আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল-কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে সাত অভিযোগ

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ঢাকার মিরপুরের আলোকদী গ্রামে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়েছে। গতকাল রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাঁর বিরুদ্ধে দাখিল করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগে এসব অপরাধ উল্লেখ করা হয়েছে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত এ ট্রাইব্যুনালে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল


করেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি গোলাম আরিফ। এই অভিযোগ আমলে নেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে আদেশের জন্য ট্রাইব্যুনাল ২৮ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন।
জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ এবং অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মো. কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেওয়ার বিষয়ে আদেশের জন্যও ২৮ ডিসেম্বর দিন পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।
সকালে নিজামী, কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এবং মুজাহিদকে নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে পুরাতন হাইকোর্ট ভবনে স্থাপিত ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। বেলা ১১টার দিকে বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হয়।
শুরুতে কাদের মোল্লাকে এজলাসকক্ষে আনা হয় এবং রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি তাঁর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন।
পরে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মোহাম্মদ আলী অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কাদের মোল্লা মিরপুর ও মোহাম্মদপুরের ‘জল্লাদ’ বা ‘কসাই’ নামে পরিচিত ছিলেন। একাত্তরের ২৫ মার্চ মধ্যরাত থেকে তিনি স্থানীয় বিহারিদের সঙ্গে নিয়ে বাঙালি নিধন শুরু করেন। মিরপুরের আলোকদী গ্রামে গণহত্যার সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন। গণহত্যার দিন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার ওই গ্রামের পূর্ব দিকে নামে। আর কাদের মোল্লা গ্রামের পশ্চিম দিক থেকে রাজাকারদের নিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করেন। ওই ঘটনায় ৩৪৪ জনের বেশি প্রাণ হারান। তাঁদের মধ্যে ২১ জনের নাম, ঠিকানাসহ পরিচিতি অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
মোহাম্মদ আলী আরও বলেন, কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনা সাতটি অভিযোগের প্রতিটি ঘটনাই নৃশংস। তিনি খন্দকার আবদুর রউফ নামের এক ব্যক্তিকে মিরপুর-১০ নম্বর থেকে ধরে জল্লাদখানায় নিয়ে এবং কবি মেহেরুননিসাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেন। কেরানীগঞ্জের শহীদনগরে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমেদের বাড়িসহ দুটি গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় কাদের মোল্লার সঙ্গে নিজামী, মুজাহিদ ও কামারুজ্জামান সহায়তা করেছিলেন।
গত বছরের ২১ জুলাই কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়। একই বছরের ২ আগস্ট তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর তদন্ত সংস্থা ২৫ জনের সাক্ষ্যসহ তাঁর বিরুদ্ধে ৩৮৫ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিদের কাছে জমা দেয়।
তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেওয়ার বিষয়ে আদেশের দিন পুনর্নির্ধারণ: কাদের মোল্লার পর নিজামী, মুজাহিদ ও কামারুজ্জামানকে এজলাসকক্ষে নেওয়া হয়। এ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেওয়া হবে কি হবে না, সে বিষয়ে আদেশের দিন ধার্য ছিল গতকাল। এ তিনজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ও সংশ্লিষ্ট নথি নিরীক্ষণ শেষ হয়নি জানিয়ে ট্রাইব্যুনাল তাঁদের বিরুদ্ধে আদেশের বিষয়ে ২৮ ডিসেম্বর দিন পুনর্নির্ধারণ করেন।
সাঈদীর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সাক্ষীকে জেরা: ট্রাইব্যুনালে গতকাল জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের দ্বিতীয় সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিনকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম ও কফিলউদ্দিন চৌধুরী। সাঈদীকে এজলাসকক্ষে হাজির করার পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেরা শুরু হয়। মিজানুল ইসলাম বলেন, এই সাক্ষীর জবানবন্দি অনুসারে একাত্তরে স্থানীয় মাদ্রাসার ছাত্র ও ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্যরা স্থানীয় রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল। তিনি সাক্ষীর কাছে পাঁচজন মাদ্রাসাছাত্র ও ছাত্রসংঘের পাঁচজন সদস্যের নাম জানতে চান। জবাবে সাক্ষী বলেন, মাদ্রাসাছাত্র খলিলুর রহমান, মহসিন, মো. আবদুল হালিম, হাকিম কারি প্রমুখ রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল। ছাত্রসংঘের সদস্য রুহুল আমিন হাওলাদার, রুহুল আমিন-২, মোসলেহউদ্দিন প্রমুখ রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল।
দুপুরে এক ঘণ্টা বিরতির পর কফিলউদ্দিন চৌধুরী সাক্ষী রুহুলকে জেরা করেন। বিকেল সোয়া চারটার দিকে ট্রাইব্যুনাল আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কার্যক্রম মুলতবি করেন।
সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রথম সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা মো. মাহাবুবুল আলম হাওলাদারকে আসামিপক্ষের জেরা শেষ হয় গত বৃহস্পতিবার। সাঈদী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.