কাসপারভ ক্লাব-কচিকাঁচাদের দাবার স্কুল


ফেডারেশনে চলছে দ্বিতীয় বিভাগ দাবা লিগ। বাবা খেলছেন বাগেরহাট চেস ক্লাবের হয়ে। ছেলে আবদুল্লাহ আল সাইফ চ্যাম্পিয়ন দল বেস্ট এয়ারে। বড় মেয়ে ফারজানা হোসাইন (অ্যানি) বাংলাদেশ মহিলা দাবা সমিতিতে, ছোট মেয়ে ফারদিনা হোসাইন (এরিনা) কাসপারভ চেস ক্লাবে। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোকাদ্দেস হোসাইনের পরিবারটাই যেন দাবাময়! ফারদিনার বয়স আট বছর। পড়ছে বনশ্রী ফয়জুর রহমান আইডিয়াল ইনস্টিটিউটের প্রথম


শ্রেণীতে। ফেডারেশনের দাবার কক্ষটা যেন তাদের বাড়ির ড্রয়িংরুম। খেলা শেষ। হেরে গেছে। কিন্তু হারের জন্য এতটুকু দুঃখ নেই তার মধ্যে। তিড়িংবিড়িং করে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে। একবার বড় বোনের বোর্ডের পাশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে, আবার অন্য কারও বোর্ডের পাশে। কাসপারভ চেস ক্লাবের হয়ে এবারই প্রথম খেলল ফারদিনা। কাসপারভ কে জানো? প্রশ্নটাই তার কাছে চরম বিস্ময়ের, উত্তর দেবে কী! সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন গ্যারি কাসপারভের নামটা ফারদিনা জানে না। তবে রুশ ওই সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন নাকি এই ক্লাবটির নাম জানেন।
বাংলাদেশে এখনো সেভাবে কোনো চেস একাডেমি গড়ে ওঠেনি। গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোরশেদ সিক্স সিজনস নামে একটা একাডেমি করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। কাসপারভ চেস ক্লাবের টুকটাক প্রশিক্ষণ খুদে দাবাড়ুদের জন্য তাই বড় একটা প্রাপ্তিই। এই ক্লাবেই বিকশিত হচ্ছে আবদুল্লাহ আল সাইফ, একরামুল হক সিয়ামদের মতো খুদে প্রতিভারা।
কাসপারভ চেস ক্লাবের পথচলা শুরু ২০০৭ সালে, নারায়ণগঞ্জে। কিন্তু এখনো কোনো স্থায়ী স্থাপনা নেই ক্লাবটির। শহরের যেকোনো একটা স্কুলের শ্রেণীকক্ষে ফাঁকা সময়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় দাবাড়ুদের। এ ছাড়া প্রতি শুক্রবার ফেডারেশনে ঘণ্টা দুয়েক চলে দাবার প্রশিক্ষণ। আন্তর্জাতিক মাস্টার আবু সুফিয়ান ও আরবিটার আবু তাহের শেখান খুদে দাবাড়ুদের।
নারায়ণগঞ্জের বিবি মরিয়ম বালিকা বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী নুসরাত জাহান (নাফিসা) এবার দ্বিতীয় বিভাগ দাবায় খেলল কাসপারভ চেস ক্লাবের হয়ে। আন্তস্কুলে ২০০৯ সালের চ্যাম্পিয়ন নুসরাত ছাড়াও এই চেস ক্লাবের ছাত্রী তানজিনা আক্তার (তানি)। ফিদের গাইড বই থেকে প্রাথমিক ধারণা নেওয়া এসব মেয়ে ভালোই করছে দাবায়। যদিও চেস ক্লাবে নিয়মিত প্রশিক্ষণ হচ্ছে না বলে একটু দুঃখ করল তানজিনা, ‘সপ্তাহে মাত্র এক দিন এখানে দাবা শেখানো হয়। কিন্তু সময়টা আরও বেশি হওয়া উচিত।’ ফেডারেশন কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান মল্লিক এই ক্লাবেরও কর্মকর্তা। তিনিও মানছেন প্রশিক্ষণের সময়টা কম, ‘আমরা সপ্তাহে আরও দু-এক দিন বেশি প্রশিক্ষণ দিতে চাই। কিন্তু বেশির ভাগ স্কুলের ছেলেমেয়েদের এখন পরীক্ষা চলছে বলে চাইলেও সময় বের করে অনেকে আসতে পারে না। তবে আমরা ঢাকায় একটা ভালো জায়গা খুঁজছি। সেখানে নিয়মিত প্রশিক্ষণ চালাতে পারব।’

No comments

Powered by Blogger.