নিঝুম দ্বীপ-হরিণের সূতিকাগার হলে ক্ষতি কী?

বাস্তুব্যবস্থায় একটি সদস্যের অনুপস্থিতি প্রকৃতিতে কী ধরনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি করতে পারে, হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ কেবল সেটারই উৎকৃষ্ট উদাহরণ নয়। বনজসম্পদ ও জীববৈচিত্র্য নিয়ে আমাদের পরিকল্পনাহীনতারও নিকৃষ্ট নজির। বস্তুত ৪০ হাজার চিত্রা হরিণের নিরাপত্তা না থাকার যে খবর সোমবারের সমকালে ছাপা হয়েছে, তা নতুন নয়। এও জানা কথা, ওই দ্বীপের গরান বনে ছেড়ে দেওয়া হরিণের চারটি যুগল মাত্র তিন দশকে ৪০ হাজারে পরিণত


হওয়াতেই এই 'মধুর সমস্যা'র উদ্ভব। সমকালের প্রতিবেদনসূত্রে জানা যাচ্ছে, খাদ্য ও আবাসন সংকট, মিঠা পানির উৎসের অভাবে প্রাণীটি ক্রমেই অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে। এমন খাদ্য সংকট অস্বাভাবিক হতে পারে না। ছোট একটি দ্বীপে বিপুলসংখ্যক তৃণভোজী প্রাণীর খাবার ও পানীয়ের জোগান নিশ্চিত হতে পারে না। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে দ্বীপটির অন্যান্য উদ্ভিদের ওপর। এত বিপুল হরিণের নাগালের মধ্যে থাকা প্রায় সব ধরনের গাছপালা এবং ঘাসের স্বাভাবিক বৃদ্ধি অনেকটা অসম্ভব। আমরা দেখেছি, খাবারের খোঁজে বিভিন্ন সময় জঙ্গলের হরিণ লোকালয়েও চলে আসে। সরকার নিঝুম দ্বীপের হরিণ রক্ষায় ইতিমধ্যেই নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। কথা হচ্ছে, হরিণের সংখ্যা সীমিত রাখতে না পারলে যে কোনো দাওয়াই-ই কাজে আসবে না, তা নিশ্চিত। প্রশ্ন হচ্ছে, সেটা কীভাবে সম্ভব। অস্বীকার করা যাবে না ঘূর্ণিঝড় কিংবা জলোচ্ছ্বাসের মতো 'প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে' নিঝুম দ্বীপের হরিণ সংখ্যা খানিকটা নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু অবলা প্রাণীটির এমন করুণ মৃত্যু কারও কাম্য হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ বিশ্বের কোথাও কোথাও অবশ্য হরিণ শিকারের অনুমতি দিয়ে সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়। বাংলাদেশে কি সেটা সম্ভব? বয়স ও ঋতুভেদে সেসব দেশে 'আনুপাতিক শিকার' করা হয়। বাংলাদেশের বরং হরিণ সংরক্ষণ করতে গিয়ে উজাড় হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। সেদিক থেকে আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে, নিঝুম দ্বীপকে হরিণের সূতিকাগার হিসেবে গড়ে তোলা যেতে পারে। সেখানে জন্মানো হরিণ সুন্দরবনসহ অন্যান্য অভয়ারণ্যে ছেড়ে দেওয়া যায়। তাতে করে একদিকে যেমন খাবারের সংকটে ভোগা বাঘ আর লোকালয়ে হানা দেবে না, অন্যদিকে পর্যটনমূল্যও বাড়বে। বড় কথা, বাঁচবে হরিণ, আর
বেঘোরে প্রাণ দিতে হবে না।

No comments

Powered by Blogger.