সীমান্তে চার বাংলাদেশি খুন

দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী, আমলা, মন্ত্রী, এমনকি শীর্ষপর্যায়ের বৈঠকে সীমান্তে গুলি না চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ভারত। কিন্তু বিএসএফ সেই প্রতিশ্রুতির কোনো তোয়াক্কাই করছে না। গত শুক্রবার রাতে ও শনিবার সকালে দিনাজপুর, মেহেরপুর ও কুড়িগ্রামের সীমান্তে বিএসএফ চারজন বাংলাদেশি নাগরিককে গুলি করে হত্যা করেছে। এর আগেও ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের হাতে বহু নিরীহ ও নিরস্ত্র মানুষ নিহত হয়েছে।


আমরা বিএসএফের এই হঠকারী ও উসকানিমূলক আচরণের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ভারত বা বিএসএফের পক্ষ থেকে যেসব অজুহাত দেখানো হয়েছে তা হাস্যকর। তাদের দাবি, চোরাচালানিরা বিএসএফের সদস্যদের ওপর হামলা চালালে তারা গুলি করতে বাধ্য হয়। নিরস্ত্র চোরাচালানিরা সশস্ত্র বিএসএফের সদস্যদের ওপর কীভাবে হামলা চালায়? এর আগে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বিএসএফ এখন থেকে লেথল (প্রাণঘাতী) গুলি ব্যবহার না করে রাবারের গুলি ব্যবহার করবে। সেই প্রতিশ্রুতিও তারা পালন করছে না।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে চোরাচালান হয় উভয় পক্ষে। কিন্তু গুলির শিকার হয় কেবল বাংলাদেশিরা। এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সীমান্তে ফেলানীরা বিএসএফের গুলিতে নিহত হলেও ফেনসিডিল ব্যবসায়ী কিংবা ওপারে জ্বালানি তেল পাচারকারীরা ঠিকই পার পেয়ে যায়। তাদের ধরতে কোনো তৎপরতা দেখা যায় না। এর কারণ কী?
আমরা চাই, সীমান্তে সব ধরনের চোরাচালান ও মানব পাচার বন্ধ হোক। সীমান্তরক্ষীরা আরও সক্রিয় হোক। কিন্তু তাই বলে গুলি করে মানুষ হত্যা চলতে পারে না। এটি আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। সীমান্তে চোরাচালান বন্ধে ভারত কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে, যৌথ টহলের কথা বলছে, তার পরও কেন গুলি করে মানুষ হত্যা করা হবে? কেউ অবৈধভাবে সীমান্তের ভেতরে গেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে চারজন নিরীহ বাংলাদেশির নিহত হওয়ার খবরের পাশে গতকাল প্রথম আলোতে আরও একটি খবর ছাপা হয়েছে, যা আমাদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করে। সম্প্রতি শিলংয়ে অনুষ্ঠিত সীমান্ত বৈঠকে বিএসএফ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ৪৬টি ঘাঁটি রয়েছে বলে দাবি করেছে এবং তার একটি তালিকাও তারা বাংলাদেশকে দিয়েছে। ভারতের নিরাপত্তার ব্যাপারে বাংলাদেশের পদক্ষেপে দেশটির সর্বোচ্চ পর্যায়ে গভীর সন্তোষ প্রকাশের পর এ ধরনের তালিকা দেওয়া একেবারেই অগ্রণযোগ্য। যখন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তখন সীমান্তে বিএসএফের উপর্যুপরি গুলি কিংবা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মনগড়া তালিকা দেওয়া নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে—সন্দেহ নেই।
সীমান্তে শান্তি বজায় রাখার স্বার্থেই বিএসএফকে সংযত হতে হবে। এবং সেটি করানোর দায়দায়িত্ব ভারত সরকারেরই। যেকোনো অজুহাতে মানুষ হত্যা করা সৎ প্রতিবেশীর কাজ হতে পারে না। বাংলাদেশের ভূখণ্ড অন্য কোনো দেশের সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না—সরকারের এই প্রত্যয় ও কার্যকর পদক্ষেপের পরও যদি ভারত এ ব্যাপারে অনাকাঙ্ক্ষিত অভিযোগ তোলে, মনে করতে হবে এর পেছনে অন্য উদ্দেশ্য আছে।

No comments

Powered by Blogger.