ডব্লিউটিও সম্মেলন শেষ-প্রতিশ্রুতি ছাড়া কিছুই পেল না বাংলাদেশ by ফখরুল ইসলাম

সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) অষ্টম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন শেষ হয়েছে। শনিবার রাতে (বাংলাদেশ সময় রাত দুইটা) ডব্লিউটিওর চেয়ারম্যান নাইজেরিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী ওলুসেগান আগাঙ্গা আর সংস্থার মহাপরিচালক প্যাসকেল লামি সমাপনী অধিবেশনে বক্তব্য দেন। যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রধান অর্থনীতির বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাণিজ্যসুবিধার বিষয়ে এই সম্মেলনেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। আশ্বাস ছাড়া তিন দিনের এই সম্মেলন


থেকে সুস্পষ্ট কিছুই পায়নি বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলো (এলডিসি)। সমাপনী অধিবেশনের পরপরই এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় আগাঙ্গা বলেন, দোহা উন্নয়ন আলোচনা শেষ করতে না পারায় বেশির ভাগ দেশের মন্ত্রীরা আক্ষেপ করলেও বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থাকে এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন তাঁরা।
সম্মেলনে বাণিজ্যসংক্রান্ত মেধাস্বত্ব আইনের (ট্রিপস) বাধ্যবাধকতা থেকে এলডিসিগুলোর অব্যাহতির সময় বাড়ানো এবং সেবা খাতে বিশেষ ছাড়ের বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে বলে জানান তিনি। এ ছাড়া আগামী দিনে বাণিজ্য আলোচনায় এলডিসির স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
তবে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী (সদ্য সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী) ফারুক খান বলেছেন, এই সম্মেলন থেকে কিছু পেয়ে থাকলে এলডিসিগুলোই পেয়েছে। ট্রিপস কার্যকরের সময় বাড়ানো আর সেবা খাতের ছাড়কে তিনি বাংলাদেশসহ এলডিসিগুলোর বড় প্রাপ্তি হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তবে বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা একে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রাপ্তি মনে করছেন না। তাঁদের মতে, ট্রিপস কার্যকরের সময় বাড়লে বাংলাদেশ লাভবান হবে। কারণ ট্রিপস কার্যকর হলে অন্যদের উদ্ভাবিত সেবা ও পণ্য উৎপাদন করতে হলে তাদের রয়্যালটি বা ফি দিতে হবে। এতে জীবন রক্ষাকারী ওষুধসহ নানা পণ্যের দাম অনেক বেড়ে যাবে।
সম্মেলনে ট্রিপস কার্যকরের সময় বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করা হলেও এটি কত দিন বাড়ানো হবে, আদৌ বাড়ানো হবে কি না, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রসঙ্গত, ওষুধ ছাড়া অন্যান্য পণ্য ও সেবায় এলডিসিগুলোকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত ছাড় আছে। আর ওষুধের ক্ষেত্রে এর মেয়াদ ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত। মেয়াদ শেষের কাছাকাছি সময়ে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
ফলে এতে কিছু অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে। অন্যদিকে সেবা খাতে প্রস্তাবিত ছাড় পেলে বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলো উন্নত দেশে দক্ষ ও আধাদক্ষ জনবল পাঠাতে পারবে। তবে কীভাবে বিষয়টি বাস্তবায়িত হবে তার কোনো নীতিমালা বা কাঠামো ঠিক হয়নি। এসব প্রক্রিয়া শেষ হতে দীর্ঘ সময় লেগে যাবে। স্বল্পোন্নত দেশগুলো আদৌ এই সুবিধা কাজে লাগাতে পারবে কি না তা নির্ভর করবে ওই নীতিমালার ওপর।
অপরদিকে বিশ্বের প্রধান অর্থনীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকসহ শতভাগ পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দেবে কি না, এবারও তার সুনির্দিষ্ট কোনো অঙ্গীকার করেনি। বাংলাদেশের সঙ্গে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে সে দেশের প্রতিনিধিদলের প্রধান বলেছেন, আলোচনা চলমান থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে ডব্লিউটিওর চেয়ারম্যান বলেন, দোহা উন্নয়ন আলোচনাই শেষ কথা নয়; কারণ, দোহার চেয়েও ডব্লিউটিও বড়। ডব্লিউটিওকে টিকিয়ে রাখতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.