ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো উৎসব ২০১২-গণিত জয়ের উৎসব শুরু

‘প্রশ্নটা খুবই জরুরি, করতেই হবে। আমাকে মাইক্রোফোন দেন।’ মাইক্রোফোন হাতে পাওয়ার পর কুষ্টিয়া হালশা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী আতিকা রহমতুল্লাহ প্রশ্নের পরিবর্তে দাবি করে বসল, নিউটনের তৃতীয় সূত্রে ভুল আছে। নিমেষেই সব শিক্ষার্থীর চোখ তার দিকে। পরে শিক্ষকেরা সূত্রটি তাকে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেন।ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো দশম গণিত উৎসব ২০১২ আঞ্চলিক পর্বের শুরুতে গতকাল রোববার কুষ্টিয়া ও


দিনাজপুর অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা গণিত প্রতিযোগিতার পাশাপাশি এমন সব অদ্ভুত প্রশ্ন ও মজার কুইজ নিয়ে মেতে ছিল দিনভর। এবারের প্রতিযোগিতার স্লোগান ‘আমাদের প্রকৃতি আমরাই বাঁচাব’।
কুষ্টিয়া জিলা স্কুলে সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে উৎসবের সূচনা করেন জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিভা রানী পাঠক। জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন প্রথম আলো বন্ধুসভা কুষ্টিয়ার বন্ধুরা। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক রাশেদ তালুকদার এবং আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের কুষ্টিয়া শাখার ব্যবস্থাপক শফিকুজ্জামান খান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর শুরু হয় গণিত প্রতিযোগিতা। চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়া জেলার ৮৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৮৪৪ জন শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
পরে শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। শিক্ষার্থীদের মজার মজার প্রশ্নের উত্তর দেন রাশেদ তালুকদার, আবদুল মোমিন, আবদুল্লাহ আল মাসুদ ও পরীক্ষা সমন্বয়ক চিকিৎসক সৌমিত্র চক্রবর্তী। এরপর রুবি স্কিউব খেলায় মেতে ওঠে শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাদক, মুখস্থ ও মিথ্যাকে ‘না’ বলার শপথ করানো হয়।
গণিত উৎসব সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন বায়েজিদ ভূঁইয়া জুয়েল, আর সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর কুষ্টিয়া প্রতিনিধি তৌহিদী হাসান।
গণিত প্রতিযোগিতায় কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা বালিকা বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী ইফাত আমান রিনি ১০-এর মধ্যে ১০ পেয়ে সেরাদের সেরা নির্বাচিত হয়।
দিনাজপুর জিলা স্কুলে সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে উৎসব উদ্বোধন করেন দিনাজপুর সদর আসনের সাংসদ ইকবালুর রহিম। গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন দিনাজপুর জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. শাহীন আকতার এবং আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বলরাম রায়।
অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত, গণিতের গান ও গণিত জয়ের গান পরিবেশন করে স্কলার্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষার্থীরা।
সাংসদ ইকবালুর রহিম শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিতে সফলতা অর্জন করতে হলে অবশ্যই গণিতের বিভিন্ন শাখায় সফল হতে হবে।
‘এক মিনিট পর্বে’ বক্তব্য দেন প্রধান শিক্ষক মো. শাহীন আখতার, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক দিনাজপুর শাখার ব্যবস্থাপক শীষ মোহাম্মদ আবু হানিফ, প্রথম আলোর দিনাজপুর প্রতিনিধি মো. আসাদুল্লাহ সরকার ও প্রথম আলো দিনাজপুর বন্ধুসভার সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন খান।
সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয় গণিতের লিখিত পরীক্ষা। এতে অংশ নেয় দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও নীলফামারী জেলার ৯২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৮৫৯ জন খুদে গণিতবিদ।
পরীক্ষা শেষে অনুষ্ঠানমঞ্চে কবিগুরুর ‘দেবতার গ্রাস’ কবিতা অবলম্বনে কাব্যনৃত্য পরিবেশন করেন প্রথম আলো দিনাজপুর বন্ধুসভার সদস্যরা।
এরপর বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের কাউন্সিলর মাহমুদুল ইসলামের উপস্থাপনায় শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। দিনাজপুর জিলা স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র আবদুল্লাহ আল গালিবের প্রশ্ন ছিল, মানুষের দাঁত প্রথমবার পড়লে গজায়, দ্বিতীয়বার পড়লে গজায় না কেন?
দিনাজপুর কলেজিয়েট স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী আদ্রিতা হাবিব প্রশ্ন করে, শূন্যের ধারণার উৎপত্তি কোথা থেকে?
শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাব দেন দিনাজপুর সায়েন্স একাডেমির সভাপতি বিকাশ চন্দ্র রায়, সহসভাপতি জিয়াউল হক, সেতাবগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান মো. শাহাদাৎ হোসেন, গণিত শিক্ষক মো. একরামুল হক ও দিনাজপুর জিলা স্কুলের গণিত শিক্ষক মো. মনজুরুল হক।
গণিত প্রতিযোগিতায় উচ্চমাধ্যমিক গ্রুপে দিনাজপুর সরকারি মহাবিদ্যালয়ের প্রতিযোগীরা প্রাধান্য বিস্তার করে। চাম্পিয়ন গ্রুপে ছয়টিসহ মোট আটটি পুরস্কার লাভ করে তারা। এ ছাড়া প্রাথমিক, জুনিয়র ও মাধ্যমিক বিভাগে দিনাজপুর জিলা স্কুলের প্রতিযোগীদের প্রাধান্য ছিল। এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রতিটি গ্রুপ থেকে সাতটি করে পুরস্কার ছিনিয়ে নেয়।
প্রতিযোগিতা আজ রংপুর ও যশোরে: রংপুর থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, রংপুর অঞ্চলের প্রতিযোগিতা আজ সোমবার অনুষ্ঠিত হবে রংপুর জিলা স্কুলে। রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও জয়পুরহাটের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক হাজার খুদে গণিতবিদ প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে।
যশোর অফিস জানায়, যশোর জিলা স্কুল প্রাঙ্গণে উৎসব উদ্বোধন করবেন যশোরের জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাফিজুর রহমান। যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও নড়াইল জেলার এক হাজার খুদে গণিতবিদ প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে।

No comments

Powered by Blogger.