসে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেয়। ছাত্র ধর্মঘটের কারণে ৫ দিন ধরে ক্যাম্পাস খোলা থাকলেও কোন ক্লাস কিংবা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। এরই মধ্যে শিবির বাসে হামলা এবং শহরের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। এ কারণে ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থী আসতে ভয় পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা গেছে, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান করলেও শিবিরের কেউ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় চালু থাকলেও ধর্মঘটের কারণে কোন ক্লাস ও পরীক্ষা হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে দিনভর একটার পর একটা বাস ছেড়ে গেলেও তাতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল কম। এবং প্রতিটি বাসই ছাড়ে পুলিশ প্রহরায়। এই পরিস্থিতি বেলা ১১টায় ভিসি’র নেতৃত্বে একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে সকল বিভাগের বিভাগীয় প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসে সমাজবিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধান ও বিএনপিপন্থি শিক্ষকের নেতা প্রফেসর কামাল আহমদ চৌধুরী মানবজমিনকে জানান, আমরা চাই ক্যাম্পাস সচল করতে। এখানে কর্তৃত্বের কোন বিষয় নয়। ভিসি আমাদের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা তাকে সার্বিক সহায়তা করবো। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফেরাতে উদ্যোগ নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে না। পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাজিয়া চৌধুরী জানান, আমরা চাই শান্ত পরিবেশ। পরিবেশ স্বাভাবিক হতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে উদ্যোগ নিবে তাতে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা আনোয়ারুল ইকবাল জানালেন, ভিসি যে কমিটি দিয়েছেন সে কমিটি সবার সঙ্গে কথা বলবে। এবং সবার মতামত নিয়ে ক্যাম্পাসকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। ওদিকে, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নাঈম হাসান জানিয়েছেন, তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত। কোন অপশক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে অচল করতে চাইলে তাদের প্রতিহত করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান চৌধুরী সুমন জানান, ১১ তারিখ রাতে ছাত্রশিবির ক্যাম্পাসে থাকতে পারবে না ভেবে হলে ব্যাপক লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। তিনি জানান, হলের ভেতরে জঙ্গি কার্যক্রমের প্রমাণ নস্যাৎ করতে তারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে ইসলামী ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মোজাহিদ রুমী গতকাল মানবজমিনকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে কমিটি গঠন করেছে তা একপেশে। তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ, র‌্যাব ও ছাত্রলীগ একসঙ্গে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এ পর্যন্ত তাদের ৩২ জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে। তিনি বলেন, তারা অস্তিত্বে রক্ষার্থে শাহ্‌পরাণ হলে সহাবস্থান চাইবেন। তা না হলে কোনভাবেই এ ঘটনার নিষ্পত্তি হবে না। এদিকে, শাহ্‌জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে শিবিরমুক্ত ক্যাম্পাস ঘোষণা করেছে ছাত্রলীগ। দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে মিছিল পরবর্তী সমাবেশে ছাত্রলীগ এ ঘোষণা দেয়। শিবিরের ডাকা ধর্মঘটের প্রতিবাদে দুপুরে শাহ্‌জালাল বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট জেলা ও মহানগর শাখা ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করে। মিছিল-পরবর্তী সমাবেশে জামায়াত-শিবিরকে প্রতিহত করার জন্য সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ গঠনের দাবি ওঠে। শাবি ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান চৌধুরী সুমনের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি নাঈম হাসান, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পঙ্কজ পুরকায়স্থ, সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন খান, সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি রাহাত তরফদার, সাধারণ সম্পাদক ইমরুল হাসান, শাবি শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান আসাদ, কামরুজ্জামান খান সুইট, আতিকুর রহমান আতিক। শাহ্‌জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষা আগামী ২৬শে জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।  বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের ডাকা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে ক্যাম্পাসে অচলাবস্থা বিরাজ করায় বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী এ সভায় পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়। তবে এ সময়ের মধ্যে সব ক্লাস ও দাপ্তরিক কাজ চলবে বলে রেজিস্ট্রার ইসফাকুল হোসেন জানান। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. সালেহউদ্দিন আহমদ মানবজমিনকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ স্বাভাবিক করতে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে এবং যে কমিটি গঠন করা হয়েছে সে কমিটি ঘটনার নিষ্পত্তি করলে আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে জানান তিনি। ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য  সদস্যরা হলেন- শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. কবির হোসেন, প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক হিমাদ্রি শেখর রায়, শাহ্‌পরাণ হলের প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক ড. মস্তাবুর রহমান, সৈয়দ মুজতবা আলী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ, প্রথম ছাত্রী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. নাজিয়া চৌধুরী, সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক ড. রোকসানা বেগম। ক্যাম্পাস শান্ত রাখতে এ কমিটি বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করবে বলে প্রক্টর হিমাদ্রি শেখর রায় জানান। এদিকে, সন্ত্রাস-দখলদারিত্বমুক্ত শিক্ষার গণতান্ত্রিক অধিকার ও সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. সালেহ উদ্দিন বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করেছে। শিবিরের প্রেস বিজ্ঞপ্তি: ছাত্রশিবির শাবিপ্রবি শাখার নেতাকর্মীদের ওপর ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলা ও আবাসিক হলে শিবির নিয়ন্ত্রিত কক্ষগুলোতে ব্যাপক লুটপাটের ৯ দিনেও বৈধ ছাত্রদের হলে উঠানো এবং লুটপাটকারী সন্ত্রাসীদের বিচার প্রশাসন করতে পারেনি। দীর্ঘদিন পরে গত ১৮ই জানুয়ারি  বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. মো: আনোয়ারুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে ৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়ে। কমিটির সদস্যরা হলেন- অধ্যাপক ড. মো: কবির হোসেন, হিমাদ্রি শেখর রায়, অধ্যাপক ড. নিয়াজ, ড. মস্তাবুর রহমান, ড. নাজিয়া চৌধুরী এবং ড. রোকসানা বেগম। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গঠিত কমিটি একটি বিতর্কিত কমিটি হিসেবে এর তীব্র প্রতিবাদ জানান শিবির নেতারা। কারণ হিসেবে তারা বলেন, গঠিত তদন্ত কমিটির বিষয়টি অপূর্ণাঙ্গ এবং টার্মস অব রেফারেন্স অসঙ্গতিপূর্ণ। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্য এবং বিভিন্ন সময় যারা তদন্ত কমিটিতে সাফল্যে দেখিয়েছেন শিক্ষকদের কমিটিতে উপেক্ষা করা হয়েছে। তারা জানান, সংঘর্ষের ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত মদতদাতা শিক্ষকবৃন্দের কমিটিতে  রেখে একপেশে  কমিটিতে পরিণত করেছে। ছাত্রশিবির শাবিপ্রবি শাখার গঠিত কমিটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ কমিটি বাতিল করে সর্বজনীন ও গ্রহণযোগ্য কমিটি গঠনের দাবি জানায় তারা।

No comments

Powered by Blogger.