শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমপিদের কোটাবাজি!

ম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা সংশোধন করে এমপিদের সন্তান বা পছন্দের প্রার্থীদের জন্য সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২ শতাংশ কোটা রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খবরটি চরম হতাশার। পৃথিবীর সব গণতান্ত্রিক দেশে জনপ্রতিনিদের নির্বাচিত করা হয় মানুষের সেবা করার জন্য। কিন্তু আমাদের দেশে জনপ্রতিনিধিরা মাঝেমধ্যেই তাঁদের কাজকর্ম দিয়ে বুঝিয়ে দেন, তাঁদের নির্বাচিত করা হয়েছে দেশের মানুষের সেবা নেওয়ার জন্য।


এই গরিব দেশের মানুষের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পরে এমপিরা যে সুযোগ-সুবিধা পান, তা অতুলনীয়। মাসিক সম্মানীর পাশাপাশি তাঁরা বাড়ি পান, করমুক্ত গাড়ি পান, চিকিৎসাসেবা পান, সরকারি টেলিফোন পান, প্রায় বিনা মূল্যে রেল ও বিমানে যাতায়াত সুবিধা পান; এভাবে তালিকা করতে গেলে এই স্বল্পপরিসরে তা কুলাবে না।
এত পাওয়ার পরও তাঁদের চাহিদার শেষ নেই। এই শেষ না থাকার সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছে স্কুলেও নিজেদের জন্য কোটার ব্যবস্থা করা।
সংবিধান এ দেশে সব মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করেছে। আর শিক্ষা হলো এমন একটি মৌলিক অধিকার, যেখানে প্রতিটি শিশুর অধিকার সমুন্নত রাখতে হবে। কিন্তু ২ শতাংশ কোটার মাধ্যমে আমাদের এমপিরা দেশের ২ শতাংশ প্রকৃত মেধাবীকে উন্নত শিক্ষাপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করবেন। এতে দেশ ভবিষ্যতে প্রতিবছর ২ শতাংশ করে কম মেধাবী মানুষ পাবে। সুদূরপ্রসারী এই ক্ষতিটি সাধিত হচ্ছে এমন সব মানুষের দ্বারা, যাঁরা দেশের কল্যাণের কথা বলে আমাদের কাছ থেকে ভোট নিয়েছেন। তাঁরা ভোট নিয়েছেন দেশের আইন ও শাসনব্যবস্থাকে সংহত করতে। কিন্তু এখন আরো অপ্রয়োজনীয় অনেক কাজের মতোই স্কুলের ছাত্রছাত্রী 'পছন্দ করা'র কাজটিও তাঁরা স্বেচ্ছায় তাঁদের কাঁধে তুলে নিচ্ছেন।
আমাদের দেশে জনসংখ্যার তুলনায় ভালোমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক কম। ফলে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ভর্তি নিয়ে অনেক ধরনের দুর্নীতি হয় বলে অভিযোগ আছে। ডোনেশন ও অন্যান্য পদ্ধতিতে কোনো কোনো স্কুলে ভর্তি করাতে কয়েক লাখ টাকার প্রয়োজন হয় বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এখন এমপিদের জন্য যদি প্রতিটি স্কুলে ২ শতাংশ কোটা রাখা হয়, তাহলে সেটার ব্যবহার যে কেমন হবে, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকে। ঢাকার তিন হাজার ছাত্রবিশিষ্ট একটি ভালো স্কুলে যদি এমপির পছন্দমতো ৬০ জন ছাত্র ভর্তি করা যায়, তাহলে সেই পছন্দের পেছনে অনেক কিছু থাকবে বলে জনমনে প্রশ্ন দেখা দেবে। এতে দুর্নীতির অভিযোগ ও জনশ্রুতি বাড়বে, ভর্তি হতে ব্যর্থ হওয়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবক এবং সাধারণ মানুষের কাছে সরকারের জনপ্রিয়তা ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।
আমরা সরকারের এ উদ্যোগের প্রতিবাদ জানাই। আমরা মনে করি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো ধরনের কোটা থাকাটা সাধারণ জনগণের জন্য অপমানজনক। শুধু এমপি কোটা নয়, সব ধরনের কোটা ব্যবস্থা বাদ দিয়ে এই দেশ তার সব মেধাবী সন্তানের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করে দেবে, সরকারের কাছে আমরা এটাই প্রত্যাশা করি।

No comments

Powered by Blogger.