হুবহু-সরকারের সফলতা যদি দুরবিন যন্ত্রের সাহায্যে হাতড়াতে হয় তাহলে তো মুশকিল

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আকবর আলি খান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টাও। সম্প্রতি মহাজোট সরকারের আরো একটি বছর পূর্তি ও রাষ্ট্রের চলমান বছরের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্লেষণমূলক কথা বলেছেন আমাদের সঙ্গে_ মহাজোট সরকারের বিদায়ী বছর কেমন গেল বলে আপনি মনে করেন? সরকার কি জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করেছে? মহাজোট সরকারের বিদায়ী বছর মোটেই ভালো যায়নি।


তবে এটিকে এককথায় খারাপ বলা যাবে না। কিছু ক্ষেত্রে সরকারের সফলতা আছে। কিন্তু সরকারের সেই সফলতা যদি দুরবিন যন্ত্রের সাহায্যে হাতড়াতে হয় তাহলে তো মুশকিল। এ বছর সরকার সংবিধান সংশোধন করেছে। সেটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) ভাগ করা ঠিক হয়নি। এতে জটিলতা বাড়ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের তেমন গতি নেই। অন্যদিকে অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো নয়। দিন দিন মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে। ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য কমে গেছে। বিদেশি বিনিয়োগ নেই বললেই চলে। অন্যদিকে গুপ্তহত্যা বেড়েছে। পুঁজিবাজারের লাখ লাখ ব্যবসায়ী পথে বসেছে। পুঁজিবাদের কাছে রাজনীতি জিম্মি হওয়ায় সাধারণ মানুষের কান্না রাষ্ট্রের কাছে পেঁৗছায় না। রাজনীতিতে জবাবদিহিতার চর্চা না থাকায় দিন দিন শ্রেণীবৈষম্য বাড়ছে। দেশের রাজনীতিও এখন ধনীকশ্রেণীর হাতে জিম্মি হয়ে পড়ায় অর্থনীতিতে সংকট দেখা দিয়েছে। সরকার জনগণের মতকে প্রাধান্য দিয়ে ডিসিসি বিভক্তির সিদ্ধান্ত নিলে বিরোধী দল আন্দোলন করার সুযোগ পেত না।
কূটনৈতিক দিক দিয়েও কি বর্তমান সরকার ব্যর্থ? ভারত তো কথা দিয়েছিল যৌথ নদী সমীক্ষার পর টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ করবে। কিন্তু সে কথা তো রাখেনি...
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বেশি আলোচিত কূটনৈতিক বিষয় ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফর। এই সফর নিয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্ন মন্তব্য করছেন। তবে হাসিনা-মনমোহন বৈঠক পুরোপুরি ব্যর্থ এটি বলার সুযোগ এখনো আসেনি। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে জনগণের মাঝে যে আশার সঞ্চার করা হয়েছিল তা সঠিক হয়নি। চুক্তির প্রাপ্যতা নিয়েও বেশি করে প্রত্যাশা দেখানো হয়েছিল, যা হয়তো হতাশার সৃষ্টি করেছে। তবে সে আশা পুরোটা পূরণ না হওয়ায় অনেকে হতাশ। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার সমস্যাগুলো অত্যন্ত জটিল। এক বৈঠকেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে সরকার আশাবাদ ব্যক্ত করেছিল। আসলে জটিল সমস্যার সমাধান এত সহজে সম্ভব নয়। জটিল সমস্যাগুলোর সমাধান নিয়ে ভবিষ্যতেও আমাদের আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। তবে এ ব্যাপারে অতিরিক্ত আবেগের বশবর্তী হয়ে প্রত্যাশা করা ঠিক হবে না। ভারতও তার স্বার্থ দেখবে, আবার আমাদেরও ভাবতে হবে নিজেদের স্বার্থ নিয়ে। ব্যর্থতা বললে মনে করতে হবে বিষয়টি শেষ হয়ে গেছে। তবে আমি মনে করি শেষ হয়নি। এখনো আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি। যৌথ সমীক্ষা ছাড়াই ভারত টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ করবে না বলে কথা দিয়েছিল। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হয়নি। এ বিষয়ে বাংলাদেশকে আরো সতর্ক থাকতে হবে। টিপাইমুখ বাঁধের ফলে বাংলাদেশ যে ক্ষতির মধ্যে পড়বে, তা বিশ্ববাসীকে জানাতে হবে।

সরকার তো তত্ত্বাবাধয়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনও এগিয়ে আসছে। বিএনপি বলছে, তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেবে না। এর সমাধান কিভাবে করা সম্ভব?
এককথায় বলতে গেলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে সরকার রাজনৈতিক সমস্যা আরো ঘনীভূত করেছে। এখন এর শান্তিপূর্ণ সমাধান সরকারকেই বের করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক বিষয়ে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল একমত না হলে আগামী নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং তা গ্রহণযোগ্য হবে না। এখনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে। তাই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এড়াতে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলকে খোলা মন নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা প্রয়োজন।

নির্বাচন কমিশন নিয়োগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি বৈঠক শুরু করেছেন। এটিকে আপনি কিভাবে দেখছেন? এতে কি বিবদমান সমস্যার সমাধান হবে?
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ইতিমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছে তারা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে যাবে না। তাহলে তো সমস্যা সমাধানের কোনো লক্ষণই দেখছি না। সমঝোতা দরকার প্রধান দুই দলের মধ্যে। এ নিয়ে রাষ্ট্রপতি কী করতে পারবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে উদ্যোগটি শুভ। বিএনপি যদি এই সংলাপে অংশ নিয়ে কোনো মতামত দেয় সেটি হবে ইতিবাচক। তবে সমস্যার সমাধান হবে কি না তা বলা যায় না।

সাক্ষাৎকার গ্রহণে : সফেদ সিরাজ

No comments

Powered by Blogger.