সাহস থাকে তো... by আরিফ হোসেন

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা প্রার্থী হবেন, তাদের তৃণমূল থেকে মনোনয়ন নিয়ে আসতে হবে_ এমন একটি বিধান করা হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। নির্বাচন কমিশন তা বলবৎ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। তৃণমূল বলতে বোঝায় সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায় বা ওয়ার্ডের কমিটি। কাগজে-কলমে পদ্ধতিটি খুব আদর্শ তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু বাস্তবে তার প্রয়োগ সহজ নয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হলে যে দল থেকে
কেউ প্রার্থী হবে তাকে 'মৌসুমি পাখি' হলে চলবে না, কয়েক বছর দলের কাজে যুক্ত হতে হবে_ এমন বিধান করার উদ্যোগেও তেমন সাফল্য আসেনি। এ ধরনের পদ্ধতিতে সমস্যায় পড়ার কথা ধনবান ব্যক্তি এবং সদ্য বিদায়ী আমলা ও সেনা কর্মকর্তাদের। তারা যে দলে যোগ দিলে জয়ের সম্ভাবনা বেশি, সে দলের টিকিট চান। নির্বাচনী হাওয়া কোন দিকে বইছে, সেটা তাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করাই বুদ্ধিমানের কাজ। দলের আদর্শ ও কর্মসূচি তাদের কাছে একেবারেই গৌণ বিষয়। কুমিল্লার এক সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে জানি, যিনি শহীদ জিয়াউর রহমানের জন্য নিবেদিতপ্রাণ বলে দাবি করতেন এবং খালেদা জিয়ার প্রথম দফা প্রধানমন্ত্রিত্বের আমলে তার অফিসে দায়িত্ব পালন করেছেন_ তিনি পরে যোগ দিলেন আওয়ামী লীগে। এর কারণ হচ্ছে তার নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির শক্ত প্রার্থী আগে থেকেই ছিল। তার কাছে রাজনীতি মানেই এমপি-মন্ত্রী হওয়া। তাই বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় যোগ দিলেন আওয়ামী লীগে। তার পক্ষে কাজটি সহজ হয়েছে এ কারণে যে, সেখানে আওয়ামী লীগের শক্ত প্রার্থী ছিল না। তৃণমূলের সদস্য হয়ে ২-৩ বছর কাজ করে মনোনয়ন লাভ এ ধরনের প্রার্থীদের পক্ষে সম্ভব নয়। তৃণমূলকেও কলা দেখানো শক্ত প্রার্থীদের জন্য কঠিন কিছু নয়। বড় বড় দলের বড় নেতারা আগে থেকেই ঘর গোছাতে তৎপরতা দেখান_ তারা 'নিজের লোককে' ইউনিয়ন/ওয়ার্ড ও উপজেলা কমিটির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক পদে বসাতে সম্ভাব্য সবকিছু করেন। অঙ্গ সংগঠনের নেতাদেরও প্রার্থী মনোনয়নে ভোট আছে। কাজেই সেসব কমিটিতেও 'নিজের লোক' বসিয়ে দিতে কলকাঠি নাড়েন। যেখানে একাধিক 'শক্ত সম্ভাব্য প্রার্থী' থাকেন, সেখানেই জট লাগে। যেমনটি ঘটেছে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে। সোমবার সমকালের প্রথম পাতায় একটি খবরের শিরোনাম ছিল : 'চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ_ ২৫৮ কমিটি করতে ৫১৬ সম্মেলন'। সেখানে দুই গ্রুপ শক্তিশালী এবং উভয়ে প্রতিটি স্তরে পৃথক সম্মেলন আয়োজন করছে। ধরে নেওয়া যায় যে অঙ্গ সংগঠনগুলোতেও একই ধরনের সমস্যা হবে। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন যদি বলে যে তৃণমূলের মনোনয়ন পেতে হবে, তাহলে উপায়? বরিশাল অঞ্চলের এক প্রভাবশালী নেতার কথা জানি, যিনি নিজের এলাকায় পছন্দের অনেক কমিটি করে ফেলেছেন। কিন্তু দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, এসব তিনি করছেন নিজের খুশিমতো। অতএব, তাতে বৈধতা নেই। কিন্তু প্রধান দুই দলে তো এমন অনেক নেতা রয়েছেন, যারা বৈধতাকে থোরাই পরোয়া করেন। তারা নিজ নিজ এলাকায় এক একটি 'ইনস্টিটিউশন'। সাধারণত ব্যক্তি যখন সমাজের কাছে আদর্শস্থানীয় হয়ে ওঠেন, তার কাজ সর্বত্র প্রশংসিত হয় এবং তাকে অনুসরণ করার জন্য অনেক অনেক মানুষ স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসে তার ক্ষেত্রে এ শব্দটি ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের রাজনীতিকরা তা মেনে চলবেন কেন? তারা দাপট দেখিয়েই নিজেকে 'ইনস্টিটিউশন' হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তাদের কথাই আইন, তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। সাহস থাকে তো কেউ তাকে অমান্য করুক। এমন অবস্থায় গণতন্ত্র নিছকই পরিহাস। হায় তৃণমূল!

No comments

Powered by Blogger.