পাঁচ বছরেই জেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ by মনোজ সাহা

কোমলমতি শিশুদের মধ্যে জ্ঞানের আলো জ্বালিয়ে যাচ্ছে গোপালগঞ্জের মালেকা একাডেমী। মানসম্মত শিক্ষা প্রদান করে প্রতিষ্ঠানটি মাত্র ৫ বছরের মধ্যে জেলার শ্রেষ্ঠ শিশু বিদ্যাপীঠ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। শিক্ষক ও অভিভাবকদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা শিক্ষার্থীদের অধ্যবসায়কে যুগলবন্দি করে স্কুলটি সাফল্যের পথে চলছে। এ স্কুলের শুরুতেই মনোরম পরিবেশে উন্নত শিক্ষা, সুশৃঙ্খল পাঠদান, শ্রেণীকক্ষেই পাঠদান সম্পন্ন করা এবং নিয়মিত


অভিভাবকদের সঙ্গে সব বিষয়ে মতবিনিময় করা হয়। সবার আন্তরিকতা ও নিরলস চেষ্টায় স্বল্প সময়ের মধ্যে স্কুলটি আদর্শ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। প্রতি শিক্ষাবর্ষে ৪টি অভিভাবক দিবসে অভিভাবক, শিক্ষক ও স্কুলের পরিচালকরা বসে প্রতিটি শিক্ষার্থীর লেখাপড়া নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন। এর পাশাপাশি এ আলোচনা সভায় শিক্ষকদের পাঠদানের মান, স্কুলে পরিবেশ এবং পরবর্তী কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। শিশুদের লেখাপড়ার পাশাপাশি সুকুমারবৃত্তি বিকাশে সাংস্কৃতিক ও শরীরচর্চা করানো হয়। শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রতি সপ্তাহে একদিন প্রতিটি শিক্ষার্থীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা পরীক্ষা করে সচেতনতা বৃদ্ধিতে আলোচনা করা হয়। এ ছাড়া বছরে প্রতি ৪ মাস অন্তর বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপত্র প্রদান ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ করা হয়। স্কুলের প্রতিটি ছাত্রের রয়েছে রক্তের গ্রুপসহ স্বাস্থ্য কার্ড। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতি মাসে ও প্রতি শিক্ষাবর্ষে শ্রেণীতে সেরা শিক্ষার্থী নির্বাচন করে বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয়। বছরে একবার স্কুলের একজন শ্রেষ্ঠ চৌকস শিক্ষার্থী নির্বাচন করে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কৃত করা হয়। গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিনা বেতনে পড়ার সুযোগসহ স্কুলের সভাপতির আর্থিক অনুদানে বই ও শিক্ষা উপকরণ প্রদান করা হয়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা তৈরিতে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় ভালো ফল অর্জনের প্রণোদনা হিসেবে স্কুলের সভাপতি ব্যক্তিগতভাবে মেধাবৃত্তির জন্য ১০ হাজার টাকা ও সাধারণ বৃত্তির জন্য ৫ হাজার টাকা পুরস্কার প্রদান করে আসছেন।
২০০৬ সালের ১৮ মার্চ কানাডা প্রবাসী ও শিক্ষানুরাগী শওকত আলী তার প্রয়াত মায়ের নামে গোপালগঞ্জ শহরের মোহাম্মদপাড়ায় নিজস্ব জায়গায় স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। সে বছর মাত্র ৮ জন শিক্ষার্থী নিয়ে স্কুলটি যাত্রা শুরু করে। এখন এ স্কুলের শিক্ষার্থী পাঁচ শতাধিক।
স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র আনান রহমান মুন্না এবং চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী মৌসুমি জিনিয়া কেয়া জানায়, শিক্ষার পাশাপাশি স্বাস্থ্য, খেলাধুলা, সংস্কৃতিক ও শরীরচর্চার ব্যবস্থা রয়েছে। এসব কারণে স্কুলের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে উপস্থিতি থাকে ও পড়াশোনায় মনোযোগী হয়। তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী সায়মা আক্তার মিতুর বাবা কাজী সেলিম আহম্মেদ বলেন, স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান শওকত আলী প্রচলিত ধারা থেকে বেরিয়ে এসে শিশুদের মধ্যে জ্ঞানের প্রদীপ জ্বালাতে তার মায়ের নামে শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। প্রতিষ্ঠানটি বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা না করে মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। এ কারণেই জেলার শ্রেষ্ঠ শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আসন দখল করতে পেরেছে। দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক রমেশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ৩ বছর ধরে স্কুলের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ পাস করেছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে এ স্কুল আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এ ধারা অব্যাহত থাকবে। শিক্ষার পাশাপাশি স্কুলটি সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ স্থান অধিকার করেছে। ২০১০ সালে শিশু দিবসে জাতীয় পর্যায়ে সুন্দর হাতের লেখায়, আবৃত্তিতে ও চিত্রাঙ্কনে প্রথম পুরস্কার লাভ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্কুলের শিক্ষার্থীদের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন। এ ছাড়া জাতীয় দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস এবং মৌসুমি প্রতিযোগিতায় স্কুলের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়ে সাফল্য দেখিয়ে স্কুলকে সবার সামনে তুলে ধরেছে। তাদের এ সাফল্য গোপালগঞ্জ জেলার গণ্ডি পেরিয়ে জাতীয় অঙ্গনে ছড়িয়ে পড়েছে।
স্কুলের চেয়ারম্যান শওকত আলী বলেন, আগামী ৫ বছরের মধ্যে আমাদের স্কুল থেকে যে ক'জন শিক্ষার্থী প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেবে তারা সবাই বৃত্তি পাবে এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ৫ বছরের মধ্যে স্কুলটি বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ১০ স্কুলের মধ্যে জায়গা করে নেবে। এ স্কুলের প্রতিটি শিশুকে আমরা আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলব।

No comments

Powered by Blogger.