পবিত্র কোরআনের আলো-বদরে মুসলমান বাহিনীর অন্তরে দৃঢ়তা জাগিয়ে তুলে উজ্জীবিত করা হয়েছিল

০. ওয়া মা জাআ'লাহুল্লা-হু ইল্লা বুশ্রা ওয়া লিতাত্বমায়িন্না বিহী ক্বুলূবুকুম; ওয়া মান্নাসরু ইল্লা মিন ই'নদিল্লাহি; ইন্নাল্লা-হা আ'যীযুন হাকীম। ১১. ইয্ ইউগাশ্শীকুমুন নুুআ-ছা আমানাতাম্ মিনহু ওয়া ইউনায্যিলু আলাইকুম্ মিনাচ্ছামা-য়ি মা-আল্ লিইউত্বাহ্হিরাকুম বিহী ওয়া ইউয্হিবা আ'নকুম রিজ্যাশ্ শাইত্বা-নি ওয়ালিইয়ার্বিত্বা আ'লা- ক্বুলূবিকুম ওয়া ইউছাবি্বতা বিহিল আক্বদা-ম। ১২. ইয্ ইঊহী রাব্বুকা ইলাল্ মালা-য়িকাতি আন্নী মাআ'কুম


ফাছাবি্বতুল্লাযীনা আ-মানূ; ছাউলক্বী ফী ক্বুলূবিল্লাযীনা কাফারুর্ রু'বা ফাদ্বরিবূ ফাওক্বাল আ'না-কি্ব ওয়াদ্ব্রিবূ মিনহুম কুল্লা বানা-ন। ১৩. যা-লিকা বিআন্নাহুম শা-ক্কুল্লা-হা ওয়া রাছূলাহূ; ওয়া মান ইউশা-কি্বকি্বল্লা-হা ওয়া রাছূলাহূ ফাইন্নাল্লা-হা শাদীদুল ই'ক্বা-ব।
[সুরা : আল-আনফাল, আয়াত : ১০-১৩]

অনুবাদ : ১০. এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য সুসংবাদ ছিল, আর এটা এ কারণে যে তোমরা অন্তরে সান্ত্বনা লাভ কর। আর প্রকৃত সাহায্য কেবল আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে। নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রবল ক্ষমতাধর ও প্রজ্ঞাবান।
১১. স্মরণ করো, যখন তিনি তোমাদের ভয়-ভীতি দূর করার জন্য তোমাদের তন্দ্রায় আচ্ছন্ন করে দিলেন এবং আকাশ থেকে পর্যাপ্ত বৃষ্টি বর্ষণ করলেন। এই বৃষ্টির পানির মাধ্যমে তোমাদের পাক-সাফ করা হলো এবং তোমাদের থেকে শয়তানের কলুষ-কালিমা দূর করে দেওয়া হলো। এ সবই করা হলো তোমাদের অন্তরে দৃঢ়তা এনে দেওয়ার জন্য এবং তোমরা যাতে শক্ত অবস্থানে দাঁড়াতে পার সে জন্য।
১২. (হে নবী!) স্মরণ করুন, যখন আপনার প্রতিপালক ফেরেশতাদের ওহির মাধ্যমে নির্দেশ পাঠালেন যে আমি তোমাদের সঙ্গে আছি। সুতরাং তোমরা মুমেনদের দৃঢ়চিত্তে দাঁড়ানোর সাহস দাও। আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করব। অতঃপর তোমরা তাদের ঘাড়ের ওপর আঘাত করো এবং আঙুলের জোড়াগুলোতে আঘাত করো।
১৩. এটা এই কারণে যে তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরোধিতায় লিপ্ত রয়েছে। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরোধিতায় লিপ্ত থাকে, আল্লাহ তো তাদের কঠিন শাস্তি দেবেনই।

ব্যাখ্যা : ৯ ও ১০ নম্বর আয়াতে বদরের যুদ্ধে ফেরেশতাদের মাধ্যমে মুসলমানদের সাহায্য করার প্রসঙ্গ বর্ণনা করা হয়েছে। ফেরেশতাদের মাধ্যমে সাহায্য করার বিষয়টি প্রতীকী এবং আধ্যা@ি@@@ক। ফেরেশতাদের মাধ্যমে কোনো রকম বস্তুগত সাহায্য করা আল্লাহর প্রকৃতি নয়। তা ছাড়া ফেরেশতাদের নিজস্ব কোনো শক্তি নেই যে তারা মানুষের কাজে ব্যক্তিগত সাহায্য করবে। অপরদিকে সাহায্য তো আল্লাহ তায়ালা সরাসরিও করতে পারতেন। কিন্তু সেটাও আল্লাহর প্রকৃতি নয়। এখানে মুসলমানদের জন্য সুখবর ও সান্ত্বনার বার্তা পাঠিয়ে তাদের মনোবল বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ আয়াতের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে যে যেকোনো কাজের অনুকূল পরিস্থিতি ও উপকরণাদি আল্লাহরই সৃষ্টি। সুতরাং চূড়ান্ত অর্থে ভরসা আল্লাহর ওপরই করা উচিত।
১১ নম্বর আয়াত ও এর পরবর্তী কয়েকটি আয়াতে বদর যুদ্ধের সময় মুসলমানদের শক্তিস্বল্পতা ও প্রতিকূল অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ প্রকৃতির আনুকূল্য ও গায়েবি প্রণোদনার মাধ্যমে যে সহায়ক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিলেন, এর কিছু বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। বদরের যুদ্ধে কোরাইশদের বিপুল সৈন্য ও অস্ত্রবলের সামনে মুসলমানদের একটি ক্ষুদ্র সৈন্যদলের মাধ্যমে মোকাবিলা করার ব্যাপারটা ঘাবড়ে যাওয়ার মতোই ছিল। এ অবস্থায় আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্য তন্দ্রাচ্ছন্নতা বা সুখনিদ্রার ব্যবস্থা করাসহ প্রবল বারি বর্ষণের মাধ্যমে রণাঙ্গনের পরিবেশ তাদের অনুকূলে এনে দেন এবং ফেরেশতাদের মাধ্যমে তাদের সাহস জুগিয়ে মনোবল বহুগুণ বাড়িয়ে দেন। বদরের রণাঙ্গনে মুসলমানদের শিবিরে পানি সমস্যা দেখা দিয়েছিল এবং মরু প্রান্তরের ধূলিও সমস্যা সৃষ্টি করছিল, প্রবল বৃষ্টি বর্ষণে তাদের সেই সমস্যা মিটে গিয়েছিল এবং আরামদায়ক ঘুমের পর উঠে ফেরেশতার মাধ্যমে সাহায্যের বাণী লাভ করে তারা বিপুল শক্তিতে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছিল।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী


No comments

Powered by Blogger.