খেসারত ৭৮ লক্ষ কোটি টাকা! by আসিফ আহমেদ

রাকে গণতন্ত্র কায়েমের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি ব্যয় হয়েছে এক ট্রিলিয়ন ডলার বা ৬৪৯ বিলিয়ন পাউন্ড। বাংলাদেশের মুদ্রায় এর পরিমাণ ৭৮ লক্ষ কোটি টাকা! বাংলাদেশ এ পরিমাণ অর্থ দিয়ে বর্তমান আকারের অন্তত ৫০টি রাজস্ব ও উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী পি জে ক্রলি লিখেছেন, ইরাক এখন তুলনামূলক শান্ত ও স্থিতিশীল। বাগদাদে একটি গণতান্ত্রিক সরকার কাজ করছে। তবে তিনি আরেকটি


বিষয়ের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন_ আরব বসন্ত। মিসর, লিবিয়া, তিউনিসিয়া_ একের পর এক সরকার পরিবর্তন ঘটে গেল আরব বিশ্বে। ইয়েমেন ও সিরিয়ার জনগণ লড়ছে। সৌদি আরব, জর্ডান, বাহরাইন, মরক্কো প্রভৃতি দেশের শাসকরা জনগণকে শান্ত রাখার জন্য নানা ধরনের অর্থনৈতিক প্যাকেজ ঘোষণা করছে। রাজনৈতিক সংস্কারের কথাও বলছে। মিসর ও তিউনিসিয়ায় ইতিমধ্যে গণতান্ত্রিক সরকার কায়েমের জন্য সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব দেশের কোনোটিতেই গণতন্ত্র আনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ৭৮ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়নি। সাদ্দাম হোসেনের ইরাকে কি গণতন্ত্রের জন্য মানুষ জেগে উঠত না? আরব বসন্তের ঢেউ যেসব দেশে লেগেছে সেখানে শাসকরা সহজে ক্ষমতা ছাড়তে চাননি। তারা জনগণের ওপর নানাভাবে অত্যাচার চালিয়েছেন। মিছিল-সমাবেশে গুলি করা হয়েছে। এতে অনেক নারী-পুরুষের মৃত্যু ঘটেছে। কিন্তু এক ইরাকেই তো যুক্তরাষ্ট্রের সেনা অফিসার ও জওয়ান মারা গেছে প্রায় সাড়ে চার হাজার। আহতের সংখ্যা আরও বেশি। আহত অনেকে চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছে। যুদ্ধের কারণে অনেকে মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করেছে। তাদের সবার জন্য আগামীতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হবে।
লিবিয়ার গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ন্যাটোর সামরিক বাহিনী জড়িয়ে পড়েছিল। তারা নির্বিচারে বোমা হামলা চালিয়েছে এবং তাতে গাদ্দাফি বাহিনীর যেমন ক্ষতি হয়েছে, তেমনি যুদ্ধের আগুন থেকে দূরে থাকতে চেয়েছে যারা তাদের অনেকেও মৃত্যুবরণ করেছে। গণতন্ত্রের জন্য এ ধরনের মূল্য কি অপরিহার্য?
ক্রলি আরেকটি বিষয়ের প্রতিও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তার বিবেচনায়, যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক অভিযানের কারণে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে ইরানের রক্ষণশীল শাসকরা। বহু বছর ইরাক ও ইরান ছিল পরস্পরের দুশমন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যখন সাদ্দাম হোসেনকে বাগ মানাতে ব্যস্ত, তখন ইরানের শাসকরা নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার গড়ে তুলতে তৎপর হয়ে ওঠে। সৌদি আরব, তুরস্ক ও মিসর এ ধরনের অস্ত্র আয়ত্ত করার জন্য তৎপর হলে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না। এ অস্ত্র যত বিস্তৃত হবে সন্ত্রাসী শক্তির হাতে তা পড়ার শঙ্কাও তত বাড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের বরাবরের ভয়, ওসামা বিন লাদেনের মতো কারও হাতে এ অস্ত্র না পড়ে। কিন্তু এমন দানবীয় শক্তির অস্তিত্ব (ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠী) সব ধর্মেই রয়েছে। রয়েছে অনেক দেশে। দাউদ ইব্রাহিম কিংবা বাংলাদেশের ডাকাত শহীদ বা শাহাদতরাও কিন্তু এ ধরনের অস্ত্র পেতে ব্যাকুল হতে পারে। তখন তাদের পায় কে? কিন্তু মানবজাতির চরম দুর্ভাগ্য, যে যুক্তরাষ্ট্র এ ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্রের বিস্তার রোধে এত মরিয়া, তারাই এ অস্ত্রের প্রথম প্রয়োগ করে ১৯৪৫ সালে এবং এখন বিশ্বে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র রয়েছে তাদের হাতেই। তারা যদি এ অস্ত্র সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ফেলে এবং রাশিয়া ও চীনসহ অন্যান্য দেশ তাদের অনুসরণ করে তাহলে বিশ্ববাসীর সম্মিলিত চাপ সৃষ্টি হবেই। আমাদের এই উপমহাদেশেও ভারত এবং পাকিস্তানের হাতে রয়েছে এই মারণাস্ত্র, যার ব্যবহার হলে কারোরই কিন্তু নিস্তার নেই।
যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন বলেছিল সাদ্দামের হাতে এই ভয়ঙ্কর অস্ত্র রয়েছে। কিন্তু এ অভিযোগ ছিল মিথ্যা। তবে ইরাকে যুদ্ধ করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু প্রকৃতই ভয়ঙ্কর অস্ত্রের মুখোমুখি হয়েছে, যার খেসারত ৭৮ লক্ষ কোটি টাকা!

No comments

Powered by Blogger.