সহায়তা পেলে দরিদ্ররাও ক্ষুদ্র ব্যবসা করতে সক্ষম

প্রয়োজনীয় কিছু আনুষঙ্গিক সম্পদ এবং সেগুলোকে কাজে লাগানোর জন্য দিকনির্দেশনামূলক প্রশিক্ষণ পেলে দরিদ্ররাও সফলভাবে ক্ষুদ্র ব্যবসা করতে সক্ষম। ‘উদ্যোক্তা কর্মসূচি কি দরিদ্র মানুষের জীবনের অর্থনৈতিক পরিবর্তন আনতে পারে?’ শীর্ষক গবেষণা থেকে এমন ফলাফলই দেখা গেছে। এতে বলা হয়েছে, যাদের ওপর গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে, সেই দরিদ্র মানুষগুলো এখন অনেকটাই দারিদ্র্য থেকে উত্তরণের পথে রয়েছে।


গবেষণাটির ফলাফল উপস্থাপন করতে গতকাল রোববার রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারের আয়োজন করে ইনস্টিটিউট অব মাইক্রোফিন্যান্স ও ইন্টারন্যাশনাল গ্রোথ সেন্টার (আইজিসি)।
সেমিনারের প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘শুধু সহায়তা পেলে সবাই ভালো উদ্যোক্তা হয়ে গড়ে উঠতে পারে না। এ ক্ষেত্রে দক্ষতার তারতম্য একটা বড় বিষয়। সহায়তাটা কে, কীভাবে নিচ্ছে, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
এ প্রসঙ্গে বীজের উদাহরণ দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, কোনো বীজ যদি জমিতে পড়ে তাহলে তা থেকে শস্য আসবে। কিন্তু ওই বীজ যদি পাথরে পড়ে, তাহলে কোনো কিছুই হবে না।
মসিউর রহমান আরও বলেন, ‘অনেকেই সমালোচনা করে বলেন, ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষ আরও দরিদ্র হচ্ছে। এ কথার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। আমি এমনটা মনে করি না।’
সেমিনারের বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, ‘আমি মনে করি না, অতিদরিদ্রদের ভাগ্য শুধু ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে পরিবর্তন করা যাবে। এ জন্য স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দক্ষতা অন্যান্য যেসব বিষয় আছে, সেগুলোও বিবেচনা করতে হবে।’
ইনস্টিটিউট অব মাইক্রোফিন্যান্সের চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশে গরিব মানুষের বিভিন্ন ধরনের চাহিদা থাকে। চাহিদার ভিন্নতার কারণে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হয়। এ বিষয়গুলো সঠিকভাবে মোকাবিলা করা গেলে দারিদ্র্যের হার কমবে।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার এত বেশি হওয়ার পরও কীভাবে এ থেকে মুনাফা অর্জন করা যাবে, সে বিষয়ে একটি প্রশ্ন থাকে। তবে আমি মনে করি, মূলধনের উৎপাদনশীলতা এবং নিবিড় উৎপাদনের মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ নিয়েও মুনাফা করা সম্ভব।
সেমিনারে গবেষণা উপস্থাপন করেন এর অন্যতম গবেষক, লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের অধ্যাপক রবিন বার্গেস। তিনি জানান, দেশের ৪০টি জেলার ২৫ হাজার ৬৮ ব্যক্তির ওপর জরিপ চালিয়ে গবেষণাটি করা হয়। ব্র্যাকের ‘স্পেশালি টার্গেটেড আলট্রা পুওর (এসটিইউপি)’ কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত মানুষ, একই এলাকার ব্র্যাকের কার্যক্রমের বাইরে থাকা দরিদ্র ব্যক্তি এবং সচ্ছল ব্যক্তিদের নিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছে।
ব্র্যাক তার কার্যক্রমের আওতাধীন পরিবারগুলোকে গবাদিপশু হস্তান্তর করে, যার মূল্য ছিল নয় হাজার টাকা। তা ছাড়া ১৮ মাস তাদের উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ এবং ১৮ থেকে ২৪ মাস পর ক্ষুদ্র অর্থায়নের বিভিন্ন বিষয় শেখায়।
সেমিনারে মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য দেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর, ব্র্যাক স্কুল অব ডেভেলপমেন্টের পরিচালক মেসবাহউদ্দিন হাশমী, ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের পরিচালক সাজ্জাদ জহির প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.