সন্ত্রাসে অর্থায়নের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড

ঙ্গি ও সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়নের অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) আইন-২০১১ এর খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। আইনানুযায়ী এখন থেকে ব্যাংক ছাড়াও এনজিওসহ সব ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সন্দেহজনক যে কোনো আর্থিক লেনদেন তদন্ত করতে পারবে সরকার। ওইসব প্রতিষ্ঠানও সরকারকে এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য দিতে বাধ্য থাকবে। বিদ্যমান আইনে শুধু ব্যাংকের আর্থিক লেনদেন তদন্ত করার


ক্ষমতা ছিল সরকারের। কিন্তু এ ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে আইনটি সংশোধন করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে আইনটি অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে গত তিন বছরে সরকারের সাফল্য ও ব্যর্থতাসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়
এবং মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে যেসব সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা হয়। মিথ্যা সংবাদ প্রকাশিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রেস কাউন্সিলে আপত্তি দেওয়ার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাকের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ এবং একই কাজে অর্থায়ন বন্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনুমোদন করা হয়েছে। আইনটি আগেও ছিল, কিন্তু অনেক বিষয় স্পষ্ট ছিল না। এখন আইনটিকে স্পষ্ট করে যুগোপযোগী করা হয়েছে। এ ছাড়া বৈঠকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি আইন-২০১১, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন-২০১১ ও পাটনীতি অনুমোদন দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।
সন্ত্রাসবিরোধী আইন :২০০৯ সালে সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রণয়ন করে সরকার। এ আইনে দেশের অখ তা, সংহতি, নিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার জন্য কোনো ব্যক্তিকে হত্যা, গুরুতর আঘাত, আটক বা অপহরণের উদ্দেশ্যে বা কোনো ব্যক্তির সম্পত্তির ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে বিস্ফোরক দ্রব্য, দাহ্য পদার্থ, আগ্নেয়াস্ত্র বা অন্য কোনো রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার কিংবা নিজ দখলে রাখার মাধ্যমে আতঙ্ক সৃষ্টির কাজে সম্পৃক্ততা এবং সন্ত্রাসী কাজে অর্থের লেনদেন, প্ররোচনা প্রভৃতি ধরনের অপরাধ দমনে ক্ষমতা দেওয়া হয়। কিন্তু সন্ত্রাসী কর্মকা ে অর্থ জোগানের বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু এ আইনে বলা নেই। এ কারণে আইনটি সংশোধন করা হয়েছে। ব্যাংক, বীমা, মানিচেঞ্জার, অর্থ স্থানান্তরকারী কোম্পানি, স্টক ডিলার, মার্চেন্ট ব্যাংকার, সিকিউরিটি কাস্টডিয়ান, লাভজনক সংস্থা, সমবায় সমিতিসহ বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত বিভিন্ন সংস্থা আর্থিক লেনদেন করে থাকে। বিদ্যমান আইনে শুধু ব্যাংককে আর্থিক লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা হলেও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিষয়টি নির্দিষ্ট করা নেই। সংশোধনীতে ব্যাংকসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার বিধান রাখা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন করে সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহার করা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংশোধিত আইনে কারও বিরুদ্ধে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কাজে অর্থের জোগানের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ । এ ছাড়া অপরাধের ধরন অনুযায়ী যাবজ্জীবন কারাদ বা অনূর্ধ্ব ২০ বছর এবং অনূ্যন তিন বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম কারাদ অর্থদ ের বিধান রয়েছে। বাংলাদেশের ভেতরে থেকে অন্য কোনো দেশে সন্ত্রাসী কাজ করলে তার বিচার এ আইনে করার বিধান রয়েছে। এমনকি বিদেশি রাষ্ট্র বা সংস্থার অনুরোধে ওই সন্ত্রাসীর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হবে। সংশোধিত খসড়া আইনে কোনো ব্যক্তি বা সত্তা (সংস্থা) অন্য কাউকে সন্ত্রাসী কাজে অর্থ বা সম্পত্তি ব্যবহারে প্ররোচিত করলে তাকে ওই অর্থ সরবরাহের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করার সুযোগ রাখা হয়েছে। কোনো সংস্থা এ অপরাধ করলে চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহীকে দোষী করা যাবে। কেউ বিদেশের কোনো ব্যাংককে অর্থ পাচার করে থাকলে একই ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ব্যাংক সেখান থেকে তথ্য আনতে পারবে। আবার সংশ্লিষ্ট দেশের ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে তথ্য আদান-প্রদানও করতে পারবে। সন্দেহজনক যে কোনো লেনদেনের হিসাব সরকার ৩০ দিন করে সর্বোচ্চ ৬ মাস পর্যন্ত স্থগিত রাখতে পারবে। তবে পারস্পরিক সম্মতি ছাড়া এ আইনে অভিযুক্ত কোনো বাংলাদেশি নাগরিককে অন্য রাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করা হবে না। কোনো বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে এসে সন্ত্রাসী কর্মকা ে সহায়তা দেওয়ার অপরাধ করলে তাকেও এ আইনের আওতায় আনা হবে। আবার বাংলাদেশে বসে কেউ অন্য রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘি্নত করার চেষ্টা করলে তাকেও এ আইনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। সংশোধিত আইনে অস্ত্রের সংজ্ঞা আরও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে অস্ত্র বলতে আগ্নেয়াস্ত্রকে বোঝানো হয়েছে। কিন্তু সংশোধিত আইনে ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ৪ ধারায় বর্ণিত অস্ত্রশস্ত্রসহ যে কোনো পারমাণবিক, রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্রকে এর আওতায় আনা হয়েছে। এক কথায়, যার দ্বারা জানমালের ক্ষতি করা সম্ভব, তা অস্ত্র হিসেবে চিহ্নিত হবে।
পাওয়ার অব অ্যাটর্নি আইন :এই আইনে পাওয়ার অব অ্যাটর্নির সংজ্ঞা ও আইনের অর্থবহ বাস্তবায়নের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আইনানুযায়ী স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি বা অন্য কোনো বিষয়ে বিশেষ বা সাধারণ পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তিকে তার পক্ষে কাজ করার ক্ষমতা দেওয়া যাবে। বিশেষ পাওয়ার অব অ্যাটর্নির রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক হবে এবং উক্ত পাওয়ারের মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তর, বিক্রয়, বিক্রয় চুক্তি সম্পাদন, ঋণ গ্রহণের বিপরীতে বন্ধকি দলিল সম্পাদন ও পণ্যমূল্যের বিনিময়ে ক্ষমতা অর্পণ করা যাবে। সম্পদ ব্যবস্থাপনা, মামলা পরিচালনা, জমির রেকর্ডপত্র সংশোধন, জমির সীমানা নির্ধারণ, খাজনা প্রদান, নামজারি ও রক্ষণাবেক্ষণ, পরিসেবা গ্রহণ বা প্রদান এবং নৈমিত্তিক আর্থিক লেনদেনসহ এমন কোনো কাজ যা পাওয়ার অব অ্যাটর্নিদাতা দৈনন্দিন কাজ হিসেবে সম্পাদন করেন, তা সাধারণ পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে ক্ষমতা দেওয়া যাবে। তবে শর্ত থাকে যে, পাওয়ার অব অ্যাটর্নির উদ্দেশ্যে বা শর্ত ব্যাহত হয় বা কোনো পক্ষ ক্ষতির সম্মুখীন হয় এমন পরিস্থিতিতে পাওয়ার অব অ্যাটর্নিদাতা বা গ্রহীতা ৩০ দিনের মধ্যে নোটিশ দিয়ে পাওয়ার প্রত্যাহার করতে পারবেন। পাওয়ার অব অ্যাটর্নি প্রবর্তনের পর তিন মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এ সময় পার হলে তা অকার্যকর হয়ে যাবে। বিশেষ পাওয়ার অব অ্যাটর্নির জন্য একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকবে। প্রত্যেক পাওয়ার অব অ্যাটর্নিতে অবশ্যই পাওয়ার অব অ্যাটর্নিদাতার উদ্দেশ্য এবং পাওয়ার অব অ্যাটর্নির গ্রহীতার দায়িত্ব, ক্ষমতা ও কার্যাবলির বিবরণ থাকতে হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন : এই আইনানুযায়ী দুর্যোগ-পরবর্তী সরকারের পদক্ষেপ বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির অবহেলার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তাকে শাস্তির আওতায় আনার বিধান রাখা হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে আইনটিতে।
পাটনীতি : এ নীতি অনুযায়ী উন্নত বীজ সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার জন্য চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, রিবনার পদ্বতি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা, পাট পচানোর জন্য ডোবা খননের দিকে নজর দেওয়া, সাময়িক ঋণের ব্যবস্থা করা ও পাট ধরে রাখতে গ্রাম পর্যায়ে গুদাম সৃষ্টি করার কথা বলা হয়েছে।
এ ছাড়া আগে থেকেই পাটের নূ্যনতম মূল্য নির্ধারণ করা, নির্ধারিত মূল্য যেন কৃষকরা পায় সেদিকে নজর রাখা, পাটকলগুলোর নিজস্ব কেন্দ্রের মাধ্যমে চাষিদের কাছ থেকে পাট কেনার কথা বলা হয়েছে এ নীতিতে।

No comments

Powered by Blogger.