সিলেটে বাসে আগুন, এক যাত্রী নিহত

ঢাকায় বাসে অগ্নিসংযোগের পরপরই গতকাল রোববার সকালে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় দুর্বৃত্তরা একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে একজন যাত্রী পুড়ে মারা যান। অগ্নিদগ্ধ হয় আরও ১২ জন। নিহত ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ সময় প্রায় আধা ঘণ্টার মধ্যে নগরের বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রের বিবরণ অনুযায়ী, ‘হবিগঞ্জ এক্সপ্রেস’-এর যাত্রীবাহী একটি বাস হবিগঞ্জ থেকে সিলেটে


আসছিল। পথে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার বদিকোনা মসজিদের সামনে ১৫ থেকে ২০টি মোটরসাইকেলে করে এসে একদল যুবক বাসটি থামায়। তারা বাসটিতে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তেই আগুন পুরো বাসে ছড়িয়ে পড়ে। যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে বাস থেকে নামতে থাকে। এরই মধ্যে ১২ জন অগ্নিদগ্ধ হয়। মধ্যবয়সী এক যাত্রী জানালা দিয়ে নামার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন এবং পুড়ে মারা যান।
বাস থেকে নেমে আসা একটি বিমা কোম্পানির কর্মকর্তা গোলাম রব্বানী চৌধুরী প্রথম আলোকে জানান, বাসটিতে যাত্রী ছিল ৫৩ জন। বদিকোনায় বাসটি থামার সঙ্গে সঙ্গে তিনি বিস্ফোরণের শব্দ পান। এর পরই আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে দক্ষিণ সুরমা থানা ও মহানগর পুলিশের একটি দল সেখানে যায়। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। অগ্নিদগ্ধ ১২ বাসযাত্রীর মধ্যে আটজনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক আবদুল কাইয়ুম জানান, এই আটজন হলেন: বদিকোনা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন, মৌলভীবাজারের শায়েস্তা মিয়া, সিলেটের ডহর এলাকার আবদুল হাকিম, হাউজিং এস্টেট এলাকার আসকন্দর আলী, শাহি ঈদগাহ এলাকার নজমুল মিয়া, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের শিরামিশির রুহেল মিয়া, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জের আউশকান্দির আবদুল হামিদ ও বানিয়াচংয়ের হামিদা আক্তার।
দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু শ্যামা মো. ইকবাল হায়াত জানান, আগুনে পুড়ে এক বাসযাত্রীর শরীর প্রায় ছাই হয়ে গেছে। লাশ শনাক্ত করার চেষ্টা করছে পুলিশ।
দুই গ্রামের বাসিন্দাদের সংঘর্ষ: বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর যাত্রীদের উদ্ধার তৎপরতাকে কেন্দ্র করে বদিকোনা ও ধরাধরপুর গ্রামের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন। এর জের ধরে বদিকোনা, চণ্ডীপুল এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে চলাচলকারী ১৫টি যানবাহনে ঢিল ছুড়ে ভাঙচুর করা হয়। সিলেট মহানগর পুুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) আমিনুল ইসলাম বলেন, সংঘর্ষ চলাকালে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।
৪০ যানবাহন ভাঙচুর: যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনার পর প্রায় আধা ঘণ্টার মধ্যে সিলেট নগরের সোবহানীঘাট, কুমারপাড়া, শাহজালাল উপশহর, শাহজালাল সেতু, হুমায়ুন রশীদ চত্বর, সুবিদবাজার, পাঠানটুলা, মদিনা মার্কেট, আখালিয়া, মিরাবাজার, কুয়ারপাড়, লামাবাজার, শিবগঞ্জ ও টিলাগড় এলাকায় যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, অটোরিকশাসহ ৪০টি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মোটরসাইকেলে করে লাঠিসোঁটা নিয়ে একদল যুবক যানবাহন ভাঙচুর করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
পাল্টাপাল্টি অভিযোগ: বাসে অগ্নিসংযোগের আধা ঘণ্টা আগে সিলেট নগরে বিএনপির পূর্বঘোষিত টিপাইমুখ বাঁধবিরোধী মানববন্ধন চলছিল। কোর্ট পয়েন্টে সকাল ১০টায় মানববন্ধন শেষে বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিল চলাকালে দক্ষিণ সুরমার বদিকোনায় বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
গতকাল সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাসে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের জন্য বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের সংহিস রাজনীতিকে দায়ী করে। বিক্ষোভ মিছিল শেষে নগরের কোর্ট পয়েন্টে সমাবেশে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহউদ্দিন সিরাজ, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, আওয়ামী লীগের জেলা সভাপতি আবদুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান প্রমুখ।
বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে মিসবাহউদ্দিন সিরাজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘জামায়াত-বিএনপি পরিকল্পিতভাবে পরিবেশ অস্থিতিশীল করার জন্য এসব ঘটাচ্ছে। বিজয়ের মাসে এ ধরনের ঘটনা একাত্তরের ভয়াবহতাকেই মনে করিয়ে দেয়।’ এর বিরুদ্ধে জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
তবে এ ব্যাপারে বিরোধী রাজনৈতিক দলকে দোষারোপ করার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল গফ্ফার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগের নেতারা যদি আমাদেরকে দায়ী করেন, তাহলে আমরা বলব, সরকারি দলের নেতা-কর্মীরাই এই সহিংসতার সঙ্গে জড়িত।’
‘নাশকতার অপচেষ্টা’: বাসে অগ্নিসংযোগকারী ও বিচ্ছিন্ন হামলাকারীরা কারা—তা নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার অমূল্য ভূষণ বড়ুয়া ওই সব ঘটনাকে ‘নাশকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর জন্যই পরিকল্পিতভাবে এসব করা হচ্ছে। এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে তৎপরতা চলছে।’

No comments

Powered by Blogger.